অলঙ্করণ: শৌভিক দেবনাথ।
রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরওয়ানা জারির আবেদনের সময় দাউদ ইব্রাহিমের উদাহরণ দিয়েছিলেন সিবিআইয়ের আইনজীবী। এ বার রাজীবের আগাম জামিনের বিরোধিতা করতে গিয়ে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদম্বরমের গ্রেফতারির প্রসঙ্গ উঠল আলিপুর জেলা আদালতে।
শনিবার ওই মামলার সওয়াল-জবাবের সময় সিবিআইয়ের আইনজীবী কালীচরণ মিশ্র বলেন, “আর্থিক তছরূপের মামলায় পি চিদম্বরমেরও আগাম জামিনের আবেদন খারিজ হয়ে গিয়েছিল। এটাও সেই আর্থিক তছরুপের ঘটনা। রাজীবকে যেন আগাম জামিন না দেওয়া হয়। তিনি আইনভঙ্গকারী। তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। পলাতক। এক জন আইপিএস যদি এ ভাবে পলাতক থাকেন, তা হলে সমাজের কাছে কী বার্তা যাবে?”
এক দিকে যখন সিবিআই এবং রাজীব কুমারের আইনজীবীরা আলিপুর জেলা আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক সুজয় সেনগুপ্তের সামনে নিজেদের মতো যুক্তি খাড়া করতে ব্যস্ত, তখন সিবিআই রাজীবকে ধরতে এ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গার তল্লাশি চালিয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুজালি এলাকার একটি নার্সিংহোমেও হানা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। পাশাপাশি, উত্তরপ্রদেশে রাজীব কুমারের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছেন তাঁরা। রাজীবের কয়েক জন নিরাপত্তারক্ষীকেও ডাকা হয় সিজিও কমপ্লেক্সে। সিবিআই সূত্রে খবর, রাজীবের সন্ধান পেতে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
আরও পড়ুন: ‘সাংসদ-বিধায়করাই নন, মোটা টাকা মাসোহারা দিতে হত পুলিশকেও’, সুদীপ্তের বয়ানই হাতিয়ার সিবিআইয়ের
শুক্রবার আলিপুর আদালতে আগাম জামিনের আবেদন জানান রাজীব কুমারের আইনজীবী। শনিবার বেলা ১২টা নাগাদ শুরু হয় শুনানি। রাজীবের তরফে গোপাল হালদার, দেবাশিস রায়— দুই আইনজীবী শুনানিতে অংশ নেন। সিবিআইয়ের তরফে ছিলেন কালীচরণ মিশ্র। শুনানি শুরু হতেই কেস ডায়েরির অস্পষ্ট ফোটোকপি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন বিচারক সুজয় সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘আজ যদি শুনানি না হয়, তা হলে পুজোর পর। না হলে বেলা দু’টোর মধ্যে স্পষ্ট কেস ডায়েরি নিয়ে আসতে হবে।’’
আরও পড়ুন: ‘আপনার ছেলের কোনও ক্ষতি করব না’, মায়ের আর্তিতে আশ্বাস বাবুলের
সাময়িক বিরতির পর শুরু হয় সওয়াল-জবাব। প্রথমে রাজীবের আইনজীবী দেবাশিস রায় আগাম জামিন চেয়ে বিচারকের কাছে আবেদন করেন। বিচারককে তিনি বলেন, “ইতিমধ্যে সাপ্লিমেন্টারি-সহ মোট সাতটি চার্জশিট হয়ে গিয়েছে। একটিতেও রাজীব কুমারের নাম নেই। চিটফান্ড-কাণ্ডে সিবিআই নোটিস পেয়ে তার জবাবও দিয়েছেন। তাঁকে কখন পাওয়া যাবে সে কথাও জানিয়েছেন। শিলংয়ে প্রায় ৪০ ঘণ্টা জেরাও করা হয়েছে। এখন হেফাজতে নেওয়ার কী দরকার।” শ্যামল সেন কমিশন গঠনের বিষয়টিও উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “কমিশন অনেকেরই টাকা ফেরত দিয়েছে। ঘটনা সামনে আসার পর রাজ্য পুলিশের তরফে যথাযথ ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। সিবিআই গ্রেফতার করার কথা বলছে, কিন্তু রাজীব কুমারের বিরুদ্ধ কোনও নথি আদলতে দাখিল করতে পারছে না।”
প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে বিভিন্ন মামলার রেফারেন্স উল্লেখ করে দেবাশিসবাবু আগাম জামিনের পক্ষে সওয়াল করেন। এর পর বিচারক তাঁর কাছে জানতে চান, ‘‘তা হলে কতগুলি নোটিস পাঠানো হয়েছে আমাকে স্পষ্ট করে জানান।’’
কিছু ক্ষণের বিরতির পর, সিবিআইয়ের আইনজীবী কালীচরণ মিশ্র প্রায় এক ঘণ্টা ধরে বিরোধিতা করেন। তিনি আগাম জামিনের বিরোধিতা করতে গিয়ে একের পর এক মামলার রেফারেন্স তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “গত কয়েক দিন ধরেই আইপিএস রাজীব কুমারকে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বাড়িতে নেই। মোবাইলে পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি ই-মেলও কাজ করছে না। এ ভাবে পলাতক থাকলে সমাজের কাছে কী বার্তা যাবে। রাজ্য বলতে পারছে না তিনি কোথায়? ২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত রাজীব কুমার বিধানগরের সিপি ছিলেন। ওই সময় সারদার বাড়বাড়ন্ত। তিনি কী ভাবে নিজের দায় এড়াতে পারেন?”
তিনি সওয়াল করতে গিয়ে বলেন, ‘‘যে সব পুলিশ অফিসারকে জেরা করা হয়েছিল, তাঁরাও জানিয়েছেন রাজীব কুমারের নির্দেশেই তাঁরা কাজ করেছেন। রাজ্যের বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)-এ ছিলেন রাজীব কুমার। সেই নোটিফিকেশনে বলা হয়েছিল, রাজীব কুমার প্রতি দিন তদন্তের তদারকি করবেন। তিনি সারদা তদন্তে কিছু জানেন না, তা হতে পারে না। প্রতি বার নোটিস দিয়ে তাঁকে সহযোগিতা করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি সারদা তদন্তে কোনও সহযোগিতা করেননি। তাঁকে হেফাজতে নিয়ে জেরার অত্যন্ত জরুরি। আগাম জামিন হলে তদন্তে প্রভাব পড়তে পারে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy