—ফাইল চিত্র।
অর্থ লগ্নি সংস্থা সারদার আর্থিক কেলেঙ্কারির মামলায় কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের গ্রেফতারি এড়াতে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন সক্রিয় হয়েছিলেন, সিবিআই চলতি মাসেই সেই প্রশ্ন তুলেছিল কলকাতা হাইকোর্টে। রাজীবকে তাদের কাছে হাজির করানোর জন্য সেই মমতারই অধীন নবান্নের কাছে সহায়তা চাইল ওই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা!
রাজ্যের মুখ্যসচিব মলয় দে, স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ডিজি বীরেন্দ্রকে রবিবার চিঠি লিখে সিবিআই জানিয়েছে, রাজীবকে খুঁজে বার করতে এবং তাদের সামনে হাজির করাতে সাহায্য করুক নবান্ন।
তবে রাজীবের হাজিরায় নবান্নের সাহায্য কতটা মিলবে, তা নিয়ে সন্দিহান সিবিআই। সে-ক্ষেত্রে কি কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্য নেওয়া হবে? বাংলা ছবির প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতার কায়দায় মাঝরাস্তা বা গোপন ডেরা থেকে তুলে এনে গ্রেফতার করা হবে রাজীবকে?
আরও পড়ুন: রাজীবের ঘাড়ে সিবিআইয়ের নিশ্বাস! এড়াতে কি পারবেন গ্রেফতারি?
নবান্নে সিবিআইয়ের আধিকারিকেরা। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
রাজীবের ঘনিষ্ঠ এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘অতটা সোজা হবে না। রাজীব যেখানেই থাকুন না কেন, তাঁর সঙ্গে সাদা পোশাকে পুলিশের পাহারা রয়েছে।’’ সিবিআই তা করতে চাইলে সংঘাত অনিবার্য হয়ে পড়বে।
তার আগে এ দিন সিবিআইয়ের চার চিঠি নিয়ে নবান্নে বিস্তর নাটক হয়! বিকেলে দুই সিবিআই অফিসার চারটি চিঠি নিয়ে হাজির হন নবান্নের গেটে। ভিতর থেকে পুলিশ প্রথমে জানায়, এ দিন তো ছুটি। সব দফতর বন্ধ। পরে অবশ্য সিবিআইয়ের দুই প্রতিনিধিকে ভিতরে ডেকে নেওয়া হয়। গেটের ভিতরে দাঁড়িয়ে পুলিশকর্মীরা জানান, মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিবের চিঠি এ দিন কোনও ভাবেই নেওয়া সম্ভব নয়। পুলিশ কন্ট্রোল রুম ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। তাই ডিজি-কে লেখা দু’টি চিঠি তাঁরা নিতে পারবেন। সেই অনুযায়ী এ দিন ডিজি-কে লেখা দু’টি চিঠি দিয়ে তার প্রাপ্তি স্বীকার করিয়ে নেওয়া হয়। মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিবের চিঠি আজ, সোমবার নিয়ে আসতে বলা হয়েছে।
কেন এই তৎপরতা?
সিবিআইয়ের এক শীর্ষ কর্তা জানান, রাজ্যের গোয়েন্দা-প্রধান রাজীব আগাম জামিনের জন্য মঙ্গলবার নিম্ন আদালতে আবেদন করতে চলেছেন। এ দিনই তা লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে সিবিআই-কে। ‘‘আমরা তো ওঁকে সাক্ষী হিসেবে ডাকছিলাম। এখন তো রাজীব নিজেই স্বীকার করে নিচ্ছেন, তিনি অভিযুক্ত। তা না-হলে তো কেউ আগাম জামিনের জন্য আদালতে আবেদন করবেন না,’’ বলেন ওই শীর্ষ কর্তা।
কিন্তু রাজীবকে হাজির করানোর জন্য রাজ্যের সাহায্য চাওয়া হল কেন?
ওই সিবিআই-কর্তা জানান, রাজ্যকে তদন্তে সহযোগিতা করার পরামর্শ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। ৩ ফেব্রুয়ারি রাজীবের বাড়িতে গিয়ে স্থানীয় পুলিশের হাতে সিবিআই অফিসারদের বিস্তর অপমানিত হতে হয়েছিল। ২৪ জানুয়ারি শ্রীকান্তকে গ্রেফতার করতে গিয়েও পুলিশের হাতে হয়রান হওয়ার অভিযোগ এনেছে সিবিআই। এর পুনরাবৃত্তি চায় না তারা। সিবিআই জানাচ্ছে, রাজীবকে হাজির করতে রাজ্য সরকার সহযোগিতা না-করলে সেটা সর্বোচ্চ আদালতে জানানো হবে।
সাক্ষী হিসেবে ডেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল মদন মিত্রকে। রাজীবের ক্ষেত্রে তারা তেমনটাই চাইছে বলে সিবিআইয়ের খবর। শনিবার রাজীব হাজিরা না-দেওয়ায় এ দিন চিঠি পাঠানো হয়েছে নবান্নে। ওই পুলিশকর্তার ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, রাজীবের উপরে ‘চাপ’ রাখতেই এ ভাবে ছুটে বেড়াচ্ছে সিবিআই।
রাজ্য পুলিশের ডিজি-কে লেখা সিবিআইয়ের দু’টি চিঠির একটিতে রাজীবকে হাজির করানোর আর্জি জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, আজ, সোমবার বেলা ২টোয় তিনি যাতে সল্টলেকে সিবিআইয়ের দফতরে হাজির হন, তার ব্যবস্থা করা হোক। অন্য চিঠিতে জানতে চাওয়া হয়েছে, রাজীব কবে, কেন ছুটি নিয়েছেন? রাজীব কি জানিয়েছেন, তিনি কলকাতা তথা রাজ্যে থাকবেন, নাকি ভিন্ রাজ্যে যাবেন? ভিন্ রাজ্যে গেলে কোন রাজ্যে যাবেন? এক সিবিআই-কর্তা জানান, ওই স্তরের পদের কোনও আইপিএস অফিসার ছুটিতে গেলে তাঁর ছুটির সময়কার অবস্থান আগাম জানাতে হয়। তিনি ছুটি নিয়ে ভিন্ রাজ্যে আছেন বলে রাজীব ই-মেলে সিবিআই-কে জানিয়েছেন। তার সত্যতা যাচাই করতে চায় সিবিআই।
শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্ট রাজীবকে ‘গ্রেফতার না-করার’ রক্ষাকবচ তুলে নেওয়ার পরে তড়িঘড়ি শনিবারেই তাঁকে সল্টলেকে হাজিরা দিতে বলা হয়। তখনই রাজীব ই-মেলে জানান, তিনি ছুটিতে আছেন। ২৫ সেপ্টেম্বর কাজে যোগ দেওয়ার পরে যোগাযোগ করবেন।
সিবিআই-কর্তারা মুখে যতই বলুন, রাজীব সংযোগকারী একটি বিন্দুমাত্র, শুক্রবারের পর থেকে তাঁদের তৎপরতা অন্য ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছে রাজীবের ঘনিষ্ঠ মহল। তাদের আশঙ্কা, সিবিআই যে-কোনও মুহূর্তে গ্রেফতার করতে পারে রাজীবকে। সুপ্রিম কোর্ট ও কলকাতা হাইকোর্টে রাজীবের রক্ষাকবচ প্রত্যাহারের পরে মঙ্গলবার নিম্ন আদালত আগাম জামিনের আবেদন না-ও শুনতে পারে। সে-ক্ষেত্রে পরের দিন জেলা বিচারকের এজলাসে আর্জি জানাতে হবে। জেলা বিচারক শুনানি চাইলে সিবিআই-কে ডাকবেন। শুনানি শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত বিচারক নতুন করে রাজীবকে রক্ষাকবচ দিতে পারেন, এটাই আশা ঘনিষ্ঠদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy