ফাইল চিত্র।
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানো সত্ত্বেও সোমবার সিবিআইয়ের সামনে যাননি। এসএসকেএম হাসপাতালে ‘ডাক্তার দেখিয়ে’ ফিরে গিয়েছেন বোলপুরে। গরু পাচার মামলায় সেই অনুব্রত মণ্ডলকে আজ, বুধবার ফের তলব করল সিবিআই। সেই সঙ্গে ইঙ্গিত, এ বারও বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা হাজির না হলে, কড়া আইনি পদক্ষেপের পথে হাঁটতে পারে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি।
সিবিআই সূত্রের দাবি, মঙ্গলবার সকালে ই-মেল করে বুধবার বেলা ১১টা নাগাদ কলকাতার নিজাম প্যালেসে হাজির হওয়ার জন্য নোটিস পাঠানো হয়েছে অনুব্রতকে। তাঁর বোলপুরের বাড়িতেও নোটিসের প্রতিলিপি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এর পরেও আজ, বুধবার তিনি হাজির না হলে, কড়া আইনি পদক্ষেপ করা হবে বলে ওই সূত্রের দাবি।
সিবিআই এমন ‘হুঁশিয়ারি’ দেওয়ার পরেও অনুব্রত শেষমেশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজির হবেন কি না, তা মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত তাঁর তরফে নিশ্চিত ভাবে জানানো হয়নি। এ দিন তাঁর এক আইনজীবী আসেন এবং বাড়ির পিছনের দরজা দিয়ে অনুব্রতের বাড়িতে ঢোকেন। আলোচনা শেষে বেরিয়ে যান ওই আইনজীবী। তার কিছুক্ষণ আগেই সিবিআইয়ের এক প্রতিনিধি অনুব্রত ওরফে কেষ্টর বাড়িতে নোটিসের প্রতিলিপি পৌঁছে দিয়েছিলেন।
সোমবারই অনুব্রতকে তলব করা হয়েছিল। তিনি রবিবার কলকাতায় এলেও সোমবার তদন্তকারীদের মুখোমুখি না হয়ে এসএসকেএম হাসপাতালে শারীরিক পরীক্ষার জন্য গিয়েছিলেন। এসএসকেএম হাসপাতালে সাত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের টিম অনুব্রতের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে জানিয়ে দেয় যে, কয়েকটি বয়সজনিত ‘ক্রনিক’ অসুখ রয়েছে। কিন্তু তা নিয়মিত ওষুধ খেলে নিয়ন্ত্রণে থাকবে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন নেই।
এর পরেই অনুব্রত তাঁর চিনার পার্কের ফ্ল্যাটে ফিরে আসেন। সেখানে মিনিট দশেক থাকার পরেই বোলপুরের উদ্দেশে রওনা হয়ে যান। সিবিআইয়ের তরফে সোমবার বিকেলেই চিনার পার্কের ফ্ল্যাটে অনুব্রতকে নোটিস ধরানোর জন্য অফিসার পাঠানো হয়েছিল। তবে তদন্তকারী সংস্থাটির সেই প্রতিনিধি পৌঁছনোর আগেই সেখান থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন কেষ্ট।
গত দেড় বছরে অনুব্রতকে মোট ১০ বার তলব করা হলেও, তিনি একবারই ঘণ্টা কয়েকের জন্য তদন্তকারীদের মুখোমুখি হয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদ এড়াতে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হলেও আদালত তাঁর আর্জি মানেনি। অভিযোগ, প্রশ্নের মুখে পড়া ঠেকাতেই এর আগে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এ বারে ওই হাসপাতাল ভর্তি নেয়নি।
অনেকে মনে করছেন, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মামলায় কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি বিবেক চৌধুরী এসএসকেএম হাসপাতাল সম্পর্কে যে পর্যবেক্ষণ (রাজনৈতিক নেতাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল) করেছেন, তার পরেই জিজ্ঞাসাবাদের ঠিক আগে নেতাদের ভর্তির ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছেন এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ।
এসএসকেএমের চিকিৎসকেরা ফিসচুলা এবং অন্যান্য কয়েকটি ক্রনিক রোগের কথা বললেও, এ দিন বোলপুর মহকুমা হাসপাতালের ডাক্তার ফের অনুব্রতকে পরীক্ষা করেন। পরে অনুব্রতের আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা বলেন, ‘‘অনুব্রত মণ্ডল অসুস্থ। চিকিৎসকেরা বিশ্রামের পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি সুস্থ হয়েই জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হবেন।’’ যদিও মঙ্গলবার রাতে বোলপুরের সেই ডাক্তারও তাঁকে দিয়ে ‘জোর করে বিশ্রামের কথা লিখিয়ে নেওয়ার’ দাবি করায় অনুব্রতের পক্ষে পরিস্থিতি জটিল হওয়ার সম্ভাবনা।
প্রসঙ্গত, স্কুলে নিয়োগ-দুর্নীতির পাশাপাশি কয়লা এবং গরু পাচার মামলার তদন্ত এ বার গতি পেতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহলের অনেকে। সূত্রের খবর, সম্প্রতি সিবিআইয়ের অতিরিক্ত ডিরেক্টর অজয় ভাটনাগর পূর্বাঞ্চলীয় অফিসে এসে বিভিন্ন মামলায় তদন্তকারী অফিসারদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তার মধ্যে গরু এবং কয়লা পাচার মামলা বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।
অনুব্রতকে ফের সিবিআইয়ের তলব প্রসঙ্গে এ দিন তমলুকে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘একটা লোক আট বার ডাকার পরেও যায়নি। তাঁকে ব্যাগ গোছানোর সময় দেওয়া উচিত হয়নি। এক কাপড়ে তুলে নিয়ে যাওয়া উচিত।” এ বার কেষ্টকে ভর্তি করার ক্ষেত্রে এসএসকেএমের চিকিৎসকেরা ভয় পেয়েছেন বলেও তাঁর দাবি।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বাংলার পরিচিত প্রবাদ টেনে বলেন, “মঙ্গলে ঊষা, বুধে পা, কেষ্ট এ বার জেলে যা। আমার মনে হয় না ওঁর জেলে ঢুকতে এর চেয়ে বেশি দেরি হবে।” এর মধ্যে আবার এই জল্পনাও ছড়িয়েছে যে, সিবিআইয়ের হাত থেকে বাঁচতে অনুব্রত নাকি বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন। সেই সম্ভাবনা প্রসঙ্গে সুকান্তের অবশ্য প্রতিক্রিয়া, “যাঁর দেহরক্ষী মাগুর মাছ কাটতে কাটতে কয়েকশো কোটি টাকার মালিক হয়ে যেতে পারেন, আমাদের দলে সে রকম নেতার প্রয়োজন নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy