এখানেই থাকেন অভিষেকের বন্দ্যোপাধ্যায় (বাঁ দিকে)। অভিষেকের স্ত্রী রুজিরা (ডান দিকে)।
এ বার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঠিকানায় পৌঁছে গেল সিবিআই।
বেশ কিছু দিন ধরেই কখনও ‘ভাতিজা’, কখনও ‘ভাইপো’ বলে তাঁকে আক্রমণের নিশানা করে গিয়েছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-সহ বিজেপি-র তাবড় নেতারা। রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে কয়লা পাচারের টাকার হদিস পেতে অভিষেকের বাড়িতে গিয়ে স্ত্রী রুজিরা নারুলার নামে সিবিআইয়ের নোটিস জারিকে (ঘটনাচক্রে যা দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর রাজ্য সফরের প্রাক্কালে) তাই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
নোটিস পেয়ে এ দিনই টুইট করেন অভিষেক — ‘এ ভাবে আমাদের ভয় দেখাতে চাইলে ভুল হবে। আমাদের মাথা নত করা যাবে না।’ এ দিনই রুজিরার বোন মেনকা গম্ভীরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য নোটিস দিয়েছে সিবিআই। দু’জনকেই ভারতীয় কার্যবিধির ১৬০ ধারায় সাক্ষী হিসেবে দু’জনকে ডাকা হয়েছে বলে সিবিআই জানিয়েছে।
সিবিআইয়ের দাবি, কয়লা পাচারের টাকা যে যে অ্যাকাউন্টে গিয়েছে, তার মধ্যে একটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে নাকি রুজিরার নাম জড়িত। এ ছাড়াও গরু ও কয়লা পাচারে মূল অভিযুক্ত বলে যে বিনয় মিশ্রের দিকে সিবিআই আঙুল তুলেছে, তিনি অভিষেক-ঘনিষ্ঠ বলে তদন্তকারীদের দাবি। টাকা তাঁর মাধ্যমেই অভিষেক পত্নীর অ্যাকাউন্টে গিয়েছে বলে দাবি সিবিআইয়ের। তাইল্যান্ডের একটি ব্যাঙ্কের একটি নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টের কথা বলে রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে একই অভিযোগ করেছিলেন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যাওয়া শুভেন্দু অধিকারী। এ দিন আসানসোলের সভা থেকে শুভেন্দু বলেন, ‘‘আট থেকে আশি সকলেই জানেন, লালার (অনুপ মাঝি) টাকা কারা নিত। সেই টাকা যে তোলাবাজ ভাইপোর বাড়িতে গিয়েছে।’’ তৃণমূলের অভিযোগ, নির্বাচনের আগে এ ভাবে চাপ বাড়াতে চায় বিজেপি। বিজেপি বলেছে, সিবিআইয়ের কাজ সিবিআই করছে।
সিবিআই সূত্রের খবর, রবিবার সকালে তাঁদের এক মহিলা অফিসার-সহ ছয় সদস্যের দল হরিশ মুখার্জি স্ট্রিটে অভিষেকের বাড়িতে পৌঁছন। বাড়ির বাইরে থাকা কলকাতা পুলিশের কর্মীরা জানিয়ে দেন, রুজিরা বাড়িতে নেই। এর পরে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েই উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন কতর্ব্যরত অফিসারেরা। সেখানে উপস্থিত নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে নিজেদের মোবাইল নম্বর দিয়ে দেন। যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি সেই নম্বরে রুজিরাকে যোগাযোগ করতে বলা হয়।
সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের কথায়, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী মামলায় জড়িত সন্দেহে কোনও মহিলাকে তাঁর সময় অনুযায়ী, তাঁরই বাড়িতে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। সিবিআইয়ের দাবি, কয়লা কাণ্ডে খুব প্রয়োজনীয় কিছু তথ্যের জন্য রুজিরাকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন। তাঁকে দ্রুত যোগাযোগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ সিবিআইয়ের অফিসারেরা সাংসদের ১৮৮ এ, হরিশ মুখার্জি স্ট্রিটে আসেন। সিবিআইয়ের নোটিস অনুযায়ী, বিকেল তিনটের সময়ে তাঁরা রুজিরাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, সেই সময়ে রুজিরা বাড়িতে ছিলেন না বলে পুলিশের একটি সূত্রের দাবি। অন্য দিকে সিবিআইয়ের দাবি, তাঁদের নোটিস পেয়ে রুজিরা বা তাঁর আইনজীবী যোগাযোগ করবেন বলে আশা করা হয়েছিল। তখন কথা বলে দু’তরফের সুবিধা মতো একটি সময় ও স্থান বেছে নিয়ে রুজিরার সামনে বসতে চেয়েছিলেন তাঁরা।
সিবিআইয়ের অভিযোগ, রাত পর্যন্ত রুজিরার তরফে কোনও ফোন তাঁরা পাননি। তদন্তকারীদের কথায়, আজ সোমবার ফের ওই নোটিস জারি করা হতে পারে। পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, সিবিআই কর্তারা চলে যাওয়ার পরে সাংসদের বাড়ি থেকে একটি কালো গাড়ি বেরোতে দেখা যায়। জানলায় কালো কাচ থাকায় গাড়িতে কারা রয়েছেন তা বোঝা যায়নি।
সিবিআইয়ের দাবি, কয়লা কাণ্ডে শাসক দলের নেতা বিনয় মিশ্র, অনুপ মাঝি ওরফে লালা সহ একাধিক ব্যবসায়ীর টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে বলে আয়কর ও তাদের তদন্তে উঠে এসেছে। তাদের আরও দাবি, কিছু তথ্য প্রমাণ অনুযায়ী, বিদেশে রুজিরা নারুলা নামে এক জনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কয়লা কাণ্ডের লভ্যাংশের ওই টাকা জমা পড়েছে এবং এই রুজিরা অভিষেকের স্ত্রী। এর আগে ব্যাঙ্কক থেকে কলকাতায় ফেরার সময়ে তাঁর সঙ্গে নির্ধারিত পরিমাণের বেশি সোনা থাকার অভিযোগ উঠেছিল। সেই বিষয়টি এখন আদালতে বিচারাধীন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy