—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
নার্কো ও পলিগ্রাফ পরীক্ষায় সম্মতি না দেওয়ায় আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডল ভবিষ্যতে আইনি লড়াইয়ে বিপাকে পড়তে পারেন বলে মনে করছেন আইনজীবীদের একাংশ। ওই অসম্মতিকে তদন্তে অসহযোগিতার হাতিয়ার করে তাঁদের জামিনের বিরোধিতা এবং বিচার প্রক্রিয়া জোরদার করায় সিবিআই সক্রিয় হবে বলে মনে করছেন আইনজীবীদের একাংশ। আর জি করের চিকিৎসক পড়ুয়ার খুন ও ধর্ষণের মামলায় এখন জেল হেফাজতে রয়েছেন দু’জনেই।
পাশাপাশি সিবিআইয়ের কর্তারাও তদন্তে অসহযোগিতার বিষয়টি শীর্ষ আদালতে ‘স্টেটাস রিপোর্টে’ উল্লেখ করবেন বলে জানিয়েছেন। এবং বিচার প্রক্রিয়ায় তাঁরা ওই অসম্মতিকে হাতিয়ার করবেন বলেও দাবি করছেন সিবিআইয়ের কর্তারা।
সিবিআই সূত্রে দাবি, সম্প্রতি সন্দীপ ও অভিজিতের মোবাইল ফোনের ফরেন্সিক রিপোর্ট হাতে আসার পরে তথ্যপ্রমাণ লোপাট এবং তথ্যপ্রমাণ অদল বদলের পাশাপাশি তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্তযোগ্য নানা গুরুত্বপূর্ণ সূত্র উঠে এসেছে। তা ছাড়া সন্দীপ ও অভিজিতের ফোন ঘেঁটে আর জি করের চিকিৎসক পড়ুয়ার খুন, ধর্ষণে আরও কয়েক জন জড়িত থাকতে পারে বলেও সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের সন্দেহ। সিবিআই কর্তাদের কথায়, “এই ধরনের কিছু সূত্র হাতে আসার পরেই সন্দীপ ও অভিজিতের নার্কো এবং পলিগ্রাফ পরীক্ষার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়। সন্দীপের অবশ্য আগেও এক দফা পলিগ্রাফ পরীক্ষা করানো হয়। কিন্তু নতুন সূত্র উঠে আসায় তা বিশদে যাচাইয়ের জন্য ফের ওই দু’জনের নার্কো এবং পলিগ্রাফ টেস্টের আবেদন করা হয়।”
তবে ভারতীয় সংবিধানের ২০(৩) ধারায় স্পষ্ট বিধান রয়েছে, অভিযুক্তদের সম্মতি ছাড়া ওই ধরনের কোনও পরীক্ষা তদন্তকারী সংস্থা করতে পারবে না। গত শুক্রবার শিয়ালদহ অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে ওই আবেদনের শুনানি হয়। এর পরে দু’জনকে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সন্দীপ এবং অভিজিৎ দু’জনেই বিচারকের সামনে ওই পরীক্ষায় অসম্মতি প্রকাশ করেন।
ওই দু’জনের অসম্মতির ক্ষেত্রে বিচারক তাঁর নির্দেশনামার পর্যবেক্ষণে জানিয়েছেন, “গুরুত্বপূর্ণ তদন্তের ক্ষেত্রে এই ধরনের পরীক্ষা তদন্তকারী সংস্থার সামনে সঠিক তথ্য নিয়ে আসার সহজ উপায়। কিন্তু সাংবিধানিক বিধি অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সম্মতি ছাড়া ওই পরীক্ষা করানো তদন্তকারী সংস্থার পক্ষে সম্ভব নয়। অতএব পরিস্থিতি সিবিআইয়ের তদন্তের বিপক্ষে গিয়েছে।”
চিকিৎসক পড়ুয়ার খুন, ধর্ষণে তথ্যপ্রমাণ লোপাট, তথ্যপ্রমাণ অদল বদলে সন্দীপ এবং অভিজিৎ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িত বলেও সিবিআই কর্তাদের দাবি। তা ছাড়া, ওই দু’জন গোয়েন্দা হেফাজতে সত্য আড়াল করে তদন্ত বিপথে চালিত করার অপচেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে বলেও সিবিআই দাবি করেছে। তদন্তকারীদের কথায়, পলিগ্রাফ ও নার্কো পরীক্ষায় সন্দীপ, অভিজিতের অসম্মতি প্রকাশ তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগটিই আদালতে প্রতিষ্ঠিত করেছে। শুনানির সময়ে এর বিশদে ব্যাখ্যা দেওয়ার অতএব আর দরকার হবে না।
কলকাতা হাই কোর্টের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “শুধু জামিনের বিরোধিতায় নয়, অসম্মতির বিষয়টি বিচার প্রক্রিয়ার সময়েও ওই দু’জনকে দোষী সাব্যস্ত করায় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে সিবিআই।” আলিপুর দেওয়ানি আদালতের প্রাক্তন মুখ্য সরকারি আইনজীবী রাধাকান্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, “সে ক্ষেত্রে ওই দু’জনের জামিন না-ও মঞ্জুর হতে পারে। ওই দু’জনকে হেফাজতে রেখে বিচার প্রক্রিয়া চালানোর আবেদনও করতে পারে সিবিআই। কোর্ট যাতে মান্যতা দিতে পারে।” এই বিষয়ে সন্দীপ ও অভিজিতের আইনজীবীরা মন্তব্য করেননি। অন্য দিকে, আর জি কর হাসপাতালের দুর্নীতির মামলায় অ্যানাস্থেশিয়া বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর তথা ট্রমা কেয়ার সেন্টারের নোডাল অফিসার সুজাতা ঘোষকে বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই। জেল হেফাজতে থাকা হাউস স্টাফ আশিস পাণ্ডে হাসপাতালে না এসেও দীর্ঘদিন ধরে কি ভাবে তাঁর হাজিরা খাতায় সই করে গিয়েছেন, তা নিয়েই সেই বিষয়ে সুজাতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy