Advertisement
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
R G Kar Hospital Incident

মৃতার গবেষণা ‘জোর করে’ দিয়ে দেওয়া হয় অন্য এক জনকে! তার থেকেই কি গন্ডগোল, তদন্তে সিবিআই

তদন্তভার পাওয়ার পরে থেকে মৃতার বাবা-মায়ের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলেছেন সিবিআই আধিকারিকেরা। সেখানে বার বার জানতে চাওয়া হয়েছে, মৃতার পরিবার কাউকে সন্দেহ করে কি না।

Representative Image

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৬:৪৯
Share: Save:

ফুসফুসের সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের উপরে গবেষণা, যা প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ ‘এথিক্স কমিটি’তে পাশ হয়েছিল। যা সংক্ষিপ্ত আকারে লিখে স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়েও পাঠানো হয়ে গিয়েছিল, কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অনুমতির আশায়। ছাড়পত্রও চলে এসেছিল বলে সূত্রের খবর। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিহত চিকিৎসক-পড়ুয়ার এই শেষ না হওয়া গবেষণাপত্র তদন্তের অন্যতম বিষয় হয়ে উঠেছে বলে সিবিআই সূত্রের দাবি। এই রহস্যের তল পেতে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।

তদন্তভার পাওয়ার পরে থেকে মৃতার বাবা-মায়ের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলেছেন সিবিআই আধিকারিকেরা। সেখানে বার বার জানতে চাওয়া হয়েছে, মৃতার পরিবার কাউকে সন্দেহ করে কি না। সূত্রের খবর, সিবিআই আধিকারিকদের কাছে পরিবারের তরফে এই গবেষণাপত্রের কথা জানানো হয়। যা জোর করে তাঁদের মেয়ের থেকে নিয়ে অন্য কাউকে দিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন মৃতার মা-বাবা।

মৃতার বাবা এ বিষয়ে বলেন, ‘‘অনেকেই জানতে চেয়েছেন, সন্দেহজনক কিছু দেখেছি কি না। মেয়ে কিছু বলত কি না। একটাই বিষয় আমাদের ভাবাচ্ছে। মেয়ে বলেছিল, ওর লেখা থিসিস পেপার অন্য এক জনকে দিয়ে দেন ভিপি (ভিজ়িটিং প্রফেসর)। মেয়েকে তিনি হঠাৎ করে বলেন, তুই অন্য একটা বানিয়ে নিস। প্রথমে কিছু মনে হয়নি। আমার মেয়ে পড়াশোনায় যেমন ভাল ছিল, তাতে নতুন পেপার করা ওর জন্য কোনও ব্যাপার নয়। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, কী উদ্দেশ্যে এটা করা হতে পারে?তবে কি কারও নিশানায় পড়ে গিয়েছিল মেয়ে?’’

শনিবার মৃতার দুই সহপাঠী এবং এক বিশেষ বন্ধুর সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে জানার চেষ্টা করা হয়। আর জি করেরই স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া এক তরুণী বলেন, ‘‘সিবিআই-ও এ নিয়ে জানতে চেয়েছে। বলেছি, গোটা ব্যাপারটার মধ্যেই অনেক অসঙ্গতি দেখেছি। এর মধ্যে অন্যতম এই গবেষণাপত্র।’’ তিনি জানান, স্নাতকোত্তর স্তরে তিন বছরের পড়াশোনার মধ্যেই তাঁদের একটি গবেষণাপত্র লিখতে হয়। সেটা তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষার আগে জমা দিতে হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হতে গেলে এই গবেষণাপত্র আবশ্যিক। যে হেতু গবেষণার ব্যাপ্তি এ ক্ষেত্রে অন্যতম মানদণ্ড, তাই প্রথম বর্ষ থেকেই কাজ শুরু করে দিতে হয়।

মৃতার আর এক সহপাঠী বলেন, ‘‘কোন বিষয়ে গবেষণা করতে চাইছি, সেই বিষয়ে ভেবে নিয়ে লিখিত আকারে জানাতে হয়। যে বিভাগের সঙ্গে যুক্ত রয়েছি, তারই কোনও অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর বা প্রফেসর বিষয়টি শোনেন। ভিজিটিং প্রফেসর বা ভিপি হিসেবে এরপর তাঁর অধীনেই গবেষণাপত্র লিখতে হয়। তার আগে বিষয় লিখে হাসপাতালের এথিক্স কমিটির কাছে পাঠাতে হয়। কারণ, রোগীর উপরে কোন ধরনের পরীক্ষা করতে হবে, এই কাজে সেটা অনেকগুলি নীতির উপর নির্ভর করে। কী ধরনের ওষুধ ব্যবহার করে গবেষণার কাজ চালানো হবে, সেটাও জানাতে হয় এথিক্স কমিটিকে। ওই কমিটিতে বিষয়টি পাশ হয়ে গেলে গবেষণাপত্রের সারমর্ম সংক্ষিপ্ত আকারে লিখে স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে হয়। সেখান থেকে ছাড়পত্র চলে এলে শুরু হয় বিস্তারিত মূল কাজ।’’ মৃতা এই সমস্ত স্তরই পেরিয়ে গিয়েছিলেন বলে সূত্রের খবর।

এর পরে কী হয়? মৃতার সহপাঠী এবং এক বন্ধুর দাবি, ‘‘দ্বিতীয় বর্ষের মাঝামাঝি সময় হয়ে গিয়েছে বলে কাজ অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিল ওর গবেষণাপত্রের। এর মধ্যে হঠাৎ ওকে (মৃতাকে) ডেকে বলা হয়, তুই অন্য একটা বানিয়ে নিস। এই বিষয়টা ভাল, ওকে (মৃতা যে বর্ষের পড়ুয়া ছিলেন, সেই বর্ষেরই আর এক জনের নাম করে) দিয়ে দিচ্ছি। স্বাভাবিক ভাবেই ভেঙে পড়েছিল ও (মৃতা)।’’ তাঁর দাবি, ‘‘সিনিয়রদের অনেক গবেষণাপত্র নিয়ে একটু অদলবদল করে কাজ চালিয়ে দিতেও দেখা গিয়েছে। কিন্তু এক জনের নিজস্ব ভাবনা অন্য এক জনকে দিয়ে দেওয়ার এই ব্যাপার আগে দেখিনি।’’

কেন এমন করা হয়েছিল? কার নির্দেশে? এর পর কি কোনও পদক্ষেপ করেছিলেন তরুণী চিকিৎসক? সেই কারণেই কি এই পরিণতি? উত্তর খুঁজছে সিবিআই। তবে মৃতার এক বিশেষ বন্ধুর মন্তব্য, ‘‘প্রভাবশালী এক জনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ একটি ছেলে নানা কলকাঠি নেড়েছে। নানা দিক দিয়ে প্রভাব খাটিয়ে চাপ তৈরির চেষ্টা করেছে। এর প্রতিবাদ করার খেসারত দিতে হল কি না, সেটা তদন্ত করে বার করা হোক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

R G Kar Medical College and Hospital CBI
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE