—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
রহস্য লাশকাটা ঘরেও! অভিযোগ, সেখানেও রাতের পর রাত চলত কুকীর্তি। আর জি কর কাণ্ডে ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার ওই মেডিক্যাল কলেজের মর্গে অবাধ যাতায়াত ছিল। সিবিআই তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার নন, ওই হাসপাতালে বছরের পর বছর দুর্নীতির যে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিল, তাদের চাঁইদের কয়েক জনেরও রাত বাড়লে নিত্য আনাগোনা ছিল মর্গে। কিন্তু রাতে তো ময়না তদন্ত হয় না। তা হলে মর্গ খোলা থাকত কী ভাবে? আর এক জন সিভিক ভলান্টিয়ার এবং হাসপাতালের কিছু কর্মীর কী কাজ থাকত সেখানে?
তরুণী চিকিৎসক-পড়ুয়ার খুন ও ধর্ষণের তদন্তে নেমে এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছে সিবিআই। তদন্তকারীদের সূত্রের দাবি, ধৃতের মোবাইল থেকে এমন কিছু ভিডিয়ো উদ্ধার হয়েছে, যা ওই মেডিক্যাল কলেজের মর্গের ভিতরের। যেখানে মরদেহের সঙ্গে ধৃতের সহবাসের ছবি মিলেছে। সন্দেহ এখানেই। নিছকই কি ‘নেক্রোফিলিয়া’-য় (মৃতদেহের সঙ্গে সহবাস করা, এক ধরনের মানসিক ব্যাধি) আক্রান্ত হওয়ার কারণে এমন কাণ্ড ঘটিয়ে তা মোবাইলে বন্দি করে রাখতেন ধৃত? না, এর নেপথ্যে রয়েছে পর্নোগ্রাফির কোনও চক্র? যেখানে মোটা টাকায় ওই সমস্ত ভিডিয়ো বিদেশে বিক্রির সন্দেহও উড়িয়ে দিতে পারছেন না তদন্তকারীরা।
৯ অগস্ট রাতে কলকাতা পুলিশ গ্রেফতার করেছিল সিভিক ভলান্টিয়ারকে। সেই সময়ে পুলিশ সূত্রে দাবি করা হয়েছিল, ধৃতের মারাত্মক ঝোঁক ছিল পর্নোগ্রাফিতে। ভারতে নিষিদ্ধ অনেক পর্ন-ভিডিয়ো উদ্ধার হয়েছিল তার মোবাইল থেকে। যার মধ্যে ছিল মৃতদেহের সঙ্গে সহবাসের ভিডিয়োও। তদন্তকারীদের দাবি, তার কিছু ওই হাসপাতালের মর্গে তোলা। কিন্তু মর্গে কে তুলত সেই ছবি? আর জি করের মধ্যে দাপিয়ে বেড়ানো সিন্ডিকেটের কয়েক জন সেই ছবি তোলার কাজে যুক্ত ছিল বলেও প্রাথমিক ভাবে কিছু তথ্য তদন্তকারীদের হাতে এসেছে বলে জানা যাচ্ছে।
আর জি করের তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে নেমে বেশ কিছু জায়গায় দুর্নীতির হদিস পেয়েছে সিবিআই। তার মধ্যে একটি বড় জায়গা ওই মেডিক্যাল কলেজের মর্গ। তদন্তে পর্নোগ্রাফির চক্রের পাশাপাশি বেওয়ারিশ মৃতদেহের হিসাবেও গরমিল উঠে এসেছে। সূত্রের দাবি, ২০২১ সাল থেকে বিগত কয়েক বছরের প্রায় প্রতিটি অর্থবর্ষেই অন্তত ৬০-৭০টি করে দেহের হিসাব পাওয়া যায়নি। সব থেকে বেশি সমস্যা দেখা দিয়েছে দেহাংশ নিয়ে। গরমিল রয়েছে মৃতদেহ, কঙ্কাল নিয়েও। কোনও কিছুরই ঠিক হিসাব নথিভুক্ত নেই মর্গের খাতায়। মর্গের ভিতরের নকশা, কোল্ড-চেম্বার, রেজিস্টার খাতা, শেষ কয়েক মাসের সিসি ক্যামেরার ফুটেজও সংগ্রহ করছেন তদন্তকারীরা। ফরেন্সিক মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান প্রবীর চক্রবর্তীর কাছে রেজিস্টার খাতার গরমিল নিয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হলেও তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি বলে সূত্রের দাবি। তাঁকে এ বিষয়ে জানার জন্য ফোন করা হলে ফোন ধরেননি। উত্তর দেননি মেসেজেরও।
এমনকি, এই মর্গের দুর্নীতিতেও ‘উত্তরবঙ্গ লবি’র প্রভাবের অভিযোগ উঠে আসছে। মর্গ তৈরির সময় থেকে যিনি ‘হেড-ডোম’ ছিলেন, তাঁকে মৌখিক নির্দেশে অন্য বিভাগে সরিয়ে দিয়েছিলেন প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। বদলে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সেখানে আনা হয়েছিল এক সময়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে থাকা এক ডোমকে। অভিযোগ, তাঁর মাধ্যমে মর্গকে দুর্নীতির আখড়া বানিয়ে তুলেছিল ‘সিন্ডিকেট’-এর মাথারা। যেখান থেকে প্রতি মাসে মোটা টাকা পৌঁছত সিন্ডিকেটে। সেই টাকা তুলতে ময়না তদন্তের জন্য আসা মৃতদেহের ব্যবচ্ছেদ করা, ঠিক মতো সেলাই থেকে শুরু করে শববাহী গাড়ির ব্যবস্থা করে শ্মশান পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার জন্য ন্যূনতম হাজার দশেক টাকার চুক্তি করা হত।
অভিযোগ রয়েছে আরও। সাধারণত প্রতি দিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে রাত আটটার মধ্যে মর্গ বন্ধ করে দেওয়া হয়। কোল্ড-চেম্বার থেকে শুরু করে অন্যান্য আলমারি, ঘরের চাবি সব রাখা থাকে মর্গের মূল কার্যালয়ে। আর মূল দরজার চাবি রাখা থাকে হেড ডোমের কাছে। আর, রাতে আসা মৃতদেহ রাখার জন্য মর্গেরপিছনের দরজার চাবি রাখা থাকে অন্য এক কর্মীর কাছে। অভিযোগ, শেষ কয়েক মাস ধরে অধিকাংশ দিনগভীর রাতেও মর্গের ভিতরের আলো জ্বলতে দেখা যেত। আর জি করে ৪০টির বেশি কোল্ড চেম্বার রয়েছে। রাতে সেই চেম্বার খোলা হত বলেও অভিযোগ। তদন্তকারীদের সন্দেহ, সেই সময়েই বের করা হত মৃতদেহ। তার পরে চলত সহবাস, যা মোবাইলের ক্যামেরা বন্দি করা হত। কারা এই কাজে যুক্ত, সেই চক্রের শিকড় কত দূর বিস্তৃত, সেটাই এখন খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মী বলেন, ‘‘সন্ধ্যা হলেই মর্গে নিয়ে আসা হত মদের বোতল। সেখানে আমাদের মতো ছোটখাটো কর্মীদের কারও কিছু বলার সাহস ছিল না। বললেই হয় বদলি, নয় চাকরি যাওয়ার হুমকি দেওয়া হত।’’ অভিযোগ, রাত হলেই মর্গে এসে ঢুকতেন সিন্ডিকেটের দাপুটে নেতাদের অনেকেই। এক কর্মীর কথায়, ‘‘অন্যায় দেখেও চুপ করে থাকাটাই তো অলিখিত নিয়ম হয়ে গিয়েছিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy