ফাইল চিত্র।
পরতে পরতে ধাঁধা। জ্ঞানেশ্বরী প্রতারণা কাণ্ডের সেই ধাঁধার সমাধানে নেমে একেবারে শূন্য থেকে তদন্ত শুরু করতে চাইছে সিবিআই।
সেই তদন্তের প্রথম ধাপ ডিএনএ রিপোর্ট। যার ভিত্তিতে ‘মৃত’ বলে দেখানো যাত্রীর পরিবার ক্ষতিপূরণ পেয়েছিল এবং তাঁর বোন পেয়েছিলেন রেলের চাকরি। সোমবার বিচার ভবনে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে ওই জালিয়াতির ঘটনায় মূল অভিযুক্ত অমৃতাভ চৌধুরী এবং তাঁর বাবা মিহির চৌধুরীর নতুন করে ডিএনএ পরীক্ষার আবেদনের মাধ্যমেই প্রথম থেকে তদন্তের সূচনা হয়েছে বলে জানান তদন্তকারীরা। বিচারক সেই আর্জি মঞ্জুর করেছেন।
তদন্তকারীরা জানান, রবি ও সোমবার জোড়াবাগানে অমৃতাভদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পাওয়া নথিপত্র যাচাই করে দেখা হচ্ছে। এক তদন্তকারীর কথায়, ক্ষতিপূরণ পেতে এবং অমৃতাভের বোন মহুয়া পাঠকের চাকরির ক্ষেত্রে রেল দফতরে কোন নথি জমা দেওয়া হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখা হবে। যাচাই করে হবে স্থানীয় থানার অনুসন্ধান রিপোর্টও।
তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, ২০১০ সালের ২৮ মে ঝাড়গ্রামের রাজাবাঁধ এলাকায় মালগাড়ির সঙ্গে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৪৮ জনের মৃত্যু হয়। অভিযোগ উঠেছিল অন্তর্ঘাতের। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মৃতদের প্রত্যেকের পরিবারকে এককালীন চার লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ এবং পরিবারের এক জনকে রেলে চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদের মুখে অমৃতাভ জানিয়েছেন, ওই ট্রেনে তিনি মুম্বই যাচ্ছিলেন। মৃতের তালিকায় তাঁর নাম উঠেছিল। ঠিক তথ্য না-দিয়ে তিনি বোনের চাকরির ব্যবস্থা করেছিলেন কেন, অমৃতাভ বা তাঁর বাবা মিহিরবাবু তার সদুত্তর দিতে পারেননি।
তদন্তকারীদের কথায়, মৃতের পরিবর্তে তাঁর স্বজনের চাকরির ক্ষেত্রে মৃত্যুর শংসাপত্র, ডিএনএ রিপোর্ট, মৃতের জীবিতাবস্থার ছবি এবং মৃতদেহের ছবি প্রামাণ্য নথি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ক্ষতিপূরণ ও মহুয়ার চাকরির ক্ষেত্রে অমৃতাভের জীবিতাবস্থার ও তাঁর ‘মৃতদেহের’ যে-ছবি ব্যবহার করা হয়েছিল, তা মিহিরবাবুর জোড়াবাগানের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে জীবিত ও মৃতের ছবির সঙ্গে গরমিল ধরা পড়েছে। ওই ছবির দু’টি ফরেন্সিক পরীক্ষা হচ্ছে।
মৃতের তালিকা তৈরি, ক্ষতিপূরণ এবং স্বজনদের চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রে জালিয়াতি হয়েছিল বলে প্রাথমিক ভাবে সন্দেহ করছেন তদন্তকারীরা। সেই তালিকা অনুযায়ী ক্ষতিপূরণপ্রাপ্ত সব পরিবার সম্পর্কে খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন বলে মনে করছেন তাঁরা।
সিবিআইয়ের এক কর্তা বলেন, "ক্ষতিপূরণ ও চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি অসাধু চক্র কাজ করেছিল। কিছু বহিরাগত ও রেল দফতরের কয়েক জন আধিকারিক সেই চক্রে জড়িত বলে অনুমান করা হচ্ছে। অমৃতাভকে জিজ্ঞাসাবাদ করে শনাক্ত করা হচ্ছে ওই চক্রের পান্ডাদের।
অমৃতাভদের আদি বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের বামুনপাড়া গ্রামে। মন্তেশ্বরের কামারশাল মোড় এলাকায় তাঁর পৈতৃক জমিতে আবাসন নির্মাণের কাজ চলছে। সেই কাজ দেখতে মাঝেমধ্যে সেখানে যেতেন অমৃতাভ।
বামুনপাড়ার বাসিন্দাদের অনেকে জানান, গ্রামে সুনাম রয়েছে অমৃতাভের পরিবারের। এলাকার নানা উন্নয়নমূলক কাজে সাহায্য করেছে তাঁরা। বছর দশেক আগে জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনায় অমৃতাভের মৃত্যুর কথা জেনেছিলেন তাঁরা। তবে প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে জানতে পারেন, অমৃতাভ জীবিত। এলাকায় যাতায়াতও শুরু করেন তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা নির্মল সিংহ, প্রেমদাস প্রামাণিকেরা বলেন, ‘‘এর মধ্যে ও যে এত কিছু ঘটিয়েছে, আমরা তা টের পাইনি। ছেলের ফিরে আসার পরে পরিবারের তরফে অবশ্যই রেলকে খবর দেওয়া উচিত ছিল।’’ অমৃতাভের কাকা, ওই গ্রামের বাসিন্দা সঞ্জয় চৌধুরী বলেন, ‘‘দুর্ঘটনার ছ’সাত বছর পরে বিধ্বস্ত অবস্থায় বাড়ি ফেরে সাহেব (অমৃতাভ)। ওর চিকিৎসা করাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন বাড়ির লোকজন। এ ছাড়া আর কিছু জানা নেই আমার।’’ সরকারি খাতায় ‘মৃত’, এমন এক ব্যক্তি এলাকায় যাতায়াত করছেন, পুলিশ টের পেল না কেন? মন্তেশ্বর থানা সূত্রের দাবি, ওই যুবকের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ থানায় আসেনি। সেই জন্যই বিষয়টি
নজরে আসেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy