কালীঘাটের কাকুর পর প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এ বার কুন্তল ঘোষের কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করল সিবিআই। মঙ্গলবার বিচার ভবনে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে তদন্তকারী অফিসারের উপস্থিতিতে কণ্ঠস্বরের নমুনা দিয়ে বেরোনোর সময় প্রাক্তন তৃণমূল যুবনেতা কুন্তল বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ভাইয়ের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘‘আমার গায়ে বিরোধী দলের রং লেগে আছে। আমি বিরোধী দলনেতার ভাই বলে আমাকে কিছু করা হবে না। দিব্যেন্দু অধিকারী ও ভারতী ঘোষকেও ডাকা উচিত। নিরপেক্ষ তদন্ত হোক। তাদের রোল (ভূমিকা) সিবিআই বলতে পারবে।’’
কুন্তলের ওই মন্তব্যের কথা শুনে ভারতী হাসতে হাসতে আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘আমার এ বিষয়ে কিছু বলার নেই। ওঁকেই জিজ্ঞাসা করুন।’’ এর আগে প্রাথমিকের মামলায় ‘কাকু’র কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করেছিল ইডি। পরে ওই মামলায় সিবিআইও ‘কাকু’র কণ্ঠের নমুনা নেয়। এ বার আদালতের অনুমতি নিয়ে জামিনে মুক্ত কুন্তলের কণ্ঠস্বরের নমুনাও সংগ্রহ করা হল। প্রসঙ্গত, নিয়োগ সংক্রান্ত আর্থিক লেনদেনের মামলায় ২০২৩ সালের ২০ জানুয়ারি কুন্তলকে গ্রেফতার করেছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। চাকরিপ্রার্থীদের থেকে চাকরির প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে টাকা তোলার অভিযোগের পাশাপাশি, হিসাব-বহির্ভূত বিপুল অঙ্কের আর্থিক লেনদেনের অভিযোগও ছিল কুন্তলের বিরুদ্ধে।
এর পর নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির মামলায় কুন্তলকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। প্রায় ২৩ মাস ধরে জেলে থাকার পর কুন্তল সিবিআইয়ের মামলায় সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিন পান গত নভেম্বরে। তার পর তিনি জেল থেকে মুক্তি পান। আদালতে সিবিআই জানিয়েছিল, কুন্তল চাকরি দেওয়ার নামে প্রার্থীদের কাছ থেকে প্রায় চার কোটি টাকা তুলেছেন। ভুয়ো ইন্টারভিউ নেওয়া হয়েছিল সরকারি অফিসে। অন্য দিকে, ইডির দাবি ৩২৫ জন শিক্ষক-পদপ্রার্থীর কাছ থেকে ৩ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন তৃণমূলের তৎকালীন যুবনেতা কুন্তল। তাঁর কাছে সব মিলিয়ে ১৯ কোটি টাকারও বেশি পৌঁছেছিল বলেও আদালতকে জানায় ইডি।
সিবিআইয়ের রিপোর্টে দাবি, টেটে ফেল করা প্রার্থীদের যোগ্য প্রমাণ করতে ভুয়ো ওয়েবসাইট তৈরি করেছিলেন কুন্তলেরা। অবিকল আসল ওয়েবসাইটের মতো দেখতে ছিল সেই ভুয়ো ওয়েবসাইট। এমনকি, দুর্নীতি যাতে নজর এড়িয়ে যায়, সে জন্য ভুয়ো ইমেল আইডি থেকে অযোগ্য চাকরিপ্রাপকদের মেল পাঠিয়ে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডেকে পাঠানো হত। কোনও নিয়মের তোয়াক্কা না করেই ওএমআর শিট মূল্যায়নের দায়িত্ব ‘এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানি’কে দেওয়া হয়েছিল। এ বার সেই তদন্তের স্বার্থে কুন্তলের কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করল কেন্দ্রীয় সংস্থাটি।