দিল্লির সদর দফতরেই আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক পড়ুয়া খুন-ধর্ষণের মামলার দ্বিতীয় সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে দাবি সিবিআইয়ের। ওই মামলায় তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগে প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। কিন্তু তাঁদের বিরুদ্ধে যথা সময়ে চার্জশিট দিতে না-পারার ব্যর্থতায় ওঁরা জামিন পেয়ে যান।
সিবিআই সূত্রে দাবি, মূলত আর জি কর হাসপাতাল এবং টালা থানার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং ওই ঘটনায় প্রায় ১৮০ জনের জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসা তথ্যের ভিত্তিতেই এ বারের সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট প্রস্তুত করা হচ্ছে। দ্রুত মামলার দ্বিতীয় সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট পেশ করা হবে বলে সোমবার শিয়ালদহ অতিরিক্ত বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে সিবিআইয়ের তরফে জানানো হয়। এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, “মৃত্যুর ঘটনা আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়া এবং মৃত্যুর আসল কারণ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল বলে নানা তথ্যসূত্র মিলেছে। ওই সব তথ্যের ভিত্তিতেই অগস্ট থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত তদন্ত করা হয়েছিল। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আদালতগ্রাহ্য তথ্যপ্রমাণও উঠে এসেছে। তার ভিত্তিতেই দ্বিতীয় সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট পেশ হবে।”
তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, সুপ্রিম কোর্টে ওই মামলার শুনানিতে এখনও পর্যন্ত সাতটি ‘স্টেটাস রিপোর্ট’ মুখ বন্ধ খামে জমা দেওয়া হয়েছে। এবং তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওই সব তথ্যের অনেক কিছুই দ্বিতীয় সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে থাকবে বলে দাবি। তবে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের ক্ষেত্রে সন্দীপ, অভিজিৎ ছাড়া আরও কোনও কোনও প্রভাবশালীর ভূমিকা বোঝা গিয়েছিল বলেও দাবি। তদন্তকারীদের সূত্রটির আরও দাবি, তথ্যপ্রমাণ লোপাটের ক্ষেত্রে ওই সব ব্যক্তিদের জড়িত থাকার বিষয়ও চার্জশিটে বলা হবে।
সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্রের মাধ্যমে দাবি, "একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি ওই ঘটনায় জড়িত বলে আভাস মিলেছে। কিন্তু তাঁদের বিরুদ্ধে আদালতগ্রাহ্য তথ্যপ্রমাণ প্রতিষ্ঠা করায় কিছু জটিলতা রয়েছে। নিম্ন আদালতকে সমস্ত পরিস্থিতির কথা বলে চার্জশিট দেওয়া হবে। সেখানে একাধিক ফরেন্সিক রিপোর্ট ও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও কলকাতা পুলিশের তদন্ত পর্বে গুরুত্বপূর্ণ নথি বিকৃতির বিষয়গুলি চার্জশিটে উল্লেখ করা হবে।” সেই জন্যই দিল্লির সদর দফতরে পদে পদে অভিজ্ঞ আইনজীবীদের সঙ্গে খুঁটিয়ে আলোচনা করে দ্বিতীয় সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে সূত্রটি জানাচ্ছেন। সিবিআইয়ের এক কর্তা বলেন, “শীর্ষ আদালতে ১৭ মার্চ ওই মামলার শুনানি রয়েছে। তার আগেই নিম্ন আদালতে দ্বিতীয় সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট পেশ করার বিষয়েআমরা আশাবাদী।”
আরজিকর-কাণ্ডে কলকাতা পুলিশের হাতে প্রথমেই গ্রেফতার সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে অবশ্য দোষী সাব্যস্ত করে আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজা দেয় নিম্ন আদালত। শিয়ালদহ অতিরিক্ত দায়রা আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস ২০ জানুয়ারি ওই নির্দেশ দিয়েছিলেন। তবে তদন্তের নানা অসম্পূর্ণতা ও অভিযুক্তের আইনজীবীদের গাফিলতি নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তুলেছেন বিচারক।
গত ১৩ অগস্ট কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে তদন্তভার নেয় সিবিআই। দিল্লির একটি বিশেষ দল ওই মামলার তদন্ত শুরু করেছিল। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মর্যাদার তদন্তকারী অফিসার সীমা পাহুজা ও এক যুগ্ম অধিকর্তার নেতৃত্বে প্রায় ২৮ জনের একটি দল তদন্ত শুরু করে। অগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত অন্তত ১৮০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ ও ঘটনাস্থলের নানা নমুনা সংগ্রহ করে এবং ফরেন্সিক বিশ্লেষণ করানো হয়। সন্দীপ, অভিজিৎকে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পরে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ওই দু’জনের মোবাইল ফোনের সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করে সিবিআই।
সিবিআই সূত্রে দাবি, জানুয়ারির পর থেকে ওই তদন্তকারী দলের অফিসারেরা দিল্লির সদর দফতর থেকেই মামলার গতিপ্রকৃতির বিশ্লেষণ করছেন। তবে কলকাতার সিজিও কমপ্লেক্সের অফিসে তদন্তকারীদের দলের ডিএসপি পদ মর্যাদার এক অফিসার রয়েছেন। মামলা সংক্রান্ত নানা ফরেন্সিক রিপোর্ট এবং নতুন উঠে আসা তথ্য তিনিই দিল্লিতে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)