বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। ফাইল চিত্র।
তৃণমূল কংগ্রেসের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল এ পর্যন্ত তাঁর সম্পত্তির মাত্র এক-তৃতীয়াংশের হিসেব দিয়েছেন বলে সিবিআই সূত্রের অভিযোগ। এই অবস্থায় গরু পাচার কাণ্ডের তদন্তে নেমে অনুব্রতের সব সম্পত্তির হদিস পেতে ‘ভোলে বাবা’র শরণাপন্ন হয়েছে সিবিআই ও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। সেই সঙ্গে, গত ১০ বছরে আয়কর দফতরে জমা দেওয়া অনুব্রতের হিসাবের সমস্ত তথ্য বিশদে জানতে চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
সিবিআই সূত্রের অভিযোগ, অনুব্রত সম্প্রতি সিবিআইয়ে হাজিরা দিয়ে তাঁর ২৬টি সম্পত্তির হিসাব দাখিল করেছেন। তার মধ্যে আছে বীরভূম ও পুরুলিয়ার বেশ কয়েকটি চালকল ও তেলকল। বেশ কয়েক কোটি টাকা ওই সব ব্যবসায় বিনিয়োগ করা হয়েছে। ওই সূত্রের দাবি, অনুব্রত যে সমস্ত সম্পত্তির হিসাব দিয়েছেন, তার সবই রয়েছে ‘ভোলে বাবা’র নামে এবং অন্যান্য সম্পত্তির বেশির ভাগই তাঁর প্রয়াত স্ত্রী ছবি ও মেয়ে সুকন্যার নামে রয়েছে।
যদিও অনুব্রতকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘কই, আমি তো সিবিআইয়ের কাছে কোনও কাগজপত্র জমা দিইনি। ওরা কোথা থেকে এত সম্পত্তির খোঁজ পেল?’’ অনুব্রতের আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা বলেন, ‘‘তদন্তের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে পারব না।’’
সিবিআই সূত্রের খবর, অনুব্রতের আরও অনেক চালকল ও তেলকল রয়েছে বলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের সন্দেহ। সেই কারণে বীরভূম ও আশপাশের জেলায় ‘ভোলে বাবা’র নামে চিহ্নিত চালকল, তেলকল-সহ বিভিন্ন সম্পত্তির মালিকানার বিষয়টি খতিয়ে দেখছে সিবিআই এবং ইডি। তদন্তকারীদের সূত্র জানাচ্ছেন, ওই নেতার দাখিল করা হিসাবে বহু সম্পত্তিতে কোনও-না-কোনও ভাবে ‘ভোলে বাবা’ নামটি রয়েছে। তাই ওই নামের ভিত্তিতে সব সম্পত্তির খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, ‘‘অনুব্রত রামপুরহাটের এক জন ছোট মাছ ব্যবসায়ী ছিলেন। তাঁর এত সম্পত্তি কী ভাবে হল, তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে।’’
সিবিআই সূত্রের খবর, তদন্তকারীদের সন্দেহ, বীরভূমের মহম্মদবাজারে ‘ক্রাশার’ দিয়ে পাথরকুচি তৈরির কারবারে অনুব্রতের প্রচুর টাকার বিনিয়োগ থাকতে পারে। প্রসঙ্গত, জেলা জুড়ে পাথরকুচি ও বালি পাচার নিয়ে বহু অভিযোগ রয়েছে। বেনামেও অনেক সম্পত্তি থাকতে পারে অনুব্রতের। সেই তালিকায় শান্তিনিকেতনের রিসর্টও রয়েছে বলে অনুমান তদন্তকারীদের।
ওই সূত্রের দাবি, গরু পাচার মামলায় মূল অভিযুক্ত এনামুল হকের সঙ্গে অনুব্রতের ঘনিষ্ঠতা ছিল বলে তদন্তে উঠে এসেছে। এনামুলকে জেরা করে গরু পাচারের লভ্যাংশের টাকা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছে কী ভাবে পৌঁছত, সেই বিষয়ে বহু তথ্য পাওয়া গিয়েছে। সেই ভিত্তিতে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রক্রিয়া শুরুও হয়েছে ইতিমধ্যে।
গরু পাচার মামলায় ইডি অবশ্য এখনও পর্যন্ত অনুব্রতের কাছে কোনও নোটিস পাঠায়নি। কিন্তু পাচারের লভ্যাংশের টাকা কী ভাবে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছে পৌঁছেছিল এবং কোথায় কোথায় সেই অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে, তার তদন্তে নেমেছে ইডি-ও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy