Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Anubrata Mondal

কেষ্টর বিরুদ্ধে ‘তথ্যপ্রমাণ’ দিয়েছেন সহগাল, দাবি ইডির

রাউস অ্যাভিনিউ কোর্ট আজ রায় দিয়েছে, আরও ১১ দিন ইডি-র হেফাজতে কাটাতে হবে অনুব্রত মণ্ডলকে। এই ১১ দিনে অনুব্রতের সঙ্গে বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য মোট ১২ জনকে সমন পাঠিয়েছে ইডি।

Picture of Sehgal Hossain and Anubrata Mondal.

অনুব্রতের দেহরক্ষী সেহগাল হোসেনও ইডি-র হেফাজতে থাকাকালীন অনুব্রতের বিরুদ্ধে ‘যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ’ দিয়েছেন বলে ইডি-র দাবি। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২৩ ০৭:০১
Share: Save:

অনুব্রত মণ্ডলের মেয়ে সুকন্যা মণ্ডল ইডি-র তদন্তকারী অফিসারদের সামনে দাবি করেছিলেন, তাঁর নামে বিপুল সম্পত্তি, জমি-বাড়ি-চালকল, ব্যাঙ্কে বিপুল টাকার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। সবটাই তাঁর বাবা জানেন।

ইডি অনুব্রত মণ্ডল ও সুকন্যাকে এ বার একসঙ্গে বসিয়ে জেরা করতে চলেছে। শুধু সুকন্যা নন। অনুব্রতের মুখোমুখি বসিয়ে তাঁর হিসেবরক্ষক মণীশ কোঠারি-সহ গরু পাচার মামলার মোট ১২ জন সন্দেহভাজন ও সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইছে ইডি। অনুব্রতের দেহরক্ষী সেহগাল হোসেনও ইডি-র হেফাজতে থাকাকালীন অনুব্রতের বিরুদ্ধে ‘যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ’ দিয়েছেন বলে ইডি-র দাবি। তার ভিত্তিতেও অনুব্রতকে প্রশ্ন করা হবে। ১২ জনের ওই তালিকায় রয়েছেন সুকন্যার গাড়িচালক তুফান মির্ধা, অনুব্রতের ঘনিষ্ঠ কৃপাময় ঘোষ, তাঁর বাড়ির পরিচারক বিজয় রজক। পুলিশ হেফাজতে আসানসোল থেকে কলকাতা নিয়ে যাওয়ার পথে, শক্তিগড়ে কচুরি-ল্যাংচা খাওয়ার সময় অনুব্রতের সঙ্গে একই টেবিলে দেখা গিয়েছিল তুফান ও কৃপাময়কে।

রাউস অ্যাভিনিউ কোর্ট আজ রায় দিয়েছে, আরও ১১ দিন ইডি-র হেফাজতে কাটাতে হবে অনুব্রত মণ্ডলকে। এই ১১ দিনে অনুব্রতের সঙ্গে বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য মোট ১২ জনকে সমন পাঠিয়েছে ইডি। আদালতে ইডি দাবি করেছে, অনুব্রতের দেহরক্ষী সেহগাল হোসেন তদন্তকারীদের প্রশ্নের উত্তরে অনুব্রতের বিরুদ্ধে ‘যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ’ দিয়েছেন। গরু পাচার থেকে ‘কোটি কোটি টাকার অর্থ’ লুট হয়েছে এবং অনুব্রত তার ‘অংশীদার’। তাদের বক্তব্য, গরু পাচার কাণ্ডের বেশ কয়েক জন অভিযুক্ত বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়েছেন। কেউ কেউ অন্য দেশে চলে গিয়েছেন। তদন্তে নেমে বিপুল পরিমাণ নথি মিলেছে। তা নিয়েও আগামী ১১ দিন অনুব্রতকে জেরা করা হবে।

অনুব্রত এবং তাঁর মেয়েকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরার সম্ভাবনা প্রসঙ্গে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য, ‘‘সুকন্যাকে নিয়ে কী হবে, জানি না। গরু প্রসঙ্গে আলোচনা করতে হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুখোমুখি বসিয়ে কথা বলুক! তবেই পরিষ্কার হবে, গরু পাচার কী ভাবে হত।’’ তৃণমূলের নেতা তাপস রায়ের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘এ কথার জবাব হয় না। অকৃতজ্ঞতার উদাহরণ শুভেন্দু। ওঁর ঔদ্ধত্য, স্পর্ধা এবং অহঙ্কার এমন একটা জায়গায় পৌঁছেছে যে, উনি অন্ধ হয়ে গিয়েছেন।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের কটাক্ষ, ‘‘ভাল করে এ বার অনুব্রতের ছাল ছাড়ানো হবে! অনুব্রতের মেয়ের চাকরি নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত।’’ বহরমপুরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেছেন, ‘‘দিদির যে খোকাবাবুকে ইডি-র দফতরে ৯ ঘণ্টা জেরা করা হয়েছিল, সেখানে সে সব কিছু বলে এসেছে। সে বলে এসেছে বলে কেষ্টদের উপরে ইডি-র নজর পড়েছে। এ বার কেষ্ট যদি ঢোল ফাটায়, আর কত বিপদ হবে এই রাজ্যের তৃণমূলের নেতাদের, তারাই বুঝছে।’’সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীও বলেন, ‘‘অপরাধীদের উপরে মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণা থাকলে এই রকমই হয়। চ্যালার যদি এই হয়, তা হলে রানিদের কী আছে? জেলার সর্বনাশ করেছে, মানুষের সর্বনাশ করেছে, নিজের মেয়েটারও সর্বনাশ করেছে।’’

গত ৭ মার্চ আসানসোলের জেল থেকে দিল্লিতে নিয়ে আসার পরে মধ্যরাত পার করে ইডি অনুব্রতকে তিন দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে পেয়েছিল। তারা আজ অনুব্রতকে রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টে বিশেষ আদালতের বিচারক রঘুবীর সিংহের আদালতে তোলে এবং আরও ১১ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে রাখার আর্জি জানায়।

অনুব্রতের আইনজীবী মুদিত জৈন ওই আর্জির বিরোধিতা করে বলেছিলেন, ইডি-র যা জিজ্ঞাসাবাদ করার ছিল, তা হয়ে গিয়েছে। অনুব্রতের নীরব থাকার অধিকার রয়েছে। ইডি-র আর কোনও প্রশ্ন না থাকলেও তাঁকে হেফাজতে রাখতে চাইছে। ইডি-র আইনজীবী নীতেশ রানা পাল্টা যুক্তি দেন, ৭ মার্চ মধ্যরাতের পরে অনুব্রতকে ইডি নিজেদের হেফাজতে পেয়েছিল। ৮ মার্চ তাঁকে ঘুমোতে দেওয়া হয়েছে। সে দিন হোলির ছুটিও ছিল। ৯ মার্চ রামমনোহর লোহিয়া হাসপাতালে দু’ঘণ্টার জন্য তাঁর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করানো হয়। তারপরে মাত্র দু’তিন ঘণ্টার জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব হয়েছে। তা ছাড়া, অনুব্রত বাংলা ছাড়া ইংরেজি বা হিন্দি জানেন না। তিনি লিখতেও পারেন না। ফলে ভাষার সমস্যা রয়েছে। এক জন দোভাষীর বন্দোবস্ত করা হয়েছে। এর আগে এনামুল হক, সেহগাল হোসেন, সতীশ কুমারের মতো গরু পাচার মামলার অন্যান্য অভিযুক্তদেরও ইডি নিজের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।

অনুব্রতকে ফের ২১ তারিখে আদালতে তোলার নির্দেশ দিয়ে বিচারক রঘুবীর সিংহ বলেছেন, “অনুব্রতের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, তিনি গরু পাচারের মূল পান্ডা এনামুল হক ও অন্যান্য অভিযুক্তদের সুরক্ষা ও রাজনৈতিক মদত দিয়েছেন। গরু পাচার থেকে বহু কোটি টাকা আয় হয়েছে ও নয়ছয় হয়েছে।” গত দু’দিনে অনুব্রতকে প্রতি দিন স্বাস্থ্যপরীক্ষা করানোর শর্ত ছিল। আদালত আজ জানিয়েছে, ৪৮ ঘণ্টা অন্তর অনুব্রতের স্বাস্থ্যপরীক্ষা হবে। প্রতি দিন আধ ঘণ্টা করে অনুব্রত তাঁর আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে পারবেন। অনুব্রতের আইনজীবী মুদিত জৈন এ দিন জানান, তিনি ইডি দফতরে গেলেও সিসিটিভি ক্যামেরার সামনে কথা বলতে হয়েছে। ইডি এই আপত্তি মেনে নিয়ে বলেছে, ভবিষ্যতে তা হবে না।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy