E-Paper

গরু পাচার থেকে আয়ের প্রায় ১৩ কোটি টাকা নগদে নেন কেষ্ট, জমা দেন স্ত্রী-কন্যার অ্যাকাউন্টে: ইডি

গরু পাচার থেকে আয়ের এই বিপুল পরিমাণ টাকা অনুব্রত মণ্ডল, তাঁর প্রয়াত স্ত্রী ছবি মণ্ডল, কন্যা সুকন্যা মণ্ডল ও তাঁদের বিভিন্ন সংস্থার বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছিল।

anubrata mondal.

অনুব্রত মণ্ডল। ফাইল চিত্র।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০২৩ ০৭:০৫
Share
Save

মোট ১২ কোটি ৮০ লক্ষ ৯৪ হাজার ২৩৭ টাকা। পুরোটাই নগদে।

গরু পাচার থেকে আয়ের এই বিপুল পরিমাণ টাকা অনুব্রত মণ্ডল, তাঁর প্রয়াত স্ত্রী ছবি মণ্ডল, কন্যা সুকন্যা মণ্ডল ও তাঁদের বিভিন্ন সংস্থার বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছিল। আজ দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টে অনুব্রত, সুকন্যা ও মণীশ কোঠারিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দায়ের করে এই তথ্য জানিয়েছে এনফোর্সমেন্টডিরেক্টরেট (ইডি)।

ইডি-র দাবি, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে নগদে অর্থ জমার পাশাপাশি গরু পাচারের টাকাতেই অনুব্রত ১.৫১ কোটি টাকা খরচ করে স্ত্রী-কন্যার নামে ভোলে বোম রাইস মিল কিনেছিলেন। সুকন্যা ও বাড়ির পরিচারক বিদ্যুৎবরণ গায়েনের নামে ২.৪২ কোটি টাকায় নীড় ডেভেলপার নামের সংস্থা কেনা হয়েছিল। সে টাকাও এসেছিল গরু পাচারের আয় থেকে। সুকন্যা ও বিদ্যুতের নামেই এএনএম অ্যাগ্রোকেম নামের আর একটি সংস্থা মাত্র ১ লক্ষ টাকায় কেনা হয়েছিল। বাকি টাকা গরু পাচারের আয় থেকে বেনামে লেনদেন হয়েছিল। ইডি দাবি করেছে, নিজের ‘রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাব’ খাটিয়ে অনুব্রত এনামুল হককে গরু পাচারে সাহায্য করতেন। এনামুল ও তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করতেন। তার বিনিময়েই গরু পাচারের আয়ের টাকা অনুব্রতের কাছে পৌঁছে যেত। তার সুবাদেই ২০১৫-১৬ থেকে মণ্ডল পরিবারের অর্থ-সম্পত্তি ফুলেফেঁপে উঠতে শুরু করে। এখনও পর্যন্ত অনুব্রত ও তাঁর পরিবারের ১১ কোটি ২৬ লক্ষ টাকার সম্পত্তি আটক করা হয়েছে।

ইডি গত ৬ মার্চ অনুব্রতকে দিল্লিতে নিজেদের হেফাজতে পেয়েছিল। তার ৬০ দিনের মধ্যে চার্জশিট দায়ের করতে না পারলে স্বাভাবিক নিয়মে অনুব্রত জামিন পাওয়ার জন্য আদালতে আর্জি জানাতে পারতেন।

৬০ দিনের মেয়াদ শুক্রবারই শেষ হচ্ছে। তার আগে, ৫৯-তম দিনের মাথায় আজ ২০৪ পৃষ্ঠার চার্জশিট দায়ের করেছে ইডি। সেই সঙ্গে দু’টি খণ্ডে তথ্যপ্রমাণ-সম্বলিত ৯০০ পৃষ্ঠার নথিও জমা দিয়েছে। সুকন্যা ও হিসেবরক্ষক মণীশ কোঠারির নামও অভিযুক্ত হিসেবে যোগ করা হয়েছে অনুব্রতের সঙ্গে।

অনুব্রত ইতিমধ্যে তাঁকে তিহাড় জেল থেকে আসানসোলের জেলে ফেরত পাঠানোর আর্জি জানিয়েছিলেন। ইডি তার বিরোধিতা করেছিল। রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টে বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক রঘুবীর সিংহ আজ সেই আর্জি খারিজ করে দিয়েছেন। আদালতের বক্তব্য, এই আর্জি যুক্তিহীন ও ভিত্তিহীন। গরু পাচারের মূল অভিযুক্ত এনামুল হক, বিএসএফ অফিসার সতীশ কুমার, অনুব্রতের দেহরক্ষী সেহগল হোসেনরা আগে থেকেই তিহাড় জেলে ছিলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে ইডি আগেই চার্জশিট পেশ করেছে। অনুব্রত, সুকন্যা, মণীশও এখন তিহাড়ে। সব অভিযুক্তকে আগামী সোমবার, ৮ মে একসঙ্গে আদালতে তোলা হবে।

অনুব্রতের জেল হেফাজতের মেয়াদ শেষ হওয়ায় আজ তাঁকে আদালতে তোলা হয়েছিল। এজলাসের মধ্যে ইডি-র তদন্তকারী অফিসারদের সামনে পেয়ে হুইলচেয়ারে বসা অনুব্রত বলেন, “বিবেক বলে কিছু আছে? মেয়েটাকে গ্রেফতার করলেন?” গত ২৬ এপ্রিল ইডি দিল্লিতে সুকন্যাকে জিজ্ঞাসাবাদের পরে সুকন্যাকে গ্রেফতার করেছিল। সুকন্যা তার আগে সমন এড়িয়ে গিয়েছিলেন। অনুব্রত আজ সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘মেয়েকে আসতে বারণ করেছিলাম। কেন এল!’’ একই জেলে থাকলেও ভিন্ন ব্যারাকে রয়েছেন বলে সুকন্যার সঙ্গে তাঁর এখনও দেখা হয়নি। জেল সুপারের অনুমতি নিয়ে শনিবার মেয়ের সঙ্গে তাঁর দেখা হবে। ‘হার্টের ব্লকেজ’ ও ‘লিভারের প্রবলেম’-এর জন্য তাঁর শরীর ভাল যাচ্ছে না বলেও জানিয়েছেন অনুব্রত।

ইডি চার্জশিটে জানিয়েছে, অনুব্রত তাঁর বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি ও অর্থের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে জানিয়েছেন, মূলত জমির দালালি ও চালের ব্যবসা থেকে এই টাকা এসেছে। কিন্তু তার কোনও নথি দেখাতে পারেননি। চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট মণীশ ব্যাঙ্কে নগদ জমা থেকে ব্যবসায়িক লেনদেন, আয়কর রিটার্ন জমার বিষয়ে জানেন বলে অনুব্রত জানিয়েছেন। কিন্তু মণীশ নগদ টাকার কোনও ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।

পেশায় স্কুল শিক্ষিকা সুকন্যাও তাঁর নামে বিপুল সম্পত্তি, সংস্থা, ব্যাঙ্কে টাকার ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। সুকন্যা দাবি করেন, সবটাই তাঁর বাবা জানেন। তিনি শুধু কাগজে সই করেছেন। অথচ মণীশ জিজ্ঞাসাবাদের মুখে ইডি-কে জানিয়েছেন, সুকন্যাই ব্যবসার বিষয়ে নির্দেশ দিতেন। অনুব্রত এ সব নিয়ে বিশেষ কথা বলতেন না। ব্যাঙ্কের লেনদেন, রোজকার ব্যবসা, গরু পাচারের ঘুষের টাকায় নতুন সংস্থা খোলা সুকন্যার নির্দেশেই হয়েছিল। সুকন্যাই আয়কর রিটার্নের যাবতীয় নথি দিতেন। মণ্ডল পরিবারের সঙ্গে বাড়ির পরিচারকদেরও আয়কর রিটার্ন জমা করতেন মণীশ। পরিচারক হয়েও কী ভাবে তাঁরা বিপুল আয়কর দিচ্ছেন, তা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন। এই আয়ের উৎস তিনি জানতেন। কালো টাকা কী ভাবে কাজে লাগানো যায়, তিনিই বুদ্ধি দিয়েছেন।

ইডির চার্জশিটে দাবি, অনুব্রতদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে নগদ টাকা জমা করার সময় পরিকল্পিত ভাবে ৫০ হাজার টাকা, ১ লক্ষ টাকা বা ২ লক্ষ টাকা জমা করার বদলে ৪৯ হাজার, ৯৯ হাজার, ১ লক্ষ ৯৯ হাজার টাকা জমা করা হত। যাতে ব্যাঙ্ক বা আয়কর দফতরের নজরে না আসে বা প্যান কার্ডের তথ্য দিতে না হয়। জমাকর্তার পরিচয় গোপন রাখতে ব্যাঙ্কে টাকা জমা করার বদলে ক্যাশ ডিপোজ়িট মেশিনে টাকা জমা করা হত।

ইডি জানিয়েছে, অনুব্রত মূলত তাঁর দেহরক্ষী সেহগল হোসেনের মোবাইলে গরু পাচার কারবারি এনামুলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। এনামুল ও সেহগলের নিয়মিত কথাবার্তার ‘কল ডিটেলস রেকর্ড’-ও চার্জশিটে রয়েছে। অনুব্রত বাড়ির পরিচারক, তৃণমূল নেতাদের মোবাইলও ব্যবহার করতেন। কেন্দ্রীয় সংস্থার বক্তব্য, সেহগলই অনুব্রতর হয়ে গরু পাচারের টাকা তুলতেন। নগদ টাকা দেখাশোনা করতেন। অনুব্রত সরাসরি ফোন ধরতেন না। সেহগলের মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে হত।

গরু পাচারের মামলায় ইডি গত বছরের এপ্রিলে প্রথম দিল্লির আদালতে চার্জশিট (প্রসিকিউশন কমপ্লেন্ট) দায়ের করেছিল। এরপরে গত জুন ও ডিসেম্বরে আরও দু’টি চার্জশিট দায়ের করেছে তারা। আজ তৃতীয় অতিরিক্ত চার্জশিট দায়ের করা হল। সকাল থেকে দুপুর, তারপরে চার্জশিট পেশ করতে বিকেল হয়ে যাওয়ায় বিচারক রঘুবীর সিংহের কাছে ধমকও খেতে হয়েছে ইডি-র তদন্তকারী অফিসার পঙ্কজ কুমারকে। বিচারক ইডি-র কাজের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে জিজ্ঞাসা করেছেন, ‘‘অভিযুক্তকে কি জামিন দিয়ে দেব! তারপরে নিজের দফতরকে ব্যাখ্যা দেবেন।’’ তদন্তকারীরা দুঃখপ্রকাশ করে, মাফ চেয়ে নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Anubrata Mondal Sukanya Mondal Cattle Smuggling

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।