Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
flood

Death: জলভাসি ঘাটালে মৃত ৩, খানাকুলে নামল সেনা

শনিবার সকালে ডিভিসি ১ লক্ষ ৩০ হাজার কিউসেক হারে জল ছেড়েছিল। সেই জলেই ডুবেছে উদয়নারায়ণপুর।

জলমগ্ন এলাকায় চলছে উদ্ধারকাজ। রবিবার খানাকুলে। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

জলমগ্ন এলাকায় চলছে উদ্ধারকাজ। রবিবার খানাকুলে। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২১ ০৫:০৮
Share: Save:

বৃষ্টির জন্য এমনিতেই গঙ্গা-সহ সব নদনদী-খাল-বিল কানায় কানায় পূর্ণ। তার উপরে ডিভিসি-র ছাড়া জলে রাজ্যের বানভাসি এলাকায় পরিস্থিতির অবনতি হবে বলে আশঙ্কা করেছিলেন সেচকর্তারা। তাঁদের সেই আশঙ্কাই সত্যি হল রবিবার।

শিলাবতীর জলে প্লাবিত পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল মহকুমাতেই তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। এক জন মারা গিয়েছেন কেশপুরে। রূপনারায়ণের বাঁধ ভেঙে জল ঢুকে যাওয়ায় হুগলির খানাকুল-২ ব্লক পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। এখানকার দুর্গতদের উদ্ধারের জন্য সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। রাতেই সেনাবাহিনীর ২৪ জনের একটি দল খানাকুলে আসে। আজ, সোমবার ভোর ৫টা থেকে উদ্ধারকাজ শুরু হবে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। দামোদরের জলে এই জেলার কিছু এলাকা এবং হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের ৬টি পঞ্চায়েত এলাকাও ডুবেছে। অবস্থা খারাপ হয়েছে অন্যত্রও।

সেচ দফতর সূত্রের খবর, রবিবার দুপুর ১টা থেকে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে ১ লক্ষ ৫৫ হাজার ৭৭৫ কিউসেক হারে জল ছাড়া হয়। তার পরে পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে জল ছাড়া হয় এক লক্ষ ৫১ হাজার ৩৫০ কিউসেক হারে। এই পরিমাণ জল ছাড়ার ফলে আজ, সোমবার হাওড়া-হুগলির বিভিন্ন এলাকার পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

রবিবার সন্ধ্যায় সেচ দফতরের এসডিও (ব্যারাজ) গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ডিভিসি মাইথন ও পাঞ্চেত থেকে এ পর্যন্ত অতিরিক্ত জল ছাড়ার বার্তা দেয়নি। ফলে, এই মুহূর্তে ব্যারাজ থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ আর বাড়বে না বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে, ইতিমধ্যে ব্যারাজ থেকে জল ছাড়ার ফলে হুগলির কিছু এলাকায় প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।’’

বানভাসি কেশপুরের ঝেঁতল্যায় দীপক পাতর (২৪) নামে এক যুবক শনিবার জলে ডুবে মারা যান। রবিবার সকালে ঘাটালের দাসপুরের খুকুড়দহের প্রৌঢ় নারায়ণ দোলুই (৫৫) খালে মাছ ধরতে গিয়ে তলিয়ে যান। স্থানীয়েরা যখন তাঁকে উদ্ধার করেন, তত ক্ষণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। দাসপুরেরই কিসমত নাড়াজোলের রঘুনাথ টুডু (৪১) বাড়ি থেকে জরুরি জিনিসপত্র কিনতে বেরিয়ে জলের তোড়ে ভেসে যান। পরে তাঁর দেহ মেলে। চন্দ্রকোনার মনসাতলা চাতালে জলে তলিয়ে মৃত্যু হয় স্থানীয় দিয়াশা গ্রামের যুবক অভিরাম খামরুইয়ের (৩২)।

জলের প্রবল চাপে শিলাবতীর একাধিক নদীবাঁধ ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। শনিবার সকাল থেকে বাঁধ রক্ষায় প্রশাসনের সঙ্গে সমানে লড়াই চালিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শেষমেশ বাঁধ বাঁচলেও শনিবার গভীর রাতে মহকুমাশাসকের দফতরের প্রাচীর ভেঙে জলের তলায় চলে যায়। ভেসে যায় গোটা ঘাটাল শহর। মহকুমাশাসকের দফতর আপাতত সরিয়ে বিদ্যাসাগর হাইস্কুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জলমগ্ন ঘাটাল উপ-সংশোধনাগার থেকে ৬১ জন বিচারাধীন বন্দিকে মেদিনীপুরে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।

ঘাটালের মহকুমাশাসক সুমন বিশ্বাস বলেন, “প্লাবিত এলাকায় পর্যাপ্ত শুকনো খাবার ও পানীয় জল পাঠানো হচ্ছে। ত্রাণ শিবিরগুলিতে পঞ্চায়েতের তরফে রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে।” বৃষ্টি বন্ধ হলেও কংসাবতী ব্যারাজ জল ছাড়ায় পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নায় কাঁসাইয়ের জলস্তর এখনও বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। দুর্ঘটনা এড়াতে কাঁসাইয়ের সব ফেরিঘাটে যাত্রী পরিষেবা বন্ধ করা হয়েছে।

শনিবার সকালে ডিভিসি ১ লক্ষ ৩০ হাজার কিউসেক হারে জল ছেড়েছিল। সেই জলেই ডুবেছে উদয়নারায়ণপুর। আমতা-চাঁপাডাঙা রোডের অনেকটা অংশ এক কোমর জলের নীচে । ১৯টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। সাড়ে ছ’হাজার মানুষকে সেখানে আনা হয়েছে, জানান উদয়নারায়ণপুরের বিধায়ক সমীর পাঁজা।

ডিভিসি-র জলে ডুবেছে হুগলির জাঙ্গিপাড়া এবং আরামবাগ মহকুমার একাংশও। এই মহকুমার খানাকুল-২ ব্লক ভেসেছে রূপনারায়ণের বাঁধ ভাঙায়। এর আগে তিন জায়গায় দ্বারকেশ্বর নদের বাঁধ ভাঙায় শনিবার জলমগ্ন হয় খানাকুলের দু’টি ব্লকের ৭টি পঞ্চায়েত এলাকা। রাত থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত খানাকুল-২ ব্লকের ধান্যগোড়ি পঞ্চায়েত এলাকায় রূপনারায়ণের একাধিক বাঁধ ভাঙে। ১২-১৩ ফুট জল লোকালয়ে। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী দু’টি স্পিডবোটে খানাকুলের জলবন্দি মানুষদের উদ্ধারে নামে। ব্লক প্রশাসনের হিসেবে, সন্ধে পর্যন্ত প্রায় ১৩০০ মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। মোট ১৭টি ত্রাণ শিবির চালু করা হয়েছে।

নবান্ন সূত্রের খবর, শনিবার রাত থেকে ওই ব্লকের পূর্ব ঠাকুরানিচকের ৩৫টি পরিবারের শ’দুয়েক লোক আটকে। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর বোট তাঁদের উদ্ধারে গিয়েছিল। কিন্তু বোট উল্টে যায়। বাহিনীর সদস্য এবং এলাকার পঞ্চায়েত প্রধান সাঁতরে নিজেদের প্রাণ বাঁচান। এর পরে রবিবার সকালে দু’বার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু জলের তোড়ে ফের উল্টে যায় বোট। ফিরে আসে বাহিনী। রাজ্য সেনার সঙ্গে যোগাযোগ করে। দুর্গতদের উদ্ধারের জন্য রাজ্যের কাছে আবেদন জানান তৃণমূলের জেলা সভাপতি দিলীপ যাদবও। তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে ফোনে কপ্টার পাঠানোর আশ্বাস দেন।

অতিবৃষ্টিতে লাভপুরে কুঁয়ে নদীর বাঁধ ভেঙে শনিবার থেকেই জলমগ্ন কিছু গ্রাম। ব্লক প্রশাসনের হিসেবে প্রায় ৪ হাজার মানুষ জলবন্দি। মুর্শিদাবাদের বড়ঞা ব্লকের একটি অঞ্চলও কুঁয়ে নদীর জলে প্লাবিত। বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত বসিরহাট ও সন্দেশখালির ঘরবাড়ি, পুকুর ভেসেছে। কাঁকসার সিলামপুর এবং বাঁকুড়ার মানা চর প্লাবিত হয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

flood ghatal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy