বিক্রমের বাড়ি-অফিসে নগদ ৩০-৪০ কোটি টাকা আছে বলে খবর ছিল ইডি-র কাছে। ফাইল চিত্র।
গল্পটা ত্রিমূর্তির। বাইরে দুই অংশীদারের নির্মাণ ব্যবসা আর ভিতরে রাজ্যের শাসক দলের এক অতি প্রভাবশালী নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কালো টাকা সাদা করার খেল্ চলত বলে ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের দাবি। তাদের অভিযোগ, কয়লা পাচারের লভ্যাংশ হিসেবে ওই নেতা যে-কালো টাকা পেতেন, নির্মাণ ব্যবসায় বিনিয়োগ দেখিয়ে তা সাদা করা হত ওই নির্মাণ সংস্থায়।
বুধবার বালিগঞ্জের ‘গজরাজ গ্রুপ’ নামে একটি নির্মাণ সংস্থার অফিসে রাতভর তল্লাশি চালিয়ে এক কোটি ৪০ লক্ষ টাকা উদ্ধারের কথা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানিয়েছে ইডি। ওই অফিসের মালিক বিক্রম সাকারিয়া এবং তাঁর হিসাবরক্ষক ও কর্মীদের বুধবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। দিল্লিতে তলব করা হয়েছে বিক্রমকে। মনজিৎ সিংহ গ্রেওয়াল ওরফে জিটি ভাই নামে অন্য এক নির্মাণ ব্যবসায়ী বিক্রমের ব্যবসার সঙ্গী এবং মনজিৎই ওই নেতার কয়লা পাচারের কোটি কোটি সাদা করতেন বলে ইডি-র দাবি। জিটি ভাইয়ের হদিস মেলেনি।
ত্রিমূর্তির কাজকর্ম কী ভাবে চলত, তার একটি দৃষ্টান্ত দিয়ে ইডি সূত্রের দাবি, ‘সালসার অতিথি নিবাস’ নামে শরৎ বসু রোডের ১২ কোটি টাকার একটি সম্পত্তি বুধবার মাত্র তিন কোটি টাকায় বেচে আলিপুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে রেজিস্ট্রি সেরে ফেলা হয়। ওই অফিস থেকে তার সব তথ্য চেয়েছে ইডি। বৃহস্পতিবার ওই অতিথি নিবাসে তল্লাশি চালান তদন্তকারীরা।
বিক্রমের বাড়ি-অফিসে নগদ ৩০-৪০ কোটি টাকা আছে বলে খবর ছিল ইডি-র কাছে। কিন্তু তল্লাশিতে মেলে মাত্র এক কোটি ৪০ লক্ষ। বাকি টাকা আগেই পাচার হয়ে যায় বলে ইডি সূত্রের অভিযোগ। তদন্তকারীদের দাবি, বছর সাতেক আগে বিক্রম ছিলেন সাধারণ এক প্রোমোটার। আর মনজিৎ কালীঘাট ও ভবানীপুর এলাকায় দু’টি ধাবা চালাতেন। ২০১৫ সালে শাসক দলের ওই নেতার সঙ্গে বিক্রম-মনজিতের যোগাযোগের পর থেকেই তাঁদের মাধ্যমে পরপর নির্মাণ ব্যবসা ও ধাবা চালু হতে থাকে। দক্ষিণ কলকাতায় গজরাজ সংস্থার ২০০টি প্রকল্প চলছে। কয়লা পাচারের টাকা তাতে বিনিয়োগ করা হয়েছে। ব্যবসায় ওই নেতা ও বিক্রম-মনজিতের অংশীদারি রয়েছে বলে ইডি-র দাবি।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার টুইটে অভিযোগ করেছেন, ‘মনজিৎ তৃণমূলের হিন্দি সেলের সভাপতি। মাননীয়া কি হিন্দি শেখার জন্য তাঁকে নিযুক্ত করেছেন?’ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ওই ব্যবসায়ীর ছবিও দিয়েছেন তিনি। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী টুইটে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘ভবানীপুর কেন্দ্রের উপনির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচারের দায়িত্বে ছিলেন মনজিৎ। পার্থের (প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়) মতো মনজিতের বিরুদ্ধেও কি ব্যবস্থা নেবেন মুখ্যমন্ত্রী?’’ মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর ভাইয়ের ছবি পোস্ট করেছেন তিনিও।
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘যেখানে হাত দেওয়া হয়, সেখানেই কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা! ইডি যে-প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে ব্যবসায়ীর ঘনিষ্ঠতার কথা বলছে, তিনি কে?’’
শুভেন্দুর বক্তব্য প্রসঙ্গে কলকাতার মেয়র ও মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘পাগলে কী না বলে! ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে আয়কর হানা হয়েছে। সারা দেশেই হচ্ছে। তার সঙ্গে আমাদের হিন্দি সেলের কী সম্পর্ক? বিজেপিতে থাকলে আয়কর, ইডি কেউ ধরে না। তাই ওরা অন্যদের বিরুদ্ধে নানা কথা বলতে পারে!’’ তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘নীরব মোদীর মতো যারা কোটি কোটি টাকা লুট করে দেশ ছেড়েছে, তাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ছবি আছে। সিবিআইয়ের এফআইআরে নাম থাকা শুভেন্দুর পাশে সুকান্তেরা বসে থাকছেন। এগুলির জবাব আগে দিন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy