একটি সচেতনতামূলক সভায় ক্যানসার আক্রান্তেরা। ফাইল চিত্র
চিন এবং আমেরিকার পরেই রয়েছে ভারত। তথ্য বলছে তেমনই। প্রতি বছর দশ লক্ষ নতুন ক্যানসার রোগীর হদিস মেলে এ দেশেই। অবহেলা বা চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু হয় বছরে পাঁচ লক্ষ রোগীর। মহামারি না হলেও কম আতঙ্কের নয় এই পরিসংখ্যান। তাই করোনা-বিপর্যয়ের মধ্যে যেন ক্যানসার রোগীরা অবহেলিত না হন। এমনই আবেদন এ শহরের চিকিৎসকদের বড় অংশের।
করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কের এই পরিবেশে ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসায় অবহেলা অন্য জটিলতা তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন তাঁরা। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে দিন দুয়েক আগেই ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব সার্জিক্যাল অঙ্কোলজি’ (আইএএসও) নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে।
সেই নির্দেশিকা মেনে রোগীদের পরিষেবা দিতে রাজি এ শহরের ক্যানসার চিকিৎসকেরা। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁদের আবেদন, আপৎকালীন পরিস্থিতিতে শহরের কয়েকটি সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালকে শুধু ক্যানসার চিকিৎসার জন্য চিহ্নিত করা হোক।
করোনা সংক্রমণের মাঝে কতটা সুরক্ষিত ক্যানসার রোগীরা? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) তথ্যের ভিত্তিতে ‘আমেরিকান সোসাইটি অব ক্লিনিক্যাল অঙ্কোলজি’ (এএসসিও) বলছে, করোনায় সংক্রমিত প্রতি একশো জন ক্যানসার রোগীর মধ্যে মৃত্যুর হার ৭.৬ শতাংশ। এক জন ক্যানসার রোগীর শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা (ইমিউনিটি) কমে যাওয়ায় তাঁর করোনাভাইরাসে সহজে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই এই ধরনের রোগীদের রাস্তায় না বেরোনো, ঘন ঘন হাত ধোয়া, চোখ-মুখ-নাকে হাত না দেওয়া, সার্বিক পরিচ্ছন্নতায় নজর রাখা, বাড়ির মধ্যেও নিজেকে অন্য সদস্যদের থেকে দূরত্বে রাখার নিয়ম মেনে চলতে পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।চিকিৎসা ক্ষেত্রে ক্যানসার আক্রান্তদের তিন ভাগে ভাগ করা যায়। এক, যাঁদের রোগ নির্ণয় হয়েছে এবং চিকিৎসা চলছে। দুই, যাঁরা চিকিৎসার পর্ব শেষে ফলোআপে রয়েছেন। তিন, যাঁরা চিকিৎসায় আপাতত সুস্থ। এঁরা সাধারণ নাগরিকের মতোই ‘হোম কোয়রান্টিন’-এ থাকবেন।
সম্প্রতি জারি হওয়া নির্দেশিকায় আইএএসও জানাচ্ছে, নতুন উপসর্গ দেখা না দিলে ফলোআপে থাকা ক্যানসার রোগীরা এই মুহূর্তে ক্লিনিক বা হাসপাতালে যাবেন না। নতুন উপসর্গ দেখলে রোগী যে চিকিৎসকের অধীনে রয়েছেন, তাঁর সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ বা ফোনে যোগাযোগ করুন।
নির্দেশিকায় সব থেকে বেশি উদ্বেগ তাঁদের নিয়ে, যাঁদের সদ্য ক্যানসার ধরা পড়েছে বা চিকিৎসা চলছে। রোগ নির্ণয় পর্বে দেরির পক্ষপাতী নয় সংগঠন। বায়োপসি, সিটি স্ক্যানের মতো পরীক্ষা এই সময়ে করে যেতে হবে বলা হয়েছে। লকডাউনের সময়ে ছাড় পেতে স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স বা ব্যক্তিগত গাড়িতে রোগীকে নিয়ে আসতে পারবেন এক জন মাত্র আত্মীয়।
ক্যানসার শল্য চিকিৎসক সৌমেন দাস জানান, চিকিৎসকদের মধ্যে রোগীর পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা করে কিছু অস্ত্রোপচার পিছিয়ে দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে ওরাল কেমোথেরাপি বা ওষুধ দিতে হবে রোগীকে। তাঁর কথায়, “তবে হেড-নেক ক্যানসারে অনেক সময়ে আচমকা শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এ ক্ষেত্রে জরুরি ভিত্তিতে রোগীর ট্র্যাকিয়োস্টোমি করতে হবে। কোলন ক্যানসারের ক্ষেত্রে পেট ফুলে সমস্যা দেখা দিলে জরুরি অস্ত্রোপচার করতেই হবে।” এই জরুরি অস্ত্রোপচারগুলি চালিয়ে যাওয়ার কথা বলছে নির্দেশিকা।
আর এক ক্যানসার শল্য চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, এমনিতেই এই রোগীদের নিয়ে সমাজে খানিকটা অবহেলা থাকেই। এই সময়ে ওঁদের ব্রাত্য করা একেবারেই অনুচিত। তিনি বলেন, “ডাক্তারদের তরফে আমাদের আবেদন, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী কয়েকটি সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালকে জরুরি ভিত্তিতে শুধুমাত্র ক্যানসার চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট করলে বহু রোগী উপকৃত হবেন। এই সময়ে ক্যানসার চিকিৎসায় ছেদের ফলে করোনার পরবর্তীকালে আরও এক মৃত্যু-মিছিল যেন শুরু না হয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy