Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Calcutta High Court

দাড়িভিট মামলা: রাজ্যের সম্মান নষ্ট করেছেন খোদ মুখ্যসচিব! আবার ভর্ৎসনা আদালতের, নির্দেশেও বদল

দাড়িভিট মামলায় এর আগে মুখ্যসচিব-সহ তিন আধিকারিককে সশরীরে হাজিরার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। কিন্তু তাঁরা এখনও হাজিরা দেননি। এতে বিচারপতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা।

কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:৩৬
Share: Save:

দাড়িভিটে গুলিতে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব এবং এডিজি সিআইডির ভূমিকা আবার সমালোচিত কলকাতা হাই কোর্টে। রাজ্য প্রশাসনের ওই তিন উচ্চপদস্থ আধিকারিক রাজ্যের সম্মান নষ্ট করেছেন বলে মন্তব্য করলেন হাই কোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। সেই সঙ্গে এই মামলায় এর আগে তিনি যে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাতে কিছুটা বদলও করলেন। তিন জনকেই পরবর্তী শুনানির দিন ভার্চুয়াল মাধ্যমে আদালতে হাজির থাকতে বলা হয়েছে।

শুক্রবার দাড়িভিট মামলার শুনানি ছিল হাই কোর্টে। এর আগে এই মামলায় মুখ্যসচিব-সহ তিন আধিকারিককে সশরীরে হাজিরার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। কিন্তু তাঁরা এখনও হাজিরা দেননি। এতে বিচারপতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিন আধিকারিকের ভূমিকার সমালোচনাও করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে বিচারপতি জানিয়েছেন, ওই তিন আধিকারিককে হলফনামা দিয়ে নিজেদের বক্তব্য জানাতে হবে।

দাড়িভিট মামলায় মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব এবং এডিজি সিআইডির বিরুদ্ধে রুল জারি করেছিল আদালত। বিচারপতি মান্থার নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চেও ধাক্কা খায় রাজ্য। এনআইএ তদন্তের নির্দেশ বহাল রেখেছে ডিভিশন বেঞ্চও। বহাল রাখা হয়েছে ক্ষতিপূরণের নির্দেশও। তার পর সিঙ্গল বেঞ্চ শুক্রবার আবার তিন আধিকারিকদের হাজিরা দিতে বলল।

শুক্রবার রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্ত হাজিরার নির্দেশ প্রত্যাহার করার আর্জি জানিয়েছিলেন আদালতে। কিন্তু সেই আবেদনে বিচারপতি সাড়া দেননি। এ প্রসঙ্গে বিচারপতি মান্থার মন্তব্য, ‘‘গত শুনানির দিন ওই আধিকারিকদের ভার্চুয়াল মাধ্যমে হাজির থাকতে কে বাধা দিয়েছিল? কোর্টের নির্দেশ মেনে হাজিরা না দেওয়ায় শুধু বিচার ব্যবস্থা নয়, রাজ্যের সম্মানও নষ্ট হয়েছে।’’ বিচারপতির আরও মন্তব্য, ‘‘এটা কারও ব্যক্তিগত বিষয় নয়। একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য খারাপ বার্তা। ওঁরা কেউই নিচু তলার কর্মী নন। রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষে রয়েছেন। তাই ওঁদের কাছ থেকে এটা কাম্য নয়। বড় কিছু না হলে আমরা থানার ওসিকে পর্যন্ত হাজির হওয়ার নির্দেশ দিই না। এই মামলায় বাধ্য হয়েই ওই নির্দেশ দিতে হয়েছিল।’’

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরের দাড়িভিট হাই স্কুল। অবরোধ, লাঠিচার্জ, ইট-পাথর ছোড়া থেকে শুরু করে বোমা-গুলিও চলে বলে অভিযোগ। ওই সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় রাজেশ সরকার এবং তাপস বর্মণ নামে দুই প্রাক্তন ছাত্রের। এই ঘটনায় উত্তাল হয়ে ওঠে রাজ্য রাজনীতি। ছাত্রমৃত্যুর ঘটনার সিবিআই তদন্তের দাবিতে তাঁদের পরিবার এবং এলাকাবাসীর একাংশের আন্দোলনে প্রায় দু’মাস ধরে বন্ধ থাকে দাড়িভিট স্কুল।

পুলিশের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। যদিও পুলিশ ওই অভিযোগ অস্বীকার করে। কলকাতা হাই কোর্ট প্রথমে এই ঘটনায় সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেয়। তবে গত বছর ১০ মে সেই মামলাতেই বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা এনআইএ তদন্ত নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে আর্থিক সাহায্য দিতেও বলেছিলেন বিচারপতি।

মামলাকারীদের অভিযোগ, ১০ মাস কেটে গেলেও হাই কোর্টের নির্দেশ কার্যকর হয়নি। সরকার এখনও কোনও ক্ষতিপূরণ দেয়নি। কোনও সাহায্য পাওয়া যায়নি। এমনকি, এনআইএর হাতে তদন্তের নথিও তুলে দেয়নি সিআইডি। এর পরেই রাজ্য প্রশাসনের তিন উচ্চ পদের আধিকারিকের ভূমিকায় ক্ষোভপ্রকাশ করেন বিচারপতি। তাঁদের আদালতে হাজিরার নির্দেশ দেন। এই মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী সোমবার, ১৫ এপ্রিল। সে দিন ভার্চুয়াল মাধ্যমে তিন জনকেই আদালতে হাজিরা দিতে হবে। সেই সঙ্গে হলফনামা দিয়ে নিজেদের বক্তব্য জানাতে হবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE