কলকাতা হাই কোর্ট। —ফাইল চিত্র।
স্বেচ্ছায় সহবাসের পরে সম্পর্ক পরিণতি না পেলে ধর্ষণের মামলা করা যায় কি না, সেই প্রশ্ন আগেও উঠেছিল। এ বার কলকাতা হাই কোর্টের একটি মামলার রায়েও কার্যত একই কথা প্রতিধ্বনিত হয়েছে।
বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের মামলায় ২০১১ সালে এক ব্যক্তিকে সাত বছর কারাবাসের সাজা দিয়েছিল বাঁকুড়ার দায়রা আদালত। তার বিরুদ্ধে হাই কোর্টে মামলা করেছিলেন সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি। সম্প্রতি সেই মামলায় নিম্ন আদালতের রায় খারিজ করে বিচারপতি অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, অভিযোগকারিণী স্বেচ্ছায় সহবাস করেছিলেন এবং এক জন সাবালিকা হিসেবে তিনি সম্ভাবনা ভুলে গিয়ে বিয়ের প্রতিশ্রুতির ‘ফাঁদে’ পড়তে পারেন না। এ ক্ষেত্রে পুলিশ যে দোষ প্রমাণ করতে পারেনি, সে কথাও বিচারপতি রায়ে উল্লেখ করেছেন।
বাঁকুড়ার এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে এক মহিলা বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের অভিযোগ করেছিলেন এবং পুলিশে জানিয়েছিলেন যে, সহবাসের ফলে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। পরে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। সেই মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তির সাত বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল। হাই কোর্টে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির আইনজীবী মলয় ভট্টাচার্য এবং সুদীপা সেনগুপ্ত জানান যে, সহবাসে সম্মতির কথা মহিলা মেনে নিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী ঘটনাটিকে ধর্ষণ বলে গণ্য করা যায় না। বিয়ের প্রতিশ্রুতির ফলেই মহিলা সম্মতি দিয়েছিলেন, এমন ঘটনাও ঘটেনি। সরকারি আইনজীবী রুদ্রদীপ্ত নন্দী অবশ্য দাবি করেন যে, নিম্ন আদালতে নানা সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতেই দোষ প্রমাণিত হয়েছে। তাই মামলা খারিজ করা হোক।
উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে রায় দিতে গিয়ে বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় সুপ্রিম কোর্টের দু’টি রায়ের উল্লেখ করেছেন। তার একটি মামলায় শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, প্রেমের আবেগে অনেক যুগলই বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ হয় এবং যৌন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু পরবর্তী কালে বাস্তব পরিস্থিতিতে সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা হয় না। এ ক্ষেত্রে বলা যায় না যে, শুধু প্রতিশ্রুতির জন্যই মহিলা যৌন সম্পর্কে জড়িয়েছেন, বরং তিনি প্রেমিককে ভালবেসেই যৌনতাকে বেছেছেন। মনের ভিতরে কোন আবেগ থেকে প্রেমিকা যৌনতায় সম্মতি দিয়েছেন, তা প্রেমিকের পক্ষেও সবসময় বোঝা সম্ভব নয়।
অন্য মামলায় সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, ধর্ষণ এবং সম্মতিমূলক যৌনতায় তফাত আছে। অভিযুক্ত সত্যিই বিয়ে করতে চেয়েছিলেন, না কি মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে যৌনতার সম্মতি আদায় করেছেন, আদালতের তা খুঁটিয়ে দেখা উচিত। শুধু যৌনতার জন্য প্রতিশ্রুতি না দিলে তাকে ধর্ষণ বলা যাবে না। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও অভিযুক্ত কোনও অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে পড়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেননি কি না, তা-ও বিচারের সময়ে দেখা উচিত। সহবাসের সম্মতির কথা মেনে নিলে ধর্ষণের মামলাও করা যাবে না বলে শীর্ষ আদালত জানিয়েছিল।
বাঁকুড়ার মামলায় বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, এখানেও অভিযোগকারিণী নিঃসন্দেহে সহবাসে সম্মত হয়েছিলেন এবং সাবালিকা হিসেবে এই সম্পর্কের সব পরিণতি তিনি জানতেন। অভিযুক্তের সঙ্গে সহবাসের ফলেই যে মহিলা অন্তঃসত্ত্বা হয়েছিলেন, তার প্রমাণও এ ক্ষেত্রে পুলিশ দিতে পারেনি বলে হাই কোর্টের রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy