উত্তর দিনাজপুরের টুটিকাটা হারমা আদিবাসী জুনিয়র গার্লস স্কুলে চাকরি করতেন রায়গঞ্জের বাসিন্দা সংযুক্তা। ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) করোনেশন স্কুলে ইংরেজি বিষয়ে তাঁর নাম সুপারিশ করে। সেই মতো ওই নিয়োগে অনুমতি দেন জেলা স্কুল পরিদর্শক। কিন্তু বাধ সাধেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।
উত্তর দিনাজপুরের টুটিকাটা হারমা আদিবাসী জুনিয়র গার্লস স্কুলে চাকরি করতেন রায়গঞ্জের বাসিন্দা সংযুক্তা রায়। নিজস্ব চিত্র।
১৩ মাসের অপেক্ষার অবসান। এত দিন ধরে যা হয়নি এ বার ৪৮ ঘণ্টায় তা করতে হবে। সোমবার রায়গঞ্জ করোনেশন স্কুলকে এমনই নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ, ওই স্কুলে ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষিকা পদে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নিয়োগ করতে হবে সংযুক্তা রায়কে। এই মামলায় এত দিন তাঁকে চাকরিতে যোগ না দিতে দেওয়ার কারণে করোনেশন হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং তৎকালীন টিচার ইনচার্জের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করে হাই কোর্ট। পূর্ববর্তী নির্দেশ মতো সোমবার তাঁরা আদালতে সশরীরে হাজির ছিলেন।
উত্তর দিনাজপুরের টুটিকাটা হারমা আদিবাসী জুনিয়র গার্লস স্কুলে চাকরি করতেন রায়গঞ্জের বাসিন্দা সংযুক্তা। ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) করোনেশন স্কুলে ইংরেজি বিষয়ে তাঁর নাম সুপারিশ করে। সেই মতো ওই নিয়োগে অনুমতি দেন জেলা স্কুল পরিদর্শক। কিন্তু বাধ সাধেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। টিচার ইনচার্জ স্বপন চক্রবর্তী এবং প্রধান শিক্ষক কালীচরণ সাহা অস্বীকার করেন সংযুক্তাকে নিয়োগ দিতে। তাঁদের বক্তব্য ছিল, ইতিমধ্যে এক জন শিক্ষক ওই বিষয়ে কর্মরত রয়েছেন। যদিও আদালতের সামনে সেই দাবি ভুল প্রমাণিত করেন সংযুক্তা। ওই শিক্ষিকার আইনজীবী অঞ্জন ভট্টাচার্য আদালতকে জানান, ওই পদটি শূন্য রয়েছে। আগে যে শিক্ষক কর্মরত ছিলেন তিনি এক জন জেল ফেরত আসামী। নিজের স্ত্রীকে খুন করেন। দেহটি টুকরো টুকরো করে রাস্তায় ছড়িয়ে দেন। ১০ জন চিকিৎসক ওই টুকরোগুলির ময়নাতদন্ত করেছিলেন। এই খুনের মামলাটি এখনও হাই কোর্টে বিচারাধীন রয়েছে।
আইনজীবীর কাছে বিষয়টি শোনার পর বিস্ময় প্রকাশ করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর মন্তব্য, ‘‘এটা আসলে পৌরুষত্বের আস্ফালন। এক জন খুনিকে চাকরিতে ফিরিয়ে আনতে উদ্যত প্রধান শিক্ষক এবং টিচার ইনচার্জ! অথচ এক মহিলা চাকরির জন্য রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন তাঁকে দেওয়া হচ্ছে না।’’ স্কুলের ওই দুই কর্তার উদ্দেশে বিচারপতি প্রশ্ন, ‘‘জেনে রাখবেন ভারতবর্ষে একটা বিচারব্যবস্থা রয়েছে। কেন এত দিন যোগদান করাননি ওই শিক্ষিকাকে? আপনারা কি জেলা স্কুল পরিদর্শকেরও উপরে? বলার পরও তাঁদের নির্দেশ কেন মানেননি?’’ এর পর স্বপন ও কালীচরণ ভুল স্বীকার করেন। উত্তরে বলেন, ‘‘বিষয়টি বিচারাধীন ছিল তাই নিয়োগ দেওয়া যায়নি। এখন দিতে কোনও অসুবিধা নেই।’’ পরিবর্তে বিচারপতি ধমকের সুরে বলেন, ‘‘বাঙালকে হাই কোর্ট দেখাচ্ছেন? এর আগে এই আদালত নির্দেশ দিয়েছিল, কিন্তু আপনারা তা মানেননি! জানেন এ বার ওই স্কুলে আরও দু’টি পদ খালি হবে। আপনাদের চাকরি কেড়ে নিতে পারি!’’ পর ক্ষণেই শান্ত ভাবে বিচারপতি বলেন, ‘‘সংযুক্তা ম্যাডাম এত দিন কষ্ট করেছেন আর দু’দিন করুন। মাস্টারমশাইরা... এ বার আপনারা দিয়ে দিন। না হলে ফল ভাল হবে না।’’
চাকরি খোয়ানোর ভয়ে মামলাটির প্রথমার্ধের শুনানি শেষে দ্বিতীয়ার্ধে হাই কোর্টের আরও বড় আইনজীবী নিয়োগ করা হয় প্রধান শিক্ষকের তরফে। সেই আইনজীবী বিচারপতিকে অনুরোধ করেন, অতীত সব ভুলে যান। ওই শিক্ষিকাকে এখনই স্কুলে যোগদান করাতে তাঁরা রাজি। সব পদ্ধতি শুরু করা হচ্ছে। এমনকি তিনি যাতে গত এক বছরের বেতন পান সেই ব্যবস্থাও করা হবে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তা মেনে নেন। এবং সেই মতো ওই শিক্ষিকাকে অবিলম্বে চাকরিতে নিয়োগের নির্দেশ দেন। তবে সোমবার মামলাটির নিষ্পত্তি করেনি হাই কোর্ট। আদালতের এই রায়ের পর আনন্দবাজার অনলাইনকে সংযুক্তা বলেন, ‘‘এই রায়ের পর অনেক স্বস্তি পেলাম। ১৩ মাস ধরে কোর্টে দৌড়েছি। আগের স্কুল ছাড়ার পর থেকে কোনও বেতন পায়নি। এক সময় মনে হত আর চাকরিটাও থাকবে না। এখন আদালত সব সমাধান করে দিয়েছে। আইনের প্রতি আশ্বাস, বিশ্বাস বাড়ল। প্রণাম জানাই।’’ অন্য দিকে, এর আগে গত শুনানিতে এই মামলায় কালীচরণ এবং স্বপনের বেতন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট। সেই নির্দেশ এখনও বলবৎ রয়েছে।
প্রসঙ্গত, প্রথমার্ধে কোর্ট রুমে জিন্স আর টি-শার্ট পরে আসায় বিচারপতির ভর্ৎসনার মুখে পড়েছিলেন ওই টিচার ইনচার্জ। বিচারপতির বকুনির চোটে ১০ মিনিটের মধ্যে পোশাকবদল করতে হয় ওই শিক্ষককে। বিচারপতির মন্তব্য করেছিলেন, ‘আপনি এক জন টিচার ইনচার্জ। নৈতিক আচরণ সম্পর্কে আপনি কি অবগত নন? জিন্স আর টি-শার্ট পরে কোর্টে এসেছেন!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy