কলকাতা হাই কোর্ট। —ফাইল চিত্র।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ ঢুকতে পারেনি কেন? যাদবপুরে পড়ুয়ামৃত্যু এবং তার পরবর্তী অচলাবস্থার আবহে এই সংক্রান্ত একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে তা জানতে চাইল কলকাতা হাই কোর্ট। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে উচ্চ আদালতে জনস্বার্থ মামলা করেছিল তৃণমূল। সোমবার মামলাটির শুনানি হয় হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে। প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ এই মামলায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদকে যুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। এর পাশাপাশি পড়ুয়াদের হস্টেলে থাকার কী নিয়ম রয়েছে, তা-ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
জনস্বার্থ মামলাটি করেছিলেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সহ সভাপতি সুদীপ রাহা। সোমবার মামলাকারীর হয়ে সওয়াল করেন আইনজীবী তথা তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। কল্যাণ আদালতে সওয়াল পর্বে বলেন, “প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে মেধাবী ছাত্ররা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখে। অনেক বাবা-মা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্তানদের ভর্তি করে গর্ব বোধ করেন। কিন্তু সেখানে র্যাগিং বড় সমস্যা।” এই প্রসঙ্গেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাঁর সংযোজন, “গত কাল ছাত্র ছিলেন। আগামীকাল তিনি ‘দাদা’ হয়ে গেলেন। ঠিক পাড়ার মাফিয়ার মতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের উদাসীনতার যেন ছাত্রদের মানসিকতায় দাদাগিরি ঢুকে গিয়েছে। দশকের পর দশক ধরে এটা চলছে।’’
দেশের মধ্যে যে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিশিষ্ট স্থান রয়েছে, সে কথা উল্লেখ করে মামলাকারীর আইনজীবী জানান, দেশের মধ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয় চতুর্থ। বিশ্বের মধ্যে ৩৩ বা ৩৪ তম স্থানে রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে কল্যাণ বলেন, “প্রথম বর্ষের বাংলার ছাত্রের মৃত্যুর পরেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি। গ্রাম থেকে মৃত ছাত্রের বাবা-মা এসে এফআইআর করেন। পুলিশ হস্টেলে গেলে গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। পুলিশ কী করবে? এটা ওখানকার নিত্যদিনের ঘটনা। কী ভাবে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের একাংশ এত হিংসাত্মক এবং শৃঙ্খলাহীন হয়ে পড়েছেন? শুধু হস্টেল নয়, সারা ক্যাম্পাস জুড়ে এমনটা হয়।”
প্রধান বিচারপতি তখন জানতে চান, হস্টেলের জন্য কোনও নিয়ম রয়েছে কি না। প্রধান বিচারপতি বলেন, “সাধারণত অনেক কলেজে দেখা যায় প্রতি বর্ষের পড়ুয়াদের জন্য হস্টেলের আলাদা আলাদা ব্লক থাকে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের থাকার নিয়ম কী রয়েছে কর্তৃপক্ষকে তার জবাব দিতে হবে।” কল্যাণ বলেন, “এই মামলা দায়ের হওয়ার পরে কর্তৃপক্ষ বিনা অনুমতিতে প্রবেশের উপর নির্দেশ জারি করেন। কিন্তু সেটাও সম্পূর্ণ নয়। সুপ্রিম কোর্ট এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) একই সঙ্গে বলেছে, রাত ৮টার পরে নতুন পড়ুয়াদের হস্টেলে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। এর পরও এই ঘটনা ঘটল কী ভাবে?”
সওয়াল শুনে প্রধান বিচারপতি কল্যাণের উদ্দেশে বলেন, “আপনাদের অনেক অভিযোগ দেখছি ছাত্রদের প্রতি। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদকে নোটিস দেওয়া হোক। তাদের বক্তব্য ছাড়া শুনানি সম্ভব নয়।” বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য সিসি ক্যামেরা খুলে নিয়েছেন বলেও আদালতে অভিযোগ করেন কল্যাণ। উপাচার্য সিসি ক্যামেরা নিয়ে কী বলছেন, তা জানতে চান প্রধান বিচারপতি। কল্যাণ জানান, উপাচার্য জনপ্রিয় হতে চাইছেন। ক্যাম্পাসে আলোর বন্দোবস্ত নেই বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় আদালতে বলেন, “দুঃখের বিষয় হল র্যাগিং এখন সারা ভারতের অনেক প্রতিষ্ঠানের অঙ্গ হয়ে উঠেছে। এটা এখন সামাজিক যোগাযোগের বাইরে চলে গিয়েছে। আমি মনে করি, এটা একটি উদ্দীপনা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি হয়ে গিয়েছে। পড়ুয়ারা এটা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।” বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পুলিশ ঢুকতে বাধা দিচ্ছে, তা এজির কাছে জানতে চায় আদালত। এজি জানান, পড়ুয়ারাই বাধা দিচ্ছেন।
আদালত নির্দেশে জানায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নকে এই মামলায় যুক্ত করতে হবে। আদালতের পর্যবেক্ষণ, বিশ্ববিদ্যালয় কি কোনও নিয়মাবলী তৈরি করতে পারে না প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের জন্য? তবে একই সঙ্গে আদালত জানায়, এক রাতে সব বদলে যায় না। ‘যাদবপুর ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট’-এ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে যে একাধিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, সেগুলি মানা হয়েছে কি না, কিংবা কোনও অর্ডিন্যান্স বা অধ্যাদেশ আনা হয়েছে কি না, তা জানতে চায় আদালত। দু’সপ্তাহ পর আবার এই মামলার শুনানি হওয়ার কথা।
গত বুধবার হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলাটি করা হয়। এই মামলায় মূলত তিনটি আবেদন জানানো হয়েছিল। এক, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-র নিয়ম মেনে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে, সিসি ক্যামেরা বসাতে হবে। দুই, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বত্র আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। তিন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের জন্য ডিজিটাল পরিচয়পত্র তৈরি করতে হবে এবং বাইরে থেকে কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করলে নাম নথিভুক্ত করে ঢুকতে হবে। গত সোমবারই যাদবপুরকাণ্ডের সূত্র ধরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে র্যাগিংয়ের বিষয়ে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন আইনজীবী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়। মামলা দায়েরের অনুমতি দেয় আদালত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy