Advertisement
E-Paper

‘অন্যদের প্রতি সুবিচার করেছেন?’ উলুবেড়িয়ার বিডিওকে ভর্ৎসনা কোর্টের, মামলা ফিরল একক বেঞ্চেই

পঞ্চায়েত নির্বাচনে উলুবেড়িয়া ১-এর সিপিএম প্রার্থী কাশ্মীরা বেগম খানের ব্যালট পেপার ষড়যন্ত্র করে বদলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল নীলাদ্রির বিরুদ্ধে। এ নিয়ে হাই কোর্টে মামলা করেন কাশ্মীরা।

representational image

কলকাতা হাই কোর্ট। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২৩ ০৭:৪৪
Share
Save

ভরা আদালতে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা। তিনি হাওড়ার উলুবেড়িয়ার একটি ব্লকের উন্নয়ন আধিকারিক (বিডিও) নীলাদ্রিশেখর দে।

কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি প্রশ্ন করলেন, কেন এসেছেন আদালতে?

নীলাদ্রি জানালেন, সুবিচার চাইতে এসেছেন।

প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি অপূর্ব সিংহ রায়ের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘আপনি কি অন্যদের প্রতি সুবিচার (জাস্টিস) করেছেন, যে আজ নিজে সুবিচার চাইছেন? সংবিধান আপনাকে বিশ্বাস করে দায়িত্ব দিয়েছিল। তা আপনি পালন করেননি। আপনি শপথ নিয়েছিলেন (চাকরিতে যোগ দেওয়ার সময়ে)। তা রক্ষা করা কি আপনার কর্তব্য নয়? আপনার বিরুদ্ধে প্রতারণার (চিটিংয়ের) অভিযোগ রয়েছে।’’

সম্প্রতি সমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনে উলুবেড়িয়া ১-এর সিপিএম প্রার্থী কাশ্মীরা বেগম খানের ব্যালট পেপার ষড়যন্ত্র করে বদলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল নীলাদ্রির বিরুদ্ধে। এ নিয়ে হাই কোর্টে মামলা করেন কাশ্মীরা। বিচারপতি অমৃতা সিংহ বিষয়টি নিয়ে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন। তার বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে যান নীলাদ্রি। ডিভিশন বেঞ্চ অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি দেবীপ্রসাদ দে-র নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গড়ে দেয়। সেই কমিটি রিপোর্ট পেশ করে বিচারপতি সিংহের কাছে। ওই রিপোর্টে বিডিও, সংশ্লিষ্ট মহকুমাশাসক (এসডিও) শমীক কুমার ঘোষ এবং আর এক সরকারি অফিসারকে সাসপেন্ড করার সুপারিশ করা হয়। তার ভিত্তিতে ওই তিন অফিসারকে অবিলম্বে সাসপেন্ড করার নির্দেশ দেন বিচারপতি সিংহ।

এই নির্দেশের বিরুদ্ধে ‘সুবিচার’ চেয়ে মঙ্গলবার হাই কোর্টে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হন নীলাদ্রি। বেঞ্চের অন্য বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, ‘‘অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি দেবীপ্রসাদ দে-র নেতৃত্বাধীন কমিটির পেশ করা রিপোর্টকে কেউ চ্যালেঞ্জ করেনি। আদালত নিজে গিয়ে তদন্ত করে না। তাই এই কমিটির রিপোর্টের উপরেই আমরা ভরসা করব। এটা আবার সিঙ্গল বেঞ্চে পাঠাব। আপাতত একক বেঞ্চের রায়ে হস্তক্ষেপ করব না।’’

আইনজীবীদের মতে, এর ফলে সাসপেনশন এড়াতে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়া ছাড়া প্রশাসনের ওই কর্তাদের আর কোনও রাস্তা খোলা রইল না। কারণ, এ দিন বিডিও-র করা মামলা কার্যত খারিজই করে দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। এখন বিডিও-র বক্তব্য শুনে বিচারপতি সিংহই চূড়ান্ত রায় দেবেন।

বিডিও-র আইনজীবী বিশ্বরূপ ভট্টাচার্য এ দিন আদালতে মক্কেল যাতে ঠিক বিচার পান, তার আর্জি জানিয়েছিলেন। আইনজীবীর দাবি, নির্বাচনে যে নিয়ম রাজ্য নির্বাচন কমিশন তৈরি করে দিয়েছিল, সব কিছুই তা মেনে হয়েছে। নীলাদ্রিকে আপাতত সুরক্ষা দেওয়া হোক। যাতে তাঁর চাকরিতে প্রভাব না পড়ে। আইনজীবীর অভিযোগ, প্রাক্তন বিচারপতির নেতৃত্বাধীন কমিটির উপরে তদন্তের নির্দেশ ছিল। শুধু সেই রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে নীলাদ্রিকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তাঁর কথা শোনা হয়নি।

এ দিন আদালতে নীলাদ্রির বক্তব্য, কোনও প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিলের অধিকার তাঁর নেই। তিনি শুধু স্ক্রুটিনিতে অংশ নিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘উলুবেড়িয়া-১ এর প্রার্থী আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। কিন্তু আমি কমিশনের নির্দেশেই কাজ করেছি।’’

এ দিনই মুর্শিদাবাদের বেলডাঙ্গা-২ নম্বর ব্লকের কাশীপুর পঞ্চায়েতের দু’টি নির্বাচনকেন্দ্রে ভোটের দিনের সিসিটিভি ফুটেজ উধাও হওয়া নিয়ে হাই কোর্টে অভিযোগ জানান নাসিমা বিবি নামে এক প্রার্থী। তাঁর অভিযোগ, সেখানে বেআইনি ভাবে পুনর্নির্বাচনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই মামলায় বিচারপতি সিংহ প্রশ্ন তোলেন, কিসের ভিত্তিতে সেখানে আবার ভোট করার নির্দেশ দেওয়া হল? সিসিটিভি ফুটেজ বা ভিডিয়ো না দেখে কী করে আবার কি নির্দেশ দিলেন স্থানীয় প্রশাসন? ৮ জুলাই ফুটেজ উধাও হয়ে যাওয়ার পরেও কেন ১২ জুলাই অভিযোগ জানানো হল, এ দিন সেই প্রশ্নও তুলেছেন বিচারপতি। বিডিও-র উদ্দেশে বিচারপতি সিংহ যখন এই প্রশ্ন করেন, তখন সেখানে সেই বিডিও অংশুমান দত্ত উপস্থিত ছিলেন। বিডিও-র জবাব ছিল, যে বেসরকারি সংস্থাকে ওই সিসিটিভির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তারা সেই ফুটেজ পুনরুদ্ধারের কাজ করছিল। তাই অভিযোগ জানাতে সময় লেগেছিল।

মামলাকারীর আইনজীবী শামিম আহমেদের অভিযোগ, পঞ্চায়েত ভোটের দিন বিরোধী দলের এজেন্ট এমনকি পোলিং অফিসারদেরও বুথ থেকে বার করে দিয়ে অবাধে ছাপ্পা চলে। তাতে তৃণমূলের প্রার্থী জিতে যান। একেই চ্যালেঞ্জ করে সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে চান নাসিমা। তাঁকে জানানো হয়, সেই ফুটেজ উধাও হয়ে গিয়েছে। বিচারপতি সিংহের নির্দেশ, এই বিষয়টি হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে বিডিও-কে। ওই বুথের প্রিসাইডিং অফিসারকেও এই মামলায় যুক্ত করতে হবে। বোর্ড গঠন হলেও, তার ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে এই মামলার রায়ের উপরে। ৩০ অগস্ট এই মামলার পরবর্তী শুনানি হওয়ার কথা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

SDO BDO West Bengal Panchayat Election 2023

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}