মুর্শিদাবাদের অশান্তির ঘটনায় এনআইএ তদন্তের নির্দেশ দিল না কলকাতা হাই কোর্ট। বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি রাজা বসুচৌধুরীর ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, এনআইএ তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত তথ্য মামলাকারীরা কোর্টে পেশ করতে পারেননি। তবে কেন্দ্র আইনি অধিকার বলে এই তদন্তের নির্দেশ দিতে পারে। এর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য একটি তিন সদস্যের কমিটি তৈরি করে দিয়েছে আদালত। তাতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এক প্রতিনিধি, রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের এক প্রতিনিধি এবং রাজ্য আইনি সহায়তা কর্তৃপক্ষের সদস্য-সচিব থাকবেন। তাঁরা পুরো প্রক্রিয়ায় নজরদারি করবেন।
হাই কোর্টের ওই ডিভিশন বেঞ্চ আরও জানিয়েছে, মুর্শিদাবাদের উপদ্রুত এলাকায় আপাতত কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে। কেন্দ্র প্রয়োজনে অতিরিক্ত বাহিনী পাঠাতে পারবে। ওই এলাকায় শান্তিরক্ষায় এবং নাগরিকদের নিরাপত্তায় রাজ্যকে যথাযথ পদক্ষেপ করতে বলেছে কোর্ট। আদালতের কথায়, শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং আক্রান্তদের পুনর্বাসন আপাতত অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। রাজ্যকে আক্রান্তদের খাবার এবং আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। জনপ্রতিনিধিদের উস্কানিমূলক এবং বিদ্বেষমূলক কথা বলা থেকেও বিরত থাকতে বলেছে আদালত।
মুর্শিদাবাদের গোলমালে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার আর্জি জানিয়ে হাই কোর্টে মামলা করেছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শনিবার বিচারপতি সেন এবং বিচারপতি বসুচৌধুরীর ডিভিশন বেঞ্চ জরুরি ভিত্তিতে মামলা শুনে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দেয়। শান্তিশৃঙ্খলা নিয়ে রাজ্য এবং কেন্দ্রের রিপোর্টও তলব করে। এ দিন কেন্দ্র এবং রাজ্য রিপোর্ট জমা দেয়। কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল অশোককুমার চক্রবর্তী জানান, ১৭ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন আছে। কিছু এলাকা অতিমাত্রায় সংবেদনশীল। কেন্দ্রীয় বাহিনী যাতে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারে, সেই নির্দেশের আর্জি
জানান তিনি।
এ দিন মামলাকারীদের অন্যতম আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্য আবেদন করেন, বিস্ফোরক আইন অনুযায়ী এনআইএ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হোক। মুর্শিদাবাদের ঘটনা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বলেও তাঁর দাবি। রাজ্যে এমন ঘটনার আরও উদাহরণ তুলে ধরেন তিনি। মামলাকারীদের আরও এক আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালের দাবি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকেও তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হোক। এনআইএ-র আইনজীবী অরুণকুমার মোহান্তি কোর্টে জানান যে, কেন্দ্র অথবা হাই কোর্ট নির্দেশ না দিলে তাঁরা তদন্তে নামতে পারেন না। যদিও বিচারপতি সেনের মন্তব্য, ‘‘সব কিছু কোর্টের উপরে ছেড়ে দেবেন না। নিজেদের কাজ করুন।’’
রাজ্যের কৌঁসুলি কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাল্টা দাবি, মামলাকারীদের আইনজীবীরা কোর্টে রাজনৈতিক বক্তব্য পেশ করছেন। গোলমাল থামাতে এবং তদন্তে রাজ্য পুলিশ সক্রিয়। বিভিন্ন এলাকা থেকে বাহিনী পাঠানো হয়েছে। ভুয়ো খবর ছড়ানো সমাজমাধ্যমের অ্যাকাউন্টগুলি চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রায় ছ’শো জন গ্রেফতার। ডিআইজি (মুর্শিদাবাদ)-এর নেতৃত্বে সিট তৈরি করা হয়েছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)