ভোটের হাওয়া এমনিই ছিল ঝিমিয়ে। তার উপরে নোট-বিতর্কে গোটা দেশ তোলপাড়! সেই বিতর্কের ছায়াতেই তৈরি হচ্ছে রাজ্যের তিন কেন্দ্রে উপনির্বাচনের রাজনৈতিক সমীকরণ।
উপনির্বাচন মানেই সচরাচর শাসক দলের বাড়তি সুবিধা থাকে। কয়েক মাস আগে বিধানসভা ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিপুল সাফল্যের পরে রাজ্যে বিরোধী রাজনীতির যা হাল হয়েছে, তাতে কোচবিহার, তমলুক বা মন্তেশ্বর— কোথাওই দুশ্চিন্তার কোনও কারণ দেখছে না তৃণমূল। বিরোধীদের লড়াই মূলত বিধানসভা ভোটের চেয়েও বেহাল দশায় যাতে না পড়তে হয়, সেটুকুই নিশ্চিত করা। এবং সেই লড়াইয়ের মধ্যেও স্পষ্ট হয়ে উঠছে ফের সেই মেরুকরণের রাজনীতি।
বস্তুত উপ নির্বাচনের নির্ঘন্ট ঘোষণা হওয়ার পরেই মমতা তাঁর দলের বৈঠকে জোর দিয়েছিলেন বিজেপি-র মোকাবিলার উপরে। নরেন্দ্র মোদী নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর আরও তীব্র কেন্দ্র-বিরোধিতার পথে নেমেছেন তৃণমূল নেত্রী। বিজেপি-বিরোধী রাজনৈতিক পরিসর দখলের চেষ্টায় দৌড়েছেন দিল্লিতে। এ ব্যাপারে অন্য আঞ্চলিক দলের পাশাপাশি সঙ্গে নেওয়ার ডাক দিয়েছেন কংগ্রেস এবং এমনকী, সিপিএমকেও! মমতার যে কৌশল থেকে স্পষ্ট— রাজ্যে কংগ্রেস বা সিপিএমকে তিনি এখন উপযুক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করছেন না! বিজেপি-বিরোধিতার রাশ নিজের হাতে নিয়ে বাকি দুই বিরোধী দলকে নিজের লেজুড় করে দেখাতে চাইছেন মাত্র!
মমতার এই কৌশল ধরে ফেলেই বিধান ভবন এবং আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের নেতারা বলছেন, সচেতন ভাবেই দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে লড়াইটা শুধু তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপি-র। একে অপরের স্বার্থে দু’দল মেরুকরণের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে চাইছে। সেই কারণেই মোদীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মমতার নেতৃত্ব স্বীকার করতে এ রাজ্যের কংগ্রেস ও সিপিএম নেতাদের প্রবল আপত্তি। সারদা ও নারদার প্রসঙ্গ টেনে তাঁরা বলছেন, কালো টাকার বিরুদ্ধে লড়াই আর যে-ই হোক, মমতা করতে পারেন না!
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী যেমন বলছেন, ‘‘কংগ্রেস কালো টাকা উদ্ধারের পক্ষে। কিন্তু যে ভাবে সারদা থেকে নারদার কালো টাকা সাদা করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী আন্দোলনে নেমেছেন, আমরা সরাসরি তার বিরুদ্ধে।’’কেবল কালো টাকা নয়, জাল টাকার রমরমার জন্যও মুখ্যমন্ত্রীকে দায়ী করে অধীরবাবুর অভিযোগ,‘‘যদি দেশে ১০০টা জাল টাকা ঢোকে, তার মধ্যে ৮০টা ঢুকছে বাংলাদেশ থেকে। আর সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাজ্য থেকে গরু পাচার বাড়ছে। মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মমতা কোনও ব্যবস্থাই নিতে পারেননি।’’প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যও বলেন,‘‘তৃণমূলের সঙ্গে এ ব্যাপারে কংগ্রেসের প্রতিবাদের ভাষার ফারাক রয়েছে। আমরা কালো টাকা উদ্ধারের পক্ষে। কিন্তু মোদীর সিদ্ধান্ত যে ভাবে মানুষকে বিপদে ফেলেছে, তার বিরুদ্ধে।’’
তৃণমূল-বিজেপি’র আঁতাঁতের অভিযোগ এনে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমেরও মন্তব্য, ‘‘সারদা-নারদার কেলেঙ্কারি তৃণমূল নেত্রী আড়াল করেছেন বিজেপি-কে ধরে। নারদা-কাণ্ডে সংসদের নীতি সংক্রান্ত কমিটি আর বৈঠকও ডাকেনি! এখন মমতা বিপদে পড়ে সিপিএমের নম্বর ডায়াল করছেন! আমরা বলছি, দুঃখিত! এটা রং নাম্বার!’’ তমলুকের প্রচারে গিয়েই সেলিম বলে এসেছেন, ‘‘ভূতের মুখে রাম নাম, দিদির মুখে সীতারাম!’’
সুব্রত বক্সী, শুভেন্দু অধিকারীরা অবশ্য উপনির্বাচনে মমতার সরকারের উন্নয়নকেই হাতিয়ার করতে চাইছেন। তাঁদের সহজ কথা, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে তৃণমূলকেই জেতাতে হবে। সেই সঙ্গে চুটিয়ে বিজেপি-কে নিশানা করছেন তাঁরা। নোট বাতিলকে ঘিরে মানুষের হয়রানি বাড়তি রসদ দিয়েছে তৃণমূল নেতাদের হাতে।
এ সব দেখে মজাই পাচ্ছে বিজেপি! কোচবিহারে গেরুয়া শিবিরের প্রভাব বাড়লেও সে ভাবে দেখলে তিন কেন্দ্রের কোথাওই বিজেপি-র সংগঠন তেমন আহামরি নয়। কিন্তু মমতা এবং বিরোধী কংগ্রেস-বামের বক্তব্যে বিজেপি-ই ‘স্বীকৃতি’ পেয়ে যাচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে! দলের রাজ্য নেতা ও প্রাক্তন বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্যের গলায় স্বস্তি, ‘‘একটা ক্ষুদ্র অংশ ছাড়া দেশের বৃহত্তর অংশের মানুষ প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। এই রাজ্যেও এর প্রতিক্রিয়া হয় আমাদের পক্ষে যাবে, নয়তো বিপক্ষে। কিন্তু এখানে আমাদের বাদ দিয়ে এখন আর রাজনীতি হবে না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy