বাস পরিষেবা ব্যাহত হওয়ায় যাত্রীদের দুর্ভোগ। —নিজস্ব চিত্র।
রোজকার মতো সকাল থেকেই বাড়তে শুরু করেছিল ভিড়। রোদের মধ্যে লম্বা লাইনে অপেক্ষারত অফিসযাত্রীরা। অথচ, স্ট্যান্ডে বাসের দেখা নেই! বেলা বাড়তেই দীর্ঘ হয়েছে নিত্যযাত্রীদের লাইন। শুক্রবার ধর্মতলায় তৃণমূলের ২১ জুলাইয়ের সমাবেশের আগে এটাই ছিল হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন বাস টার্মিনাসের চিত্র।
প্রত্যেক দিনের মতো সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যেই হাওড়া বাসস্ট্যান্ডে এসে পৌঁছেছিলেন হুগলির চুঁচুড়ার বাসিন্দা কণাদ রায়। সল্টলেক সেক্টর ফাইভে তাঁর অফিস। কিন্তু পৌনে ১১টা নাগাদও তাঁকে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে বাসস্ট্যান্ডে। ক্ষোভ উগরে দিয়ে কণাদ বলেন, ‘‘১১টার মধ্যে অফিস ঢোকার কথা। কত ক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি! কোনও বাস নেই। কী ভাবে অফিস পৌঁছব, বুঝতে পারছি না।’’
দীর্ঘ ক্ষণ বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থেকে যাঁরা খোঁজ করতে গিয়েছিলেন, তাঁদের কেউ কেউ জানতে পেরেছেন, বুধবার রাত থেকেই নাকি বাসের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে! ব্যান্ডেল থেকে আসা রানা মজুমদারের কথায়, ‘‘সওয়া এক ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। কয়েক জন মিলে এক বার জিজ্ঞেস করতে গিয়েছিলাম, আদৌ বাস আসবে কি না। বলল, গতকাল থেকেই বাস নেই। অধিকাংশ সরকারি বাসই নাকি তুলে নেওয়া হয়েছে। খুব কম বাস চলছে। এ ভাবে চলতে পারে নাকি!’’
টার্মিনাসে বাস পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের সূত্রে জানা গিয়েছে, একুশে জুলাইয়ের সমাবেশে যোগ দিতে উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রচুর কর্মী-সমর্থকেরা আসছেন। সরকারি বাসে করেই তাঁদের বিভিন্ন শিবিরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এক কর্মীর কথায়, ‘‘এক দল যাচ্ছে কলকাতার সেন্ট্রাল পার্কে। আর এক দল যাচ্ছে উত্তীর্ণ বা ক্ষুদিরাম স্টেডিয়ামে। শুক্রবার হয়তো ওই বাসে করেই কর্মী-সমর্থকদের ধর্মতলায় নিয়ে যাওয়া হবে।’’ এই পরিস্থিতিতে দীর্ঘ ক্ষণ বাসের লাইনে দাঁড়িয়ে রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন নিত্যযাত্রীরা। মসাগ্রাম থেকে আসা বিতান ঘোষ বলেন, ‘‘আমাদের কাজকর্ম নেই নাকি! অফিস যাব না? বিকল্প ব্যবস্থা তো রাখবে।’’ যাত্রী-সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায়। তিনি বলেন, ‘‘এই অসুবিধার জন্য যাত্রীদের কাছে ক্ষমা চাইছি। বড় রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে এক দিনের জন্য বাস তুলে নেওয়া হয়েছে।’’
শুধু সরকারি বাসই নয়, ঝেঁটিয়ে তুলে নেওয়া হয়েছে বহু বেসরকারি বাস। যার ফলে যাত্রীদের ভোগান্তি আরও বেড়েছে। এবং শুধু কলকাতা বা হাওড়া নয়, হুগলি, দুই ২৪ পরগনার দূরবর্তী এলাকাগুলিতেও একই পরিস্থিতি। অভিযোগ, সদ্য শেষ হওয়া পঞ্চায়েত ভোটের পরেই এই সমাবেশ এসে পড়ায় বহু জেলায় দলের ছোট-বড় নেতারা বাড়তি উৎসাহে নিজেদের মতো করে বাসের দাবি জানাচ্ছেন। এই টানাপড়েনের মীমাংসা হওয়ার আগেই কেউ কেউ আবার রাস্তায় বাস আটকে নিজেদের ‘জিম্মায়’ রেখে দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ। দূরপাল্লার বাস নিয়ে পরিস্থিতি এমন জায়গায় গিয়ে ঠেকেছে যে, এ নিয়ে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীর কাছে নালিশ জানাতে হয়েছে ‘অল বেঙ্গল বাস-মিনিবাস সমন্বয় সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায়কে। পরে মন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সমস্যা মেটে বলে খবর। বাস নিয়ে মালিকদের টানাপড়েনের মুখে পড়তে হয়েছে দুই মেদিনীপুর জেলা এবং বাঁকুড়ার একাংশেও।
সমাবেশের আগের দিন যদি এই পরিস্থিতি হয়, তা হলে সমাবেশের দিনে কী হবে, তা ভেবেই আশঙ্কিত অনেকে। কলকাতা লাগোয়া রুটগুলিতে সমাবেশের দিন পরিষেবা আংশিক সচল রাখতে চাইলেও সেটা কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে সন্দিহান বাসমালিকেরাও। বাসমালিক সংগঠন সূত্রে খবর, শুক্রবার বিটি রোড, দমদম, নাগেরবাজার, নিউ টাউন, গড়িয়াহাট, ডায়মন্ড হারবার রোডের বিভিন্ন বাস রুটে কার্যত বাস চলবে না। খুবই অল্প সংখ্যায় বাস চলতে পারে ইএম বাইপাস, সল্টলেক, সোনারপুর-সহ কিছু রুটে। বিকেলের দিকে সমাবেশ মিটে গেলে, কিছু বাস রাস্তায় নামানো হতে পারে। কিন্তু তখন বাস চালানোর জন্য আদৌ কর্মী পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন বাসমালিকদের একাংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy