ফাইল চিত্র।
৫০% যাত্রী নিয়ে বাস চালানোর নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য। কিন্তু ডিজেলের দাম যেখানে লিটার প্রতি ৯৩ টাকা, সেখানে জ্বালানি-খরচ সামলে বাস চালানো সম্ভব নয় বুঝে অনেকে নিয়ম ভাঙছেন। দূরপাল্লার বাস ছাড়া, অনেক মালিক ডিজেলের বদলে কেরোসিনে বাস চালাচ্ছেন বলে জানা গিয়েছে।
বর্ধমান শহর, মেমারি, গুসকরা থেকে কাটোয়া—সর্বত্র এক ছবি। অল্প দূরত্বের রাস্তায় কেরোসিনের সঙ্গে মোবিল মিশিয়ে বাস-মিনিবাস চালাচ্ছেন অনেকে। প্রভাব পড়ছে পরিবেশে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিদ অপূর্বরতন ঘোষ বলেন, ‘‘কেরোসিনে ডিজেলের তুলনায় শৃঙ্খলিত হাইড্রোকার্বন বেশি থাকে। ফলে, অসম্পূর্ণ দহন হয়। এতে কার্বন মনোক্সাইড ও ধূলিকণা বেশি হয়। এর ঘনত্ব এতটাই বেশি, যে মাটির ছ’-আট ফুটের উপরে উঠতে পারে না। পুরোটাই শরীরে ঢোকে। তাতে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়া, ফুসফুসের ক্ষতি, চর্মরোগ দেখা দিতে পারে। সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়াও ব্যাহত হয়।’’
বর্ধমান-আরামবাগ, বর্ধমান-কাটোয়া রুটের একাধিক বাসমালিকের দাবি, ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি সামলাতে প্রতিদিন যত যাত্রীর প্রয়োজন, তার দশ ভাগের এক ভাগও হচ্ছে না। যাত্রী পিছু ভাড়া বেশি নিয়েও খরচ তোলা যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে কেরোসিনে বাস চালাতে হচ্ছে। তাঁদের দাবি, এক লিটার ডিজেলে একটি বাস গড়ে তিন-সাড়ে তিন কিলোমিটার চলে। সেখানে কেরোসিন দিলে বাস গড়ে আড়াই-তিন কিলোমিটার যাবে। ডিজেলের থেকে কেরোসিনের দাম অনেকটা কম হওয়ায় বাস চালানো ‘লাভজনক’ হচ্ছে। এক বাসমালিক বলেন, ‘‘৫০ কিলোমিটার বাস কেরোসিনে চালালে ডিজেলের থেকে প্রায় ১,২০০ টাকা কম লাগছে।’’
সাধারণ সময়ে ডিজেলের থেকে কেরোসিনের দাম খোলা বাজারে ২০ টাকা কম থাকে। এখন বর্ধমান শহরে কেরোসিন মিলছে প্রতি লিটারে ৬৭-৭৫ টাকার মধ্যে। মেমারি ও গুসকরাতে ৬৭ টাকা, কাটোয়ায় কেরোসিনের প্রতি লিটারের দাম ৭২ টাকা।
খোলা বাজারে কেরোসিন মিলছে কী ভাবে? বাসমালিকদের দাবি, বিভিন্ন জায়গায় ‘এজেন্ট’ রয়েছে। তাঁরা গ্রাম বা শহরে বাড়ি-বাড়ি গিয়ে কেরোসিন কেনেন। সেটাই বাসমালিক, ভাড়ার গাড়ি চালকদের কাছে চড়া দামে বেচেন। অটোমোবাইল বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, কেরোসিন দিয়ে গাড়ি চালালে যন্ত্রের ক্ষতি ছাড়াও, ইঞ্জিনে আগুন ধরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বাসের তেল সরবরাহের পাম্পেরও ক্ষতি হয়। তবে এক বাসমালিকের দাবি, ‘‘যে ফুয়েল পাম্প তিন বছর চলার কথা, সেটা ছ’মাস পরে ঠিক করতে হয়। ১৫ হাজার টাকা মতো খরচ হয়। ৪০ হাজার টাকায় ইঞ্জিনও ঠিক করতে হয়। কিন্তু কেরোসিনে বাস চালিয়ে যে লাভ হয়, তাতে যন্ত্রাংশ খারাপ হলে গায়ে লাগে না। ইঞ্জিন পানাগড়ে বিক্রিও করা যায়।’’
কিন্তু এই প্রবণতা বন্ধ না হলে পরিবেশের ক্ষতি আটকানো যাবে না। জেলার বাসমালিক সমিতির এক কর্তার দাবি, ‘‘এখন বাসমালিকদের বাঁচার লড়াই। সেখানে পরিবেশ দূষণের কথা বললে কেউ শুনবেন না। ডিজেলের দাম না কমলে এই প্রবণতা বাড়বে।’’ তবে দিনে ২০০-২৫০ কিলোমিটার যাতায়াত করা বাসগুলি কেরোসিনে চালানোর ঝুঁকি নেবেন না মালিকেরা, দাবি তাঁর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy