বাসের অপেক্ষায় যাত্রীরা। সোমবার এয়ারপোর্ট ১ নম্বরে। ছবি: সুমন বল্লভ
সারা রাজ্যে ছ’হাজার বেসরকারি বাস বেছে নিয়ে তাদের সরকারি অনুদান (১৫ হাজার টাকা করে তিন মাস) দেওয়ায় সায় নেই কোনও বাসমালিক সংগঠনেরই। এ যাবৎ সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করে চলা বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেট এবং অল বেঙ্গল বাস মিনিবাস সমন্বয় সমিতিও সোমবার সেই সব বাস চিহ্নিতকরণের দায় নিতে না-চাওয়ায় ঝুলেই রইল বাস সমস্যার সমাধান। ফলে অফিসের সময়ে বাস না পাওয়া, স্বাস্থ্যবিধি শিকেয় তুলে বাসে ঝুলে যাওয়া, বাসস্টপে দীর্ঘক্ষণ হা পিত্যেশ—আজ সোমবারের এই মহাদুর্ভোগ আগামী কয়েক দিনেও থাকবে বলেই আশঙ্কা।
আজ, মঙ্গলবার পরিবহণ দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা ছিল কয়েকটি বাস মালিক সংগঠনের। কিন্তু বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেট এবং বাস-মিনিবাস সমন্বয় সমিতি সোমবারই জানায়, অনুদান স্থায়ী সমাধান নয়। পাশাপাশি বাস মালিকদের এ ভাবে বেছে নেওয়া সম্ভব নয়। ফলে আজকের বৈঠক ভেস্তে গিয়েছে। বাসমালিকদের এই অনড় অবস্থানে অসন্তুষ্ট নবান্ন। প্রশাসন সূত্রের খবর, অনুদানের অঙ্ক নতুন করে বাড়ানো হবে না এবং প্রয়োজনে বাসমালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পিছপা হবে না রাজ্য।
যদিও বাস মিনিবাস সমন্বয় সমিতির রাহুল চট্টোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘সারা রাজ্যের মধ্যে ৬ হাজার বাস (রাজ্যে চলে প্রায় ২৬ হাজার বেসরকারি বাস-মিনিবাস) এ ভাবে বেছে নেওয়া অসম্ভব। পরিবহণমন্ত্রী আমাদের সমস্যার কথা মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। তাতে প্যাকেজের ঘোষণা হয়েছে। কিন্তু আমরা স্থায়ী সমাধান চাই।’’ বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক টিটু সাহা এ দিন বলেন, ‘‘খাদের কিনারায় রয়েছেন বাসমালিকরা। সরকারকে স্থায়ী সমাধান ভাবতে হবে। না হলে গণপরিবহণ অচল হয়ে যেতে পারে।’’ প্রসঙ্গত, আজ কলকাতা ও শহরতলি মিলিয়ে দু’হাজার বেসরকারি বাস-মিনিবাস এবং ১৬০০ সরকারি বাস চলেছে। যেখানে গত সপ্তাহেও আড়াই হাজার বেসরকারি বাস পথে নেমেছিল।
আরও পড়ুন: আজ মোদীর ভাষণ, বুধবার থেকে দেশে শুরু আনলক-২
এ দিকে, ভাড়া বৃদ্ধির প্রশ্নে অনড় বাসমালিকদের একাংশ বাস না নামানোয় সোমবার ভোগান্তির মুখে পড়তে হল যাত্রীদের। অনেক জায়গাতেই সরকারি বাসে ওঠার জন্য যাত্রীদের হুড়োহুড়ি করতে দেখা গিয়েছে। পরিবহণ দফতর বাড়তি তৎপর হলেও বারাসত থেকে কলকাতাগামী বিভিন্ন রুট ছিল অচল। বাস সচল করা নিয়ে জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটের সদস্যদের সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের এ দিন বচসার উপক্রম হয়। প্রশাসন বাস রাস্তায় নামানোর চেষ্টা করলে বাসমালিকদের একাংশ পথ অবরোধও করেন। জয়েন্ট কাউন্সিলের স্থানীয় নেতৃত্ব অলক বিশ্বাস বলেন, ‘‘ডিজেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে জেলার পরিবহণ আধিকারিককে জানিয়েছি, বর্ধিত ভাড়া ছাড়া আমরা বাস চালাতে অপারগ।’’ পরিস্থিতি সামাল দিতে আজ, মঙ্গলবার বারাসত থেকে হাওড়া রুটে সরকারি বাস চলবে।
আরও পড়ুন: হিসেব না-কষেই ভাঙা গাছ বিক্রি, প্রশ্নে নেতা
ধর্মতলা, সাঁতরাগাছি, বোটানিক্যাল গার্ডেন, ধামাখালি, ব্যারাকপুর, নৈহাটি, গড়িয়া, বারুইপুর রুটে চলা বেশির ভাগ বাসও এ দিন বন্ধ ছিল। এ দিন উত্তরে দমদম, নাগেরবাজার, বনহুগলি, ডানলপ, কামারহাটি থেকে কলকাতার বিভিন্ন রুটে যে সব বাস চলে, তার বেশির ভাগ রাস্তায় নামেনি বলে অভিযোগ। ডানলপ থেকে পর্যাপ্ত সরকারি বাসের ব্যবস্থা থাকলেও উত্তর কলকাতার বিভিন্ন রুটে মাঝপথে বাসে উঠতে গিয়ে যাত্রীরা সমস্যায় পড়েছেন। যথেষ্ট সংখ্যায় বাস চলেনি নিউটাউন, সল্টলেক এবং সেক্টর ফাইভেও।
দক্ষিণে কামালগাজি, গড়িয়া থেকে পর্যাপ্ত সরকারি বাসের ব্যবস্থা থাকলেও, বেসরকারি বাস কম চলায় সোনারপুর এবং বারুইপুরের যাত্রীদের ঠাসাঠাসি করে যেতে হয়েছে। মিনিবাসও ছিল হাতে গোনা। একই চিত্র ছিল শ্যামবাজার, শোভাবাজার, গিরীশ পার্কের বাস স্ট্যান্ডগুলোতেও।
দূরত্ববিধি শিকেয় তুলে ভিড়ে ঠাসাঠাসি ছিল সরকারি বাসও। বারুইপুরের বাসিন্দা সনৎ মণ্ডল এলগিন রোডের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। তাঁর কথায়, ‘‘অফিসে উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে বারুইপুর থেকে রোজ যাতায়াত করছি। এর থেকে ট্রেনে ভিড় কম ছিল।’’ সকালে উল্টোডাঙা মোড়ে অসুস্থ ছেলেকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন বীণা দাস। ছেলেকে দেখাতে যাচ্ছিলেন নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজে । তিনি বলেন, ‘‘আধঘণ্টার উপর দাঁড়িয়ে আছি। বাস পাচ্ছি না। যে বাসগুলো আসছে তাতে বসে যাওয়ার মতো জায়গা নেই। কী ভাবে হাসপাতালে যাব?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy