E-Paper

রাস্তায় পোড়া দেহ, ভাসছে পুকুরেও

মঙ্গলবার এগরা-১ ব্লকের খাদিকুল গ্রামে পৌঁছে যে দৃশ্য দেখা গিয়েছে, তা সচরাচর চোখে পড়ে না। গ্রামে ঢোকার পরই মোড়ে মোড়ে হাহাকার। ঘটনাস্থলে পৌঁছতেই নাকে এল পোড়া বারুদের গন্ধ।

POND

এগরায় পুকুরে খোঁজা হচ্ছে দেহ। ছবি: গোপাল পাত্র।

গোপাল পাত্র

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০২৩ ০৭:০৭
Share
Save

তিনটে টিয়া পাখি ছিল খাঁচায়। কাছেই রাখা ছিল কর্মীদের সাইকেল ও স্কুটি। বাজি বিস্ফোরণে দলা পাকিয়ে গিয়েছে সেই পোষা পাখিগুলি। সাইকেল ও স্কুটির কঙ্কাল পড়ে রয়েছে। আর ছড়িয়ে রয়েছে দেহ বা দেহের অংশ। গ্রামীণ ঢালাই রাস্তা ধরে পায়ে পায়ে এগোতেই দূর থেকে চোখে পড়ছিল দেহগুলি। কোনওটা পড়ে রাস্তায়, আবার কোনওটা ভাসছে পাশের পুকুরে।

পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এগরা মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় বেআইনি ভাবে বাজি তৈরির কারখানা চালানোর অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। সপ্তাহ কয়েক আগেই যেমন এগরার পুরন্দা এলাকায় একটি কারখানায় বিস্ফোরণে দু’জনের মৃত্যু হয়েছিল। তবে মঙ্গলবার এগরা-১ ব্লকের খাদিকুল গ্রামে পৌঁছে যে দৃশ্য দেখা গিয়েছে, তা সচরাচর চোখে পড়ে না। গ্রামে ঢোকার পরই মোড়ে মোড়ে হাহাকার। ঘটনাস্থলে পৌঁছতেই নাকে এল পোড়া বারুদের গন্ধ। ছাউনির কাঠামো এবং কংক্রিটের পিলারের ধ্বংসাবশেষের মধ্যে গ্রামবাসীর জটলা। সেখানেই ভাঙা দেওয়ালের ছাই সরিয়ে দেহ খোঁজার চেষ্টা করছেন মৃতদের পরিজনেরা। দমকলের চেষ্টায় আগুন নিভলেও তখনও কারখানা কিছু অংশ থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে।

বিস্ফোরণে মৃত তিনটি টিয়া পাখিও। ছবি: শুভেন্দু কামিলা

বিস্ফোরণে মৃত তিনটি টিয়া পাখিও। ছবি: শুভেন্দু কামিলা

মূল কারখানার টিনের চালা টুকরো টুকরো হয়ে ২০০ মিটার দূরে উড়ে গিয়ে পড়েছে। সেই কারখানার দিকে কয়েক পা এগোতেই চোখে পড়েছিল খাঁচাটা। এক কোণে দেওয়ালের দিকে পড়েছিল সেটি। সেখানে বন্দি তিনটে টিয়াই ঝলসে গিয়েছে। অদূরেই পড়ে কারখানার কাজে আসা শ্রমিকদের চারটি সাইকেল, একটি স্কুটি। সেগুলিও পুড়ে ছাই। ভাঙা ঘরে বেশিক্ষণ থাকলে নাকে আসছিল পোড়া মাংস আর বারুদের তীব্র গন্ধ। রুমাল চাপা দিয়ে পুকুরের ধারে যেতেই আরও দেহের খোঁজ মিলল। কোনওটা কারখানার পাশেই পড়ে। কোনও দেহ আবার ছিটকে গিয়েছে ৫০-৬০ মিটার দূরে। পুকুর পাড়েই একটি ঝলসানো দেহ পড়ে ছিল। জলেও ভাসছিল দু’টি দেহ। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীর কাছে পুলিশ প্রথমে বাধা পেলেও পরে তারা দেহ উদ্ধার শুরু করে। পুকুরের জলেও ছিল বারুদের আস্তরণ। ভাসছিল বাজিতৈরির খোল।

প্রায় ১৫ কাঠা একটি ফাঁকা জমির এক প্রান্তে তিনটি ঘরে চলত বাজি তৈরি। সব ক’টিই টিনের ছাউনি দেওয়া। একটির দেওয়াল পাকা ছিল। যে ঘরে বাজি তৈরি হত, বিস্ফোরণের সময় তার পাশে এ দিন রান্না চলছিল। থালার জলে কাটা সজনে ডাঁটা, উনুনে কড়াই চাপানোই ছিল। তবে সেই রান্না আর এ দিন শেষ হয়নি। আশপাশেই পড়ে রয়েছে ছোট-বড়ো লোহার চাকা, প্রায় তিন ফুটের মতো লম্বা বাজির খোল। দমকলের দুই আধিকারিকের সাহায্যে পাশের একটি ১৫ ফুট উঁচু বাড়িতে চড়তেই চক্ষু চড়কগাছ। সেখানে থরে থরে মজুত করা রয়েছে বেআইনি বাজির বস্তা। ওতে আগুনের ফুলকি পৌঁছলে বিস্ফোরণের তীব্রতা কোথায় পৌঁছত, ভাবলেই শিউরে উঠতে হয়!

বেলা যত গড়িয়েছে, ভিড় বেড়েছে জনতা আর পুলিশের। লাগোয়া পশ্চিম মেদিনীপুর, এমনকি ওড়িশা থেকেও প্রচুর মানুষ গাড়ি ভাড়া করে ঘটনাস্থলে এসেছেন। পুলিশ দেহ উদ্ধার করে একে একে পলিথিনে মুড়ে শুইয়ে রাখছিল ঢালাই রাস্তায়। সেখানেই পরনে গামছা, খালি গায়ে কাঁদতে কাঁদতে হাজির বছর বারোর এক কিশোর। পলিথিনে মোড়া দেহগুলির মধ্যে সে তাঁর মাকে খুঁজছিল। পুলিশ রাত পর্যন্ত মৃতদের পরিচয় প্রকাশ করেনি। তবে পরিজনের কান্না আর হাহাকার বুঝিয়ে দিচ্ছিল, সব শেষ।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Egra Explosion Death

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।