আনারুলকে দিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করাচ্ছে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র
এক দশক আগের বীরভূমের লাভপুরে সিপিএম সমর্থক তিন ভাই খুনের মামলায় নাটকীয় মোড়!
২০১০ সালে রাজ্য রাজনীতিতে হইচই ফেলে দেওয়া যে খুনের মামলায় লাভপুরের তৃণমূল (এখন বিজেপিতে) বিধায়ক মনিরুল ইসলাম ও তাঁর ভাইকে এক সময় ‘ক্লিনচিট’ দিয়েছিল পুলিশ, সেই মামলাতেই এ বার বড়সড় সাফল্য মিলেছে বলে জেলা পুলিশের দাবি। মনিরুলের ভাই আনারুল ইসলামকে ওই ঘটনায় পুলিশ গ্রেফতার করেছে। পুলিশের দাবি, জেরার মুখে তাদের কাছে আনারুল দোষ কবুল করেছে। আরও কারা যুক্ত ছিল, সেটাও জানিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, শুক্রবার সন্ধ্যায় লাভপুরে ঘটনাস্থলে আনারুলকে নিয়ে গিয়ে তিন খুনের পুনর্নির্মাণও করিয়ে ফেলেছে পুলিশ!
সম্প্রতি লাভপুরে এক তৃণমূল কর্মী খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিল আনারুল। জেল হেফাজতে থাকতে থাকতেই গত ৩ সেপ্টেম্বর তিন ভাইয়ের খুনের মামলায় বোলপুর আদালতে হাজির করিয়ে আদালতের নির্দেশে পুলিশ ফের তাঁকে তিন দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নেয়। পুলিশের দাবি, পুর্ননির্মাণে সহযোগিতা করেছে আনারুল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মামলার প্রথম আইও বা তদন্তকারী অফিসার স্বর্গজিৎ বসু এবং লাভপুর থানার বর্তমান ওসি পার্থসারথি মুখোপাধ্যায়।
কী হয়েছিল
বীরভূমে লাভপুরের নবগ্রামে ২০১০-এর ৪ জুন খুন হন সিপিএম সমর্থক তিন ভাই। অভিযোগ ওঠে মনিরুল ইসলামের বাড়িতে সালিশি সভার জন্য ডেকে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে ও বোমা মেরে খুন করা হয়েছিল তাঁদের। মনিরুল তখন তৃণমূলের জেলা শাখার সহ-সভাপতি। সেই মামলায় গ্রেফতার মনিরুলের ভাই আনারুল।
যে পথে মামলা
• ২০১০, ৪ জুন: লাভপুরে মনিরুল ইসলামের বাড়িতে সিপিএম সমর্থক তিন ভাই খুন
• ২০১০, ৫ জুন: মনিরুল সহ ৫১ জনের বিরুদ্ধে খুনের মামলা
• ২০১০, ১১ অগস্ট: পলাতক মনিরুল গ্রেফতার। মাস তিনেকের মধ্যে জামিন
• ২০১৩, ২১ জুলাই: প্রকাশ্য সভায় পায়ের তল দিয়ে তিন জনকে পিষে মারার কথা স্বীকার মনিরুলের
• ২০১৪, ১৭ জুন: বোলপুর এসিজেএম আদালতে চার্জশিট। মনিরুল সহ ২২ জনের নাম নেই
• ২০১৯, ডিসেম্বর: মনিরুল, মুকুল রায়ের নামে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট।
• ২০২০, ২০ অগস্ট: লাভপুরের তৃণমূল কর্মী সহদেব বাগদিকে খুনের অভিযোগে ধৃত মনিরুলের ভাই আনারুল ইসলাম।
• ২০২০, ৩ সেপ্টেম্বর: তিন ভাই খুনে তিন দিনের জন্য আনারুলকে নিজেদের হেফাজতে নিল পুলিশ।
বীরভূমের পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ রবিবার বলেন, ‘‘উচ্চ আদালতের নির্দেশে তদন্ত চলছে। তদন্তে ঠিক কী উঠে এসেছে সেটা প্রকাশ্যে নয়, সরাসরি আদালতকেই জানাব।’’ এখন প্রশ্ন, মনিরুলও কি গ্রেফতার হবেন? জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, খুনের মামলায় জামিনে
রয়েছেন বিধায়ক। তাঁর জামিন খারিজের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। তবে, একাধিক বার জেরার জন্য ডেকে পাঠালেও মনিরুল আসেননি। তিনি এখন লাভপুরেই রয়েছেন বলে সূত্রের খবর। এ দিন বহু চেষ্টাতেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
পুলিশ সূত্রের খবর, ২০১০ সালে বালিরঘাটের সালিশি সভায় নিজের বাড়িতে ডেকে লাভপুরের বুনিয়াডাঙা গ্রামের সিপিএম সমর্থক তিন ভাই জাকের আলি, কোটন শেখ ও ওসুদ্দিন শেখকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ ওঠে মনিরুল, আনারুল-সহ অনেকের বিরুদ্ধে। তখন মনিরুল সবে ফরওয়ার্ড ব্লক থেকে তৃণমূলে গিয়েছেন। মাস তিনেক হাজতবাসের পরে মনিরুল জামিন পেয়ে লাভপুরের বিধায়ক হন। এমনকি প্রকাশ্য সভায় তিন ভাইকে “পায়ের তল দিয়ে পিষে মেরেছি” বলার পরেও ২০১৪ সালে ওই মামলায় পুলিশ মনিরুল, আনারুল-সহ ২২ জনকে বাদ দিয়ে বোলপুর কোর্টে চার্জশিট জমা দেয়।
গত বছর লোকসভা ভোটের পরে দিল্লিতে মুকুল রায়ের হাত ধরে বিজেপি-তে যোগ দেন মনিরুল। গত বছর সেপ্টেম্বরে হাইকোর্ট জেলা পুলিশ সুপারের তদারকিতে পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেয়। ডিসেম্বরে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে মনিরুল, আনারুলের সঙ্গেই খুনে প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে মুকুলেরও নাম দেয় বীরভূম পুলিশ। সেই ঘটনা সূত্র ধরে একাধিক বার মুকুলকেও জেরা করা হয়েছে। জেলা পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতারি এড়াতে
সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিল আনারুল। আদালত আবেদন খারিজ করে তাঁকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলে। কিন্তু তা সে করেনি। রবিবার ফের বোলপুর আদালতে তোলা হলে আনারুলকে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন বিচারক।
বিজেপি-র জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল বলেন, ‘‘দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি আমরা সব সময় চাই। কিন্তু, এত দিন পরে কেন। পুলিশই তো ক্লিনচিট দিয়ে এই মামলার চার্জশিট থেকে মনিরুলদের নাম বাদ দিয়েছিল। তিনি বিজেপিতে না এলে এটা হত না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy