নেতাইয়ে শহিদ বেদির কাছেই উড়ছে বিজেপির পতাকা। —নিজস্ব চিত্র।
‘ব্রহ্মা’ সব জানেন!
কে প্রাপক। কবে কতটা, কী আসে। ঘরের দরজা তো আগলে রাখেন!
কে রাখেন? ‘ব্রহ্মা’!
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারির সকালে নেতাইয়ের গ্রামবাসীদের জমায়েতের উপরে গুলি চলছিল। ন’জনের মৃত্যু হয়েছিল। অভিযোগ, সিপিএম নেতা রথীন দণ্ডপাটের দোতলা বাড়ি থেকে গুলি চালানো হয়।
নিহতদের স্মৃতির উদ্দেশে নেতাইয়ে শহিদ বেদি তৈরি হয়েছে। প্রতি বছর ৭ জানুয়ারির সকালে সেখানে গিয়ে শ্রদ্ধা জানান শুভেন্দু অধিকারী। সেই বেদির কয়েক পা দূরেই এখন পতপত করে উড়ছে পদ্ম পতাকা। পঞ্চায়েত ভোটে নেতাইয়ে অবশ্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থী। এ বার লোকসভা ভোটে তৃণমূলকে পিছনে ফেলে ব্যবধান বাড়িয়েছেন বিজেপি প্রার্থী।
শহিদ বেদির কয়েক হাত দূরে বসে গ্রাম গেরুয়া হওয়ার কারণ বোঝাচ্ছিলেন প্রৌঢ়। ভিড় জমালেন আরও কয়েকজন। তাঁরা বললেন, ‘‘দিদি যা (উন্নয়ন) করেছেন, তা আগেও হয়নি, আগামীতে আর কেউ পারবে না।’’
তা হলে কী এমন ঘটল ‘দিদি’র সঙ্গ ছেড়ে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে নেতাই? সে প্রসঙ্গে ভিড় বলল আবাস যোজনার কথা। যোজনায় কোনও উপভোক্তার নামে ব্যাঙ্কে টাকা এল। টাকাটা কয়েকদিন পরে হয়তো তুলতে চান সংশ্লিষ্ট উপভোক্তা। অভিযোগ, শাসকদলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একাংশ রোজই উপভোক্তাকে ব্যাঙ্কে যাওয়ার জন্য তাগাদা দেন। উপভোক্তার ব্যাঙ্কে যাওয়ার গতিবিধিতেও নজর থাকে। ব্যাঙ্ক থেকেই ‘ভাগের অর্থ’ বুঝে নেন তাঁরা। ভাগ না দিয়ে ব্যাঙ্কের চৌকাঠ পেরোনোর ক্ষমতাও নেই। কারণ, চৌকাঠ তো ওই নেতা বা তাঁর লোকজন আগলে রাখে—বলছিলেন কয়েকজন বাসিন্দা। এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘মানুষ কেন তৃণমূলকে হারিয়েছে, তা বুঝতে পারছেন?’’
‘ভাগের অর্থ’ই জঙ্গলমহলের রাজনীতিতে পদ্ম অনুপ্রবেশের অন্যতম কারণ বলে মানছেন দলের বিধায়কেরা। আর নেতা-কর্মীদের একাংশ প্রশ্ন তুলছেন, ‘ভাগের অর্থ’ ছাড়া দলের তৃণমূলস্তরের কর্মসূচি কী করে হবে? নয়াগ্রামের এক নেতার কথায়, ‘‘একটা মিছিল করলে লোকদের টিফিন দিতে হয়। সেই টাকা কোথা থেকে আসবে!’’ পরে তা শুনে এক বিধায়কের উত্তর, ‘‘বুদ্ধি করে সব করতে হয়।’’ তবে তিনি যা-ই বলুন না কেন, কাটমানি–কাণ্ডের জেরে জঙ্গলমহলে আরও ধস অপেক্ষা করছে হলেই দাবি ঝাড়গ্রামে তৃণমূল স্তরের অনেক নেতা-কর্মীর। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘কাটমানি নিয়ে দল অবস্থান স্পষ্ট করুক। কী করতে হবে বলুক। না হলে ভয়ে সেঁধিয়ে থাকতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে দল ঘুরে দাঁড়ানোর পরিবর্তে বসে যাবে।’’
সংখ্যায় কম হলেও অশান্তির ভয়ে কয়েকজন প্রধান-উপপ্রধানের পঞ্চায়েতে আসা-যাওয়া কমেছে। তাঁদের মধ্যে অনেকে পদও ছাড়তে চাইছেন। এই অবস্থায় প্রমাণের অভাবকে হাতিয়ার করে সাহস যোগাচ্ছেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। তাতে ‘অভিযুক্ত’দের মনোবল ফিরছে বলেই দাবি জেলা সভাপতি বিরবাহা সরেনের। তাঁর কথায়, ‘‘অভিযোগকারীদের কাছ থেকে প্রমাণ চাইতে বলা হয়েছে। প্রমাণ কেউ দিতে পারছেন না।’’
অভিযোগ, পকেটের ‘উন্নয়নে’ আবাস যোজনার সঙ্গে পাল্লা দিয়েছে ১০০ দিনের কাজ। অভিযোগ, একটি পরিবারের চার সদস্যকে আলাদা আলাদা ভাবে অভিভাবক করে তাঁদের নামে মোটা টাকা তোলা হয়েছে। অল্প কিছু অর্থ পরিবারকে দিয়ে বাকি ‘একশো দিনে’র টাকাটা ‘দুশো দিন’ করেছেন শাসকদলের অনেক নেতা-কর্মীই, তা বেলপাহাড়ি হোক বা বিনপুর কিংবা জামবনী। বেশির ভাগ পরিবারের কাছে জব কার্ড নেই। তপসিয়ার এক বাসিন্দা বললেন, ‘‘জব কার্ড দেখি না। ও সব দেখে কী করব! যা টাকা আসে। বেশি বললে বাবুরা হয়তো আর কাজই দেবে না।’’
কাটমানি নিয়ে লোকসভায় দলীয় সাংসদেরা সরব। ঝাড়গ্রামে অবশ্য ভিন্ন সুর বিজেপি’র। কেন এমন ‘ভালমানুষি’? জেলা সভাপতি সুখময় শতপথির বক্তব্য, ‘‘আমরা কিছু করছি না। এখানে যারা কাটমানি নিয়েছিল, সাধারণ মানুষ তাদের থেকে টাকা চাইছেন। ফেরতও পাচ্ছেন। ফলে অশান্তি নেই।’’ লোকসভার ফলের নিরিখে দিলীপ ঘোষের জন্মভূমিতে সুবিধাজনক জায়গায় রয়েছে বিজেপি। তাই বিক্ষোভে বারুদ দিতে চাইছে না কেন্দ্রের শাসকদল। দিলীপের ভাই হীরকের কথায়, ‘‘জয় আমাদের হয়েছে। সংযত থাকার দায়িত্ব রয়েছে।’’
মনে পড়তে পারে, ২০০৯ সালের জুন মাসের বিকেল। লালগড়ের ধরমপুরে সিপিএমের বিনপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক অনুজ পাণ্ডের ‘বড়’ বাড়িতে হাতুড়ির ঘা দেখেছিলেন অনেকেই। বছর দশেক পরেও সাদা বাড়িটার ভগ্ন দশাই।
‘‘তবে সে সব নিয়ে আর কোনও আলোচনা নয়,’’ বলছেন অনুজের আত্মীয় অর্চনা।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy