ফাইল ছবি
মার খেতে খেতে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য অপেক্ষা করা উচিত? নাকি ‘প্রহসনের’ প্রতিবাদ জানিয়ে ভোটের ময়দান থেকে সাময়িক সরে যাওয়া ভাল?
পুরভোটের বাজারে এমন দ্বিধা-বিতর্কই মাথাচাড়া দিয়েছে সিপিএম ও কংগ্রেসের অন্দরে। দু’দলের মধ্যেই নেতা-কর্মীদের একাংশের মত, আপাতত স্থানীয় নির্বাচন বয়কট করে কড়া বার্তা দেওয়া হোক। সারা দেশের সামনে রাজনৈতিক প্রচার তুলে ধরা হোক যে, বাংলায় শাসক দল এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে, যেখানে বিরোধীরা নির্বাচন থেকেই সরে দাঁড়িয়েছে। অন্য অংশের আবার পাল্টা মত, নির্বাচন থেকে পুরোপুরি সরে গেলে তৃণমূল কংগ্রেস-বিরোধী জনমতকে জোর করে বিজেপির দিকে ঠেলে দেওয়া হবে! তার চেয়ে মারের মুখেও মাটি কামড়ে পড়ে থাকলে বরং মানুষের আস্থা ফিরে পেতে সুবিধা হবে। কলকাতায় পুরভোটের ফলে বিজেপির ভোট কমে গিয়ে বাম ও কংগ্রেসের কিছুটা জমি ফিরে পাওয়ার ইঙ্গিত পাওয়ার পরে অবশ্য দ্বিতীয় মতেরই এখন পাল্লা ভারী হচ্ছে। সম্মেলন প্রক্রিয়ার পাশাপাশিই বাকি পুরভোটের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনার জন্য আগামী ২৭-২৮ জানুয়ারি রাজ্য কমিটির বৈঠক ডেকেছে সিপিএম।
কলকাতায় পুরভোটের চেহারা দেখে রাজ্যের সিপিএম ও প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের মধ্যে কোনও সংশয় নেই যে, হাওড়া-সহ অন্যান্য জেলায় পুরসভার ভোট কেমন হতে চলেছে! পুলিশ-প্রশাসন সক্রিয় ভাবে শাসক দলের হয়ে ভোট করাচ্ছে বলেও অভিযোগ তাঁদের। এই প্রেক্ষিতেই দু’দলের মধ্যে একাংশের প্রশ্ন, শাসক দল ও পুলিশের মিলিত প্রতাপের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে প্রার্থী, এজেন্ট বা কর্মীদের কত দিন মার খেতে দেওয়া হবে? তাঁদের যুক্তি, সেই ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোট থেকে এই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এর পরে ২০১৫-র পুরভোট ও ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোটে আক্রমণ আরও বেড়েছে। সামনের বছরে একগুচ্ছ পুরভোট, ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটেও একই ধারা চলবে বলে তাঁদের অনুমান। সিপিএমের এক জেলা নেতার কথায়, ‘‘আমরাই বলছি, ভোটের নামে প্রহসন হচ্ছে, ভোট লুঠ হচ্ছে। আবার সেই ভোট থেকে শতাংশের হিসেব কষছি! এই অর্থহীন প্রক্রিয়ায় না থেকে আমাদের ভোট বয়কট করা উচিত। গণতন্ত্রকে যে ভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে, অংশগ্রহণ করে আমরা তাকে মান্যতা দেব কেন?’’ এই অংশের যুক্তি, ‘কৌশলগত’ ভাবে একটু পিছিয়ে গিয়ে কর্মী বাহিনীকে কিছুটা স্বস্তি দিয়ে পরের লোকসভা ভোটে পূর্ণশক্তিতে লড়াই করা হোক।
বয়কটপন্থীরা অতীতের উদাহরণ দিয়ে বলছেন, ১৯৭২ সালে কংগ্রেস জমানায় ‘রিগিং’-এর অভিযোগ করে জ্যোতি বসু, প্রমোদ দাশগুপ্তেরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। জিতে যাওয়া ১৪ জন সিপিএম বিধায়কও বয়কটে গিয়ে বিধানসভার পথে পা দেননি। আবার বাম জমানায় তৎকালীন শাসক সিপিএমের বিরুদ্ধে ‘গা-জোয়ারির’ অভিযোগ এনে ১৯৮১ সালের পুরভোট বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অজিত পাঁজা। সাম্প্রতিক অতীতে বর্ধমানে ২০১৩ সালের পুরভোটের দিন ‘অবাধ লুঠের’ প্রতিবাদে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা করেছিলেন সিপিএম নেতৃত্ব। পরে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট অবশ্য বর্ধমান জেলা সিপিএমের সেই সিদ্ধান্তের নিন্দা করে তাকে ‘মান্যতা’ দেয়নি।
বাম ও কংগ্রেসের মধ্যে অন্য অংশের নেতৃত্বও মেনে নিচ্ছেন, কর্মী-সমর্থকদের খুবই কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হচ্ছে। কিন্তু তাঁদের মতে, বয়কট তার সমাধান নয়। বরং, রাজ্যে বিজেপির পালে হাওয়া যে ভাবে কমতে শুরু করেছে, তার সুযোগ নেওয়ার জন্য পূর্ণ উদ্যমে ঝাঁপানো দরকার। বিস্তর অভিযোগের মধ্যে কলকাতা পুরসভার ভোট সেই ইঙ্গিতই দিয়েছে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘টানা পরাজয় চলতে থাকলে অন্য রকমের ভাবনা আসা স্বাভাবিক। তবে আবেগ নয়, বিষয়টাকে যুক্তি দিয়ে ভাবতে হবে।’’ প্রদেশ কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতাও বলছেন, ‘‘বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা আক্রান্ত হলে এখন আর নাগরিক সমাজ আগের মতো প্রতিবাদ করে না। লড়াই নিজেদেরই লড়তে হয়। কঠিন হলেও মোড় ঘোরানোর লড়াইটা চালিয়ে যেতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy