Advertisement
২৪ অক্টোবর ২০২৪
Semiconductor Factory in Kolkata

কলকাতায় লগ্নির ফায়দা তুলবে কে, কৃতিত্বে কাড়াকাড়ি

রবিবার আমেরিকায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং আমেরিকার প্রেসিডেন্টের জো বাইডেনের বৈঠকের পরে যৌথ বিবৃতিতে কলকাতায় গ্লোবাল ফাউন্ড্রিজ়ের ‘জিএফ কলকাতা পাওয়ার সেন্টার’ তৈরির ঘোষণা উঠে এসেছে।

(বাঁ দিকে) নরেন্দ্র মোদী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

(বাঁ দিকে) নরেন্দ্র মোদী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

প্রেমাংশু চৌধুরী, অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:০০
Share: Save:

বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম সেমিকন্ডাক্টর চিপ নির্মাতা গ্লোবাল ফাউন্ড্রিজ় যে কলকাতায় লগ্নি করতে চলেছে, তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের অজানা ছিল না। কেন্দ্রীয় সরকারের শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রক এবং রাজ্য সরকারের তথ্য প্রযুক্তি দফতর সূত্রের খবর, এ বিষয়ে কেন্দ্র, রাজ্য এবং নিউ ইয়র্কের ওই বহুজাতিক সংস্থার মধ্যে বেশ কিছু দিন ধরেই কথাবার্তা চলছিল। তারই ফল স্বরূপ রবিবার আমেরিকায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং আমেরিকার প্রেসিডেন্টের জো বাইডেনের বৈঠকের পরে যৌথ বিবৃতিতে কলকাতায় গ্লোবাল ফাউন্ড্রিজ়ের ‘জিএফ কলকাতা পাওয়ার সেন্টার’ তৈরির ঘোষণা উঠে এসেছে।

বিজেপি ও তৃণমূল শিবির সূত্রের খবর, এখন দুই রাজনৈতিক দলই কলকাতায় এই প্রস্তাবিত সেমিকন্ডাক্টর কারখানাকে সামনে রেখে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছে। বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছেন, ২০২৬-এ পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের আগে কলকাতায় সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে বিনিয়োগকে হাতিয়ার করে মোদী এক ঢিলে একাধিক লক্ষ্য পূরণ করার কথা ভেবেছেন। প্রথমত, প্রধানমন্ত্রীর আমেরিকা সফরে এই ঘোষণা হওয়ায় মোদী সরকার তথা বিজেপি এর কৃতিত্বের বেশির ভাগটাই নিতে পারবেন। বাংলায় অনেক চেষ্টা করেও পায়ের তলায় জমি শক্তি করতে পারছে না বিজেপি। এই লগ্নিকে সামনে রেখে মোদী বলতে পারবেন, বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতায় এলে এই ভাবেই দেশি-বিদেশি লগ্নি আসবে। দ্বিতীয়ত, এই কৌশলে তৃণমূল নেতৃত্বের কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অস্ত্র ভোঁতা করে দেওয়া যাবে বলে মনে করছে গেরুয়া শিবির। বরং বিরোধী শাসিত রাজ্যে বিদেশি লগ্নি টেনে মোদী রাজনৈতিক ঔদার্যের পরিচয় দিচ্ছেন বলে দাবি করা যাবে। তৃতীয়ত, আর জি কর কাণ্ডের আন্দোলনের পরে বাংলায় বামেদের পরিসর রাজনৈতিক-সামাজিক বৃত্তে যথেষ্ট বাড়ছে বলেই বিজেপির আশঙ্কা। আর জি কর আন্দোলনে বিজেপি ছাপ ফেলতে পারেনি। আর তৃণমূল বিরোধী ভোটব্যাঙ্কে এবং আন্দোলনবৃত্তে বামেদের প্রভাব বৃদ্ধির অর্থ বিজেপি-র ক্ষয়।

উল্টো দিকে, তৃণমূল শিবিরের ধারণা, আর জি কর কাণ্ডের প্রেক্ষিতে রাজ্যে যে নেতিবাচক আবহ তৈরি হয়েছে, সেমিকন্ডাক্টরের মতো অত্যাধুনিক শিল্পে আমেরিকার লগ্নি আসার খবরে তা কিছুটা কেটে যেতে পারে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার যে শিল্পবিরোধী নয়, বরং বিদেশি লগ্নি টানতে তৎপর, তা-ও প্রচার করা যাবে। সেই কারণেই মমতা নিজে ঘোষণা করেছেন, গ্লোবাল ফাউন্ড্রিজ়ের সঙ্গে রাজ্য সরকারের আগে থেকেই কথাবার্তা চলছিল। মোদী-বাইডেনের বিবৃতিতে কলকাতায় বিনিয়োগের ঘোষণার নেপথ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দীর্ঘ উদ্যোগ রয়েছে। নবান্ন সূত্রের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গ সরকার এমনিতেই সেমিকন্ডাক্টর নীতি তৈরির জন্য কাজ করছে। রাজ্যে ২২টি তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক রয়েছে। যার মধ্যে ১৭টি প্রায় ভর্তি। বাকিগুলোতে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের জন্য যথেষ্ট জায়গা রয়েছে।

কেন্দ্রীয় শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, এখনও পর্যন্ত সেমিকন্ডাক্টর ক্ষেত্রে অধিকাংশ বিনিয়োগই হয়েছে গুজরাতে। অসমেও লগ্নি গিয়েছে। কলকাতায় সেমিকন্ডাক্টর চিপ তৈরিতে লগ্নির পিছনে আমেরিকা, কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার মিলিত ভাবে কাজ করছে।

কেন্দ্রের শিল্পোন্নয়ন সচিব অমরদীপ সিংহ ভাটিয়া আজ বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার ২০২২-এ সেমিকন্ডাক্টর মিশন চালু করেছিল। প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক আমেরিকা সফরে ফের এই শিল্পে জোর দেওয়া হয়েছে। কারণ প্রধানমন্ত্রী মনে করছেন, শুধু লগ্নি এলেই হবে না, তা নতুন প্রযুক্তি ক্ষেত্রে আসাও জরুরি।’’ কেন্দ্রীয় শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, দক্ষিণ এবং পশ্চিম ভারতের তুলনায় পূর্ব ভারতে উন্নয়ন কম হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী মোদী দেশের পূর্বাঞ্চলে উন্নয়নের কথা বলেছেন। পশ্চিমবঙ্গে সেমিকন্ডাক্টর ক্ষেত্রে আমেরিকার লগ্নি নিয়ে আসা সেই প্রচেষ্টারও অংশ। তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, “রাজনৈতিক মতপার্থক্যকে উন্নয়নের প্রশ্নে যতটা দুরে সরিয়ে রাখা যায় ততই ভাল। তবে পশ্চিমবঙ্গে এই শিল্প গড়ার জন্য কেন্দ্রের উদ্যোগী হওয়া ব্যতিক্রম। রোজকার নিয়ম নয়।’’

সেমিকন্ডাক্টর বা অর্ধপরিবাহী পদার্থ দিয়ে তৈরি চিপ এখন সমস্ত রকম ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি, গাড়ি, স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, বায়ু এবং সৌর বিদ্যুৎ তৈরির যন্ত্রাংশ, কৃত্রিম মেধা ক্ষেত্রে অত্যাবশ্যক। কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘ভারতে এখন বছরে আড়াই হাজার কোটি ডলার মূল্যের সেমিকন্ডাক্টর চিপ প্রয়োজন হয়। চার-পাঁচ বছরের মধ্যে তা দশ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছে যাবে। এই ক্ষেত্রে স্বনির্ভর হয়ে উঠতেই মোদী সরকার ২০২২-এ সেমিকন্ডাক্টর মিশন চালু করেছে।’’ তাঁর মতে, গ্লোবাল ফাউন্ড্রিজ়ের ‘জিএফ কলকাতা পাওয়ার সেন্টার’ এই প্রযুক্তি ক্ষেত্রে গবেষণা এবং তা কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE