প্রতীকী ছবি।
পুলিশের একাংশ বলছে, স্থানীয় একটি জগদ্ধাত্রী পুজোকে কেন্দ্র করে ‘তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ’ দু’টি গোষ্ঠীর বিবাদেই নরেন্দ্রপুর এলাকায় দাসপাড়ার কাটিপোতা-রানাভুতিয়ায় বোমা মজুত করা হয়েছিল। আবার স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেরই দাবি, সরকারি খাস জমি বিক্রির কারবারে ভাগ বাঁটোয়ারা নিয়ে শাসক দলের দু’টি গোষ্ঠী যুযুধান। এর ফলেই টিনের ঘরটিতে বোমা মজুত করা হয়। শাসক দলের ঘনিষ্ঠ দুষ্কৃতীদের মধ্যে নিত্য বোমাবাজি এবং হিংসার জেরেই বোমায় জখম পাঁচ জন নাবালক দুর্ভোগের শিকার হয়েছে।
শুক্রবার রাতে তল্লাশি চালিয়ে ছোটদের উপরে বোমা হামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সাত জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। উদ্ধার হয়েছে চারটি তাজা বোমা। কাটিপোতা-রানাভুতিয়া এলাকায় জগদ্ধাত্রী পুজোর দখল নিয়ে গোলমাল এবং শিশুদের উপরে হামলা— দু’টি অভিযোগেই পুলিশ মামলা দায়ের করেছে। বারুইপুর পুলিশ জেলার কর্তারা বলেন, ‘‘দু’টি মামলার যোগসূত্রে গ্রেফতার হওয়া সাত জনকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার শিকড়ে পৌঁছানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’’ ধৃতদের আদালতে হাজির করানো হলে তাঁদের ১০ দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছেন বিচারক।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, নরেন্দ্রপুর থানার অধীনে খেয়াদহ-১ এবং খেয়াদহ-২ পঞ্চায়েত এলাকায় সোনারপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রবীর সরকার বনাম খেয়াদহ-২ পঞ্চায়েতের সদস্য বাসুদেব মণ্ডল ওরফে বসুর শিবিরের দুষ্কৃতীদের টক্করেই টিনের ঘরে বোমা মজুত করা হয়েছিল। নিছকই জগদ্ধাত্রী পুজো দখলের লড়াই নয়, সরকারি খাস জমি দখলের সংঘাতই বোমা রাখার আসল কারণ বলেও স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ।
ওই এলাকায় খাস জমি ও ভেড়ি দখলের লড়াই চলছে বেশ কয়েক বছর ধরেই। এর পিছনে জমি মাফিয়াদের কোটি টাকার কারবার রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, নির্বাচন পরবর্তী হিংসার ঘটনায় একটি খুনের মামলায় সোনারপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রবীর ও তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে। ওই খুনের মামলার যোগসূত্রে প্রবীরকে একাধিক বার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। ভোট পরবর্তী ঘটনায় প্রবীরেরবিরুদ্ধে বিরোধীদের বহু ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও মারধরের ঘটনার অভিযোগও রয়েছে।
বোমা মজুতের অভিযোগ প্রবীর এ দিন অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘জগদ্ধাত্রী পুজোকে কেন্দ্র করে গন্ডগোলের বিষয়টি আমি নরেন্দ্রপুর থানায় জানিয়েছিলাম। পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে। এবং এই এলাকায় সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে ভেড়ি লিজ় দেওয়া হয়। পঞ্চায়েত সমিতির তরফে আমি এই বিষয়ে ওয়াকিবহাল। তবে খাস জমি দখল নিয়ে এলাকায় নানা গোষ্ঠী বিবাদ রয়েছে। আমি প্রশাসনে সর্বস্তরে লিখিত ভাবে তা জানিয়েছি।’’ প্রবীরের বিরুদ্ধ শিবির বলে স্থানীয় স্তরে চিহ্নিত খেয়াদহ- ২ পঞ্চায়েতের সদস্য বাসুদেব মণ্ডল বলেন, ‘‘আমার কোন গোষ্ঠী নেই। আমি দলের নির্দেশ অনুযায়ী চলি। প্রবীরবাবুর বিরুদ্ধে স্থানীয় বাসিন্দাদের নানা অভিযোগ। সেটা দলের উচ্চ নেতৃত্ব ও প্রশাসন দেখবে। সে বিষয়ে আমার বক্তব্য নেই।’’
তবে স্থানীয় দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্যে শিশুদের উপরে হামলার গুরুতর দিকটি অস্বীকার করতে পারছে না স্থানীয় প্রশাসন। শুক্রবার রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের প্রতিনিধিরা ঘটনাস্থল, স্থানীয় থানা এবং এম আর বাঙুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশুদের দেখতে গিয়েছিলেন। জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের তরফেও একটি প্রতিনিধি দল শনিবার এলাকার লোকজন এবং জখম শিশুদের বাড়িতে গিয়ে কথা বলেন। রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুদেষ্ণা রায় এ দিন বলেন, “বড়দের যে কোনও গোলমালেই ছোটদের উপরে হামলা অনভিপ্রেত। বাচ্চাদের চিকিৎসা, মানসিক শুশ্রূষা দু’টি দিকেই আমরা নজর রাখছি। আশা করছি, পুলিশ তৎপর হয়ে দ্রুত তদন্তের নিষ্পত্তি করবে।”
বোমা মজুত রাখার অপকর্মে কয়েক জন নাবালক হঠাৎ দুষ্কৃতীদের নিশানা হল কেন? পুলিশের একটি সূত্র বলছে, বাচ্চাদের কাছ থেকে যা বয়ান মিলেছে, বাচ্চারা আপাত পরিত্যক্ত টিনের ঘরটিতে বোমার আড়তে ঢুকে পড়লে তাদের ভয় দেখিয়ে সরানোর মতলব ছিল বলেই মনে হচ্ছে। দুষ্কৃতীদের মধ্যে কেউ বলেও, ওরা বাচ্চা, কিছু করিস না! কিন্তু মত্ত অবস্থায় কোনও এক জন বোমা ছোড়ে। সেই বোমার টুকরো বাচ্চাদের গায়ে বিঁধেই ঘটে বিপত্তি। সোনারপুর উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক ফিরদৌসি বেগমও এ দিন জখম নাবালকদের বাড়িতে দেখা করেন। পুলিশ দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে তিনিও আশ্বাস দিয়েছেন।
পাশাপাশি, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এ দিন বলেন, “শিশু থেকে বৃদ্ধ কারও এই বাংলায় নিরাপত্তা নেই। তৃণমূলের মারামারি আরও বাড়বে। তার ফল ভুগতে হবে সমাজকে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy