বর্ষা হাঁসদা (৩৮)-র ঝুলন্ত দেহ। —নিজস্ব চিত্র।
আবার গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় মিলল বিজেপি কর্মীর দেহ। আবার রাজ্যের সেই পশ্চিমাঞ্চলেই, পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনে। শুক্রবার সকালে ঝুলন্ত দেহটি মেলার পর থেকেই উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে দাঁতনের পরিস্থিতি। রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছে বিজেপি। তৃণমূল অবশ্য বলছে, এটি একটি আত্মহত্যা। যাঁর মৃত্যু হয়েছে, তিনি বিজেপি কর্মীও ছিলেন না বলে জেলা তৃণমূলের দাবি। কিন্তু পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক দিন আগে দাঁতনে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষের পরে যাঁদের বিরুদ্ধে তৃণমূল অভিযোগ দায়ের করেছিল, মৃত বর্ষা হাঁসদা (৩৮) তাঁদের অন্যতম।
লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই দাঁতন উত্তপ্ত। বার বার তৃণমূল আর বিজেপির মধ্যে গোলমালের খবর এসেছে দাঁতন থেকে। ভোটের পরেও বিভিন্ন সময়ে বিক্ষিপ্ত অশান্তি হয়েছে। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে একটানা অশান্তি চলছে দাঁতনে। মঙ্গলবার তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল বলেও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।
সেই সংঘর্ষের পরে দু’পক্ষই পুলিশে অভিযোগ করে। বিজেপির বেশ কয়েক জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। বিজেপি কর্মীরা অবরোধ শুরু করার পরে পুলিশ তাঁদের ছেড়ে দেয় বলে জেলা বিজেপি সভাপতি সমিত দাসের দাবি। কিন্তু অশান্তি তাতে থামেনি। এলাকায় উত্তেজনা ছিল। আজ সকালে সন্তোষপুরে একটি গাছে বর্ষা হাঁসদার ঝুলন্ত দেহ মেলার পর থেকে আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দাঁতন।
আরও পড়ুন: রত্নায় আপত্তি, সরকারি আমন্ত্রণ ফেরাচ্ছেন শোভন, আজ যাচ্ছেন না চলচ্চিত্র উৎসবের সমাপ্তিতে
জেলা বিজেপি সভাপতি এ দিন বলেছেন, ‘‘বৃহস্পতিবার সন্তোষপুর এলাকায় বিজেপি কর্মীদের একটা পিকনিক ছিল। পিকনিকের পরে রাতে আর বর্ষা হাঁসদা বাড়ি ফেরেননি। আজ সকালে তাঁর ঝুলন্ত দেহ মিলল।’’ রাতের অন্ধকারে তৃণমূলের লোকজনই তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল বলে বিজেপির অভিযোগ। খুন করে দেহ গাছে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে তাঁরা দাবি করছেন।
লোকসভা নির্বাচনের আগে কিন্তু প্রায় একই ভাবে একের পর এক বিজেপির কর্মীর ঝুলন্ত দেহ মিলতে শুরু করেছিল পুরুলিয়া থেকে। ত্রিলোচন মাহাতো, দুলাল কুমার এবং শিশুপাল সহিস— দু’জনের দেহ মিলেছিল গাছে ঝুলন্ত অবস্থায়, আর এক জনের দেহ ঝুলছিল হাইটেনশন লাইনের টাওয়ার থেকে। তা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হয়েছিল। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারাও তীব্র আক্রমণ করতে শুরু করেছিলেন তৃণমূল এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনকে। ভোট মেটার মাস ছয়েক পরে ফের দাঁতনে একই রকম ভাবে ঝুলন্ত দেহ মিলল।
তৃণমূলের দাবি, এই মৃত্যুর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগই নেই। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের সভাপতি অজিত মাইতি বলেছেন, ‘‘পারিবারিক কারণে ওই ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছেন। এটা কোনও খুনও নয়, এর পিছনে কোনও রাজনীতিও নেই।’’ যাঁর দেহ ঝুলন্ত অবস্থায় মিলেছে, তিনি কোনও কালেই বিজেপি কর্মী ছিলেন না বলেও অজিত মাইতি দাবি করেন।
কিন্তু পুলিশে যে অভিযোগ দায়ের করেছে তৃণমূল, তা কিন্তু দলের জেলা সভাপতির দাবিকে সমর্থন করছে না। মঙ্গলবার দাঁতনে দু’দলের সংঘর্ষের পরে তৃণমূলের তরফে যে অভিযোগ দায়ের করা হয় বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে, তাতে এই বর্ষা হাঁসদার নাম রয়েছে। বর্ষা হাঁসদার সঙ্গে যদি রাজনীতির কোনও সম্পর্কই না থাকে, তা হলে তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূল থানায় অভিযোগ করেছিল কেন? প্রশ্ন তুলছে বিজেপি।
আরও পড়ুন: বনগাঁ লোকালে সবজির ব্যাগে ৯৬ লাখ টাকার সোনার বিস্কুট! গ্রেফতার তিন
খুন, না আত্মহত্যা? এ বিষয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশকর্তারা এখনও কোনও মন্তব্য করেননি। জেলার পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার বলেছেন, ‘‘আমরা সব দিকই খতিয়ে দেখছি। ময়নাতদন্তের রিপোর্টটা আসা পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করছি। রিপোর্ট এলে অনেক কিছু স্পষ্ট হয়ে যাবে।’’
তবে পুলিশে ভরসা নেই বিজেপির। বর্ষা হাঁসদার ঝুলন্ত দেহ মেলার পর থেকেই দাঁতনে বিক্ষোভ শুরু করেছে তারা। রাস্তা অবরোধ করে রাখা হয়েছে দীর্ঘ ক্ষণ। রাস্তায় আগুন জ্বলতেও দেখা গিয়েছে। জেলা বিজেপির সভাপতি সমিত দাস বলেন, ‘‘দাঁতনের আইসি পুরোপুরি তৃণমূলের নির্দেশে কাজ করছেন। সুতরাং পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত করবে বলে আমরা মনেই করি না।’’
শুধু বিজেপি অবশ্য নয়, বর্ষা হাঁসদার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হতেই জনজাতি সমাজের সংগঠনও প্রতিবাদে শামিল হয়েছে। মাঝি-মাড়ওয়াদের সংগঠনের নেতারাও এ দিন দাঁতনে গিয়েছেন। বিক্ষোভ আরও বড় আকার নেওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
তবে তৃণমূলের অজিত মাইতি বলছেন, ‘‘সবই বিজেপির নাটক। বাজার গরম করতে চাইছে। খড়্গপুর সদরের উপনির্বাচনে যে ক্রমশ বিজেপি পিছিয়ে পড়ছে, তা দিলীপ ঘোষরা বুঝতে পেরেছেন। তাই একটা আত্মহত্যাকে খুন বলে চালিয়ে দিয়ে বাজার গরম করতে চাইছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy