গত ডিসেম্বর মাসে মারিশদায় গিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার যাচ্ছেন বিজেপি নেতৃত্ব। — ফাইল চিত্র।
গত ডিসেম্বরে কাঁথি যাওয়ার পথে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মারিশদা গ্রামে গিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শাসকদলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদককে কাছে পেয়ে অনেক ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। এ বার সেই গ্রাম থেকে বিজেপি শুরু করছে দলের যুব শাখার ‘গ্রাম সম্পর্ক অভিযান’ কর্মসূচি। গেরুয়া শিবির সূত্রে খবর, সোমবার বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি ইন্দ্রনীল খাঁ যাবেন ওই গ্রামে। সেখানে গ্রামবাসীদের উদ্যোগে বিজেপি নেতাদের মধ্যাহ্নভোজেরও আয়োজন করা হয়েছে বলে দাবি বিজেপির। ওই দলে থাকবেন খেজুরির বিজেপি বিধায়ক শান্তনু প্রামাণিকও।
গত ৩ ডিসেম্বর কাঁথিতে সভা ছিল অভিষেকের। সভাস্থলে যাওয়ার আগেই তাঁর কনভয় থামে মারিশদার থানা এলাকার অন্তর্গত একটি গ্রামে। অভিষেককে থামতেই তাঁকে দেখতে দৌড়ে চলে আসেন মহিলা ও শিশু-সহ বহু মানুষ। অনেকে জড়ো হতেই তাঁদের সঙ্গে আলাপচারিতা শুরু করেন সর্বভারতীয় তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক। অনেকেই তাঁকে নিজেদের অভাব-অভিযোগের কথা বলেন। অভিষেক প্রশ্ন করেন, ‘‘রেশন পান?’’ সমস্বরে তার জবাব আসে, ‘‘রেশন পাই। কিন্তু অনেক সরকারি ভাতাই পাই না।’’ জলনিকাশির খারাপ অবস্থার কথা বলেন এক মহিলা। অভিষেক তাঁকে বলেন, ‘‘চলুন, দেখে আসি।’’ তার পরই ওই মহিলার সঙ্গে হাঁটা দেন গ্রামের ভিতরে। পিছন পিছন অন্য মহিলারা। যোগাযোগের জন্য চেয়ে নেন ফোন নম্বর। পাশাপাশি, তাঁদের সকলকে সাহায্যের আশ্বাস দেন। বলেন, ‘‘আমি দেখে গেলাম। যা করার করব। আমি যখন তখন চলে আসব। এক কাপ চা খেয়ে যাব।’’
সেখানেই সব শেষ হয়ে যায় না। মারিশদা থেকে কাঁথিতে গিয়েই সভামঞ্চ থেকে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান, উপপ্রধান এবং অঞ্চল সভাপতিকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ইস্তফা দেওয়ার নির্দেশ দেন অভিষেক। সেই নির্দেশের পরে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই কাঁথি ৩ নম্বর ব্লকের মারিশদা ৫ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ঝুনুরানি মণ্ডল, উপপ্রধান রমাকৃষ্ণ মণ্ডল এবং অঞ্চল সভাপতি গৌতম মিশ্র ইস্তফা দেন।
রাজনীতির নতুন অঙ্গন হয়ে উত্তর কাঁথি বিধানসভার মারিশদা গ্রাম। যুব মোর্চা যখন ‘গ্রাম সম্পর্ক অভিযান’ কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেয় তখনই আনন্দবাজার অনলাইন জানিয়েছিল বিজেপির প্রধান লক্ষ্য হবে সেই সব গ্রাম যেখানে গিয়ে তৃণমূলের নেতা, মন্ত্রী, সাংসদরা ক্ষোভের মুখে পড়েছেন। সেই হিসাবেই কি মারিশদা বাছা হয়েছে? এই কর্মসূচির পরিকল্পনা নিয়ে খেজুরির বিজেপি বিধায়ক শান্তনু বলেন, ‘‘রাজ্যের সর্বত্রই সরকারি প্রকল্পের সুবিধা থেকে গরিব মানুষকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আর সেটা অনেক বেশি করে হয়েছে বিজেপির জেতা এলাকায়। গত বিধানসভা নির্বাচনে উত্তর কাঁথি বিজেপি জিতেছে। এই এলাকায় অধিকাংশ রাস্তাই কাঁচা রয়ে গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার সুযোগ পাননি বহু মানুষ। সেই কারণেই এই এলাকা বাছা হয়েছে কর্মসূচির সূচনায়।’’ বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার প্রথম দফার গ্রাম সম্পর্ক অভিযানের সূচনা করবেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত। এই দফায় লক্ষ্য ৫০০ গ্রামে যাওয়া। এখনও পর্যন্ত যা ঠিক হয়েছে তাতে আগামী ৬ মার্চ বনগাঁর একটি গ্রামে প্রথম দফার কর্মসূচির শেষ দিনে হাজির থাকবেন যুব মোর্চার সর্বভারতীয় সভাপতি তেজস্বী সূর্য।
শান্তনু যাই বলুন, রাজনৈতিক ভাবেই মারিশদা গ্রামকে বাছা হয়েছে। ওই গ্রামে একটি রাধামাধব মন্দির রয়েছে। সোমবার সপার্ষদ সেই মন্দিরে পুজো দিয়ে গ্রামে ঢুকবেন সুকান্ত, ইন্দ্রনীল। এর পরে বাড়ি বাড়ি যাওয়া হবে। যা ঠিক হয়েছে তাতে গ্রামের শিবমন্দিরের সামনে একটি ‘উঠোন বৈঠক’ করা হবে। সেখানে বসে সুকান্ত গ্রামের মানুষের অভাব-অভিযোগ শুনবেন। গ্রামের পরিস্থিতির ছবিও তুলে রাখবেন বিজেপি নেতারা। কোন পরিবার কী কী সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত তা জানার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পের ক্ষেত্রে কোনও দুর্নীতি হয়েছে কি না তারও খোঁজ নেওয়া হবে। দুপুরে গ্রামবাসীদের সঙ্গে বিজেপি নেতৃত্বের খাওয়াদাওয়ার কর্মসূচিও রয়েছে।
সোমবারের কর্মসূচি নিয়ে ইন্দ্রনীল বলেন, ‘‘স্থানীয় নেতারা গোটা কর্মসূচি সাজিয়েছেন। আমরা বৈঠক ছাড়াও মানুষের বাড়ি বাড়ি যাব। দেখব তাঁদের দুর্দশার কথা। আমাদের কাছে এমন অভিযোগও এসেছে যে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে যাঁরা ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন তাঁদের অনেককেই শাসকদলের রক্তচক্ষুর সামনাসামনি হতে হচ্ছে। তাঁদের যে কোনও ক্ষতি কেউ করতে পারবে না সেই আশ্বাসও আমরা দেব। তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও তৃণমূল না করার জন্য যাঁরা পাকা বাড়ি বানানোর সুযোগ থেকে বঞ্চিত তাঁদের সমস্যা সমাধানের জন্যও আমরা লড়ব।’’
ওই গ্রামে গিয়ে অভিষেক বলেছিলেন, ‘‘আমি যখন তখন চলে আসব। এক কাপ চা খেয়ে যাব।’’ সেই প্রসঙ্গে টেনে ইন্দ্রনীল বলেন, ‘‘তিনি আর গেছেন বলে শুনিনি। তবে আমাদের নেতা, কর্মীরা নিয়মিত যান সেখানে। গ্রামবাসীরাই চেয়েছেন আমরা যেন যাই। তাঁরাই আমাদের গ্রামে গিয়ে দুপুরে খাওয়াদাওয়ার জন্য নিমন্ত্রণ জানিয়েছেন। প্রায় গোটা দিনই আমরা মারিশদায় কাটাব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy