রাজ্যকে এক কোটির লক্ষ্য বেঁধে দিলেন অমিত শাহ। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
সদস্য সংগ্রহ অভিযানে নেমে কিছুটা এগোলেও এখনও অনেক পথ বাকি রাজ্য বিজেপির। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এক কোটি সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছেন। উৎসবের আবহ শেষে ঠিকঠাক শুরু হওয়া অভিযানে এখনও পর্যন্ত দলের নেতা-কর্মীদের ‘সদস্যতা’ নবীকরণ সম্ভব হলেও নতুন লোককে সে ভাবে দলে টানা যায়নি। তাই এ বার নতুন ১১টি ‘ক্ষেত্র’ চিহ্নিত করে লক্ষ্যপূরণের লক্ষ্য নিয়েছে রাজ্য বিজেপি। অভিযানের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচাৰ্য সেই ১১টি ক্ষেত্রের দায়িত্ব ভাগ করে দিয়েছেন নেতাদের মধ্যে। দলের পক্ষে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, অতীতে বিজেপির সদস্য হননি, এমন লোকজনকে সংগঠনে টেনে আনতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনে কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জনবহুল এলাকায় ক্যাম্প করে সদস্য সংগ্রহ করতে হবে।
গত লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই রাজ্য বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতা প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে। ২০২১ সালের ‘নীলবাড়ির লড়াই’ এবং ২০২৪ সালের ‘দিল্লিবাড়ির লড়াই’য়ে বাংলায় আশাভঙ্গের ফল উপর থেকে নিচুতলার সংগঠনে যে হতাশার পরিবেশ তৈরি করেছে তাতে এক কোটি সদস্য সংগ্রহ কঠিন। তবে আশাবাদী শমীক বলেন, ‘‘বিজেপি পরিকল্পনামাফিক কাজ করে। ফলে কোনও কিছুই কঠিন নয়। বিশ্বের সব চেয়ে বড় ভোটকুশলী অমিত শাহ যে লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছেন, তা বাস্তবসম্মত বলেই দিয়েছেন।’’ নভেম্বর মাসের মধ্যে লক্ষ্যপূরণ না হলে প্রয়োজনে আরও কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে এক কোটির লক্ষ্য তাঁরা টপকে যাবেন বলে আশা করছেন শমীক। তবে কবে সব শেষ হবে, তার দিনক্ষণ নির্দিষ্ট করে বলতে চাননি তিনি।
বিজেপি যে অনেকটাই পিছিয়ে, সেটা স্পষ্ট গত শুক্রবার শমীকের সাংগঠনিক দায়িত্ব বন্টনে। শমীকের ওই তালিকায় নতুন সদস্য টানতে ১১টি ক্ষেত্র উল্লেখ করা হয়েছে— কলেজ পড়ুয়া, মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী, চা বাগানের কর্মী, পঞ্চায়েত নির্বাচনে লড়াই করে জয়ী ও পরাজিত, মঠ-মন্দিরের পুজারী, খেলোয়াড় ও ক্লাব, অটো ড্রাইভার ও হকার, উদ্বাস্তু, শিল্প-সাহিত্য-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্র, বিভিন্ন ক্ষেত্রের পেশাদার এবং বস্তি এলাকা। ওই ১১টি ক্ষেত্রে গিয়ে নতুন সদস্য আনতে হবে বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রের জন্য একাধিক নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সোমবার থেকে শুরু করে আগামী ১০ দিনের মধ্যে নেতাদের তাঁদের জন্য নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের প্রতিনিধিদের বিজেপির সদস্য করতে হবে বলে নির্দেশ। যাঁরা দায়িত্ব পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রাজ্য স্তরের নেতা থেকে প্রাক্তন সাংসদ, বিধায়ক এবং বিভিন্ন নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থীরাও রয়েছেন। দায়িত্বপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী। আবার মঠ-মন্দিরে যোগাযোগের জন্য প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়। বস্তি এলাকার জন্য বৈশালী ডালমিয়া।
গত ২ সেপ্টেম্বর গোটা দেশে বিজেপির ‘সদস্যতা অভিযান’ কর্মসূচি শুরু হয়। বাংলায় আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে নাগরিক আন্দোলন এবং শারদোৎসব থাকায় সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে সে ভাবে কর্মসূচি শুরু হয়নি। ২৭ অক্টোবর কলকাতায় এসে অভিযানের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন অমিত শাহ। রাজ্যে বিজেপির সাংগঠনিক ভাগ অনুযায়ী এক একটি বিধানসভা এলাকা চার বা পাঁচটি মণ্ডল থাকে। বাংলায় এমন সাংগঠনিক মণ্ডল ১,৩৪৩টি। দল লক্ষ্য ঠিক করেছে, প্রতিটি মণ্ডলে ১০০ জন সক্রিয় সদস্য করা হবে। সক্রিয় সদস্য হওয়ার লক্ষ্যে দলের জেলা স্তরের নেতারা ইতিমধ্যেই ১০০ করে প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ করেছেন। কারণ, এক জন সক্রিয় সদস্যকে কমপক্ষে ১০০ জন প্রাথমিক সদস্য করতে হবে। সেই হিসাবেই প্রতি মণ্ডলে ১০ হাজার সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্য। তবে আপাতত এক হাজারের কিছু বেশি মণ্ডলে লক্ষ্যপূরণের লক্ষ্য নিয়েছে বিজেপি।
বিভিন্ন নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গিয়েছে, রাজ্যের ৩০০টির মতো মণ্ডলে বিজেপির তেমন শক্তি নেই। সেগুলি বাদ দিয়ে বাকি এক হাজার মণ্ডলে ১০০ সক্রিয় সদস্য ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছেন বলে রাজ্য বিজেপি সূত্রের দাবি। ফলে সেখান থেকে ১০ লাখ সদস্য সংগ্রহ হয়েছে। এর পরে প্রতি সাংসদকে ১০ হাজার এবং প্রতি বিধায়ককে পাঁচ হাজার সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্য দেওয়া হয়। তবে সে সব হয়ে গেলেও লক্ষ্যের থেকে দূরেই থাকবে রাজ্য বিজেপি।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে শেষ বার সদস্য সংগ্রহ অভিযানে বাংলায় বিজেপির ৮৮ লাখ সদস্য হয়েছিল বলে দাবি। তবে সেই সময়ে বিজেপিকে নিয়ে যে ‘আশার পরিবেশ’ তৈরি হয়েছিল, এখন তা নেই। দলের সাংসদ, বিধায়কের সংখ্যা বাড়লেও সংগঠনে হতাশাও বেড়েছে। ফলে আদতে এক কোটি ছোঁয়া যাবে কি না তা নিয়েও দলের মধ্যেও সংশয় রয়েছে। তবে সোমবার থেকে বিশেষ অভিযান ঠিকঠাক চললে এক কোটি সদস্য হয়ে যাবে বলে দাবি বিজেপির। দলের পরিকল্পনা, এখন থেকে কলকাতা-সহ জেলায় জেলায় শপিং মল, কলেজ গেট, বাজার, প্রাতর্ভ্রমণে বার হওয়া মানুষের কাছে যাওয়ার জন্য ক্যাম্প করে সদস্য সংগ্রহ হবে। কলকাতায় ইতিমধ্যেই সে কাজ শুরু হয়েছে জানিয়ে বিজেপির রাজ্য যুব সভাপতি ইন্দ্রনীল খাঁ বলেন, ‘‘আমরা সব মানুষের কাছে যাচ্ছি। বিজেপির কথা, কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের কথা এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শ্রেষ্ঠ ভারত গঠনের লক্ষ্যের কথা বলছি। মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই সদস্য হচ্ছেন।’’
বিজেপি সূত্রের দাবি, রাজ্যে দলের ভোটব্যাঙ্ক হিসাবে পরিচিত মতুয়া, রাজবংশী এবং বিভিন্ন আদিবাসী ও জনজাতি সম্প্রদায়ের মধ্যে সদস্য সংগ্রহ অভিযান সাড়া ফেলেছে। তবে শহুরে বস্তি এলাকায় ততটা হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন এমন মানুষদের কাছে যাওয়ার লক্ষ্যও নিয়েছে বিজেপি। সেই সঙ্গে বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে পেশাজীবীদের টানার কাজে। শিক্ষক, অধ্যাপক থেকে চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়র বা আইনজীবী এবং বিভিন্ন ধরনের শিল্পীদেরও সদস্য করতে চায় বিজেপি। সে কারণে শমীক যে ১১টি ক্ষেত্রের জন্য দায়িত্ববণ্টন করেছেন, তার মধ্যে সব চেয়ে বেশি নেতাকে রাখা হয়েছে এই ক্ষেত্রে। বাকি ১০টিতে সর্বোচ্চ চার জন থাকলেও এই ক্ষেত্রে দায়িত্ব পেয়েছেন ১২ জন। ১০টি ক্ষেত্রে যাঁরা দায়িত্ব পেয়েছেন তাঁদের দু’দিনের প্রশিক্ষণও দিয়ে গিয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সম্পাদক ঋতুরাজ সিংহ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy