গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ
গঙ্গাপারের নীলবাড়ি দখলের লক্ষ্যে সাতসাগর পারেও ভার্চুয়াল পাড়ি জমাতে চায় বিজেপি। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা অনাবাসী বাঙালিকে টানার লক্ষ্য নিয়েছে গেরুয়া শিবির। ইতিমধ্যেই তার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশ মতো সেই কমিটি কাজও শুরু করে দিয়েছে। শুরুতে খোঁজ চলছে, কোন দেশের কোথায় কোন বাঙালি বিজেপি-র বঙ্গদখলের লড়াইয়ে শরিক হতে চান। সেই তালিকা তৈরির পর কী কী করতে হবে তারও বিস্তারিত নির্দেশ দিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। বাংলার বিধানসভা নির্বাচনের জন্য অনাবাসীদের পাশে টানার এই কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে ‘এনআরআই ফর সোনার বাংলা’।
কিন্তু কেন এই কর্মসূচি? বিজেপি কি চাইছে যে, অনাবাসীরা ভোটের সময়ে ইভিএম-এর বোতাম টিপতে বাংলায় আসুন? প্রথমে এমন পরিকল্পনার কথা শুনে রাজ্য নেতাদের অনেকের মনে এমন প্রশ্ন জেগেছিল। তাঁদের দিল্লির নেতারা জানান, একটি ভোট লক্ষ্য নয়। এক একজন অনাবাসীর মাধ্যমে অনেক ভোট পাওয়ার জন্যই এই উদ্যোগ। উদাহরণ হিসেবে বলা হয় জয়নগর, বহরমপুর বা হলদিবাড়ির যিনি কর্মসূত্রে বা অন্য কারণে ভিনদেশে থাকেন, তাঁর সামজিক প্রতিষ্ঠাকে কাজে লাগাতে হবে। কেন্দ্রীয় নেতাদের দাবি, বিদেশে প্রতিষ্ঠিত কেউ বাংলার ভোট নিয়ে কথা বললে তার ‘প্রভাব’ পড়বে। বিদেশে বসবাসকারী পরিচিতের মতামত অনেক সময়েই পরিবারে বেশি গুরুত্ব পায়। আত্মীয়-পরিজন তো বটেই, প্রতিবেশিরাও অনেক ক্ষেত্রে গর্ব অনুভব করেন অনাবাসীদের নিয়ে। সেই আবেগটাই কাজে লাগাতে চায় বিজেপি। তার জন্য অনেক দূরে-থাকা মানুষটিকে দিয়ে নিজের ছেড়ে যাওয়া পাড়া, মহল্লা, বিধানসভা এলাকার সমস্যার কথা বলাতে হবে। ২৫ হাজার মানুষ গড়ে ১০ জনকে প্রভাবিত করতে পারলে সংখ্যাটা দাঁড়াবে আড়াই লাখ।
আরও পড়ুন
নীলবাড়ির লক্ষ্যে মমতা-মোকাবিলা, বঙ্গ বিজেপির বাছাই একাদশ
২০১৪ কিংবা ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগেও অনাবাসী ভারতীয়দের প্রভাব কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু নিছক কোনও অঙ্গরাজ্যের নির্বাচনে এমন আগে করা হয়েছে বলে রাজ্য নেতারা মনে করতে পারছেন না। আপাতত তাঁদের কাছে নির্দেশ, কেন্দ্রীয় নেতারা যে ভাবে বলবেন, সে ভাবে কাজ করে যাওয়া। বিজেপি সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে রাজ্যে বিষয়টি দেখবেন শিবপ্রকাশ। এর জন্য বাংলায় একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছে। তার মাথায় রয়েছেন বিজেপি-র রাজ্য কমিটির সদস্য তথা প্রাক্তন ফুটবলার কল্যাণ চৌবে।
রাজ্য বিজেপি সূত্রে খবর, শিবপ্রকাশ বৈঠক করে ওই কর্মসূচি সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ নির্দেশ দিয়েছেন। সেখানে বলা হয়েছে, বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে অনাবাসী ভারতীয়দের একটি তালিকা রয়েছে। তাতে আড়াই লাখের বেশি মানুষের নাম রয়েছে। সেই তালিকা বাংলার নেতাদের দেওয়া হবে। সেখান থেকে বাংলার মানুষদের খুঁজে বার করা হবে প্রথম কাজ। তার পরে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ। দেখতে হবে কারা বাংলার নির্বাচন নিয়ে উৎসাহী, কারা পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতার পরিবর্তন চান। সেই তালিকা তৈরি হলে ৫০ জন করে অনাবাসীকে নিয়ে আলাদা আলাদা গ্রুপ বানাতে হবে। টাইম জ়োনের হিসাবে তৈরি হবে গ্রুপ। কোথায় কোন সময় কথা বলার জন্য সঠিক, তা জেনে দিনে অথবা রাতে ‘ওয়েবনিয়ার’ করতে হবে। প্রতিটি গ্রুপের সঙ্গে সেই ‘ওয়েবনিয়ারে’ কথা বলবেন বাংলার নেতারা। ভিডিয়ো, ছবি, গ্রাফিকের মাধ্যমে বোঝাবেন বাংলায় কেন পরিবর্তন দরকার। জানা গিয়েছে, আপাতত ৪ জনের কমিটি তৈরি হলেও ‘এনআরআই ফর সোনার বাংলা’ কর্মসূচির জন্য বড় টিম বানাচ্ছে বিজেপি। তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞানসম্পন্ন কর্মীদের নেওয়া হবে সেই টিমে।
কিন্তু অনাবাসী বাঙালিরা কেন বিজেপি-র হয়ে কথা বলবেন?
বাংলার জন্য তৈরি কমিটির প্রধান কল্যাণ চৌবে আনন্দবাজার ডিজিটালকে বলছেন, ‘‘অবশ্যই বলবেন। কারণ, বিদেশে বসবাসকারীদের মধ্যে আপনা থেকেই জাতীয়তাবোধ নিয়ে প্রেম তৈরি হয়। তাঁরা রাষ্ট্রপ্রেমের কথা বলেন। বিজেপি-ও রাষ্ট্রপ্রেমের কথা বলে।’’ রাষ্ট্রপ্রেমের কথা বললেও বঙ্গ বিজেপি-র জন্য কেন ভোট চাইতে যাবেন তাঁরা? কল্যাণের বক্তব্য, ‘‘আমরা তাঁদের ভোট চাইতে বলব না। আমরা চাই, বিদেশ থেকেও তাঁরা তাঁদের নিজের রাজ্য, নিজের শহর নিয়ে কথা বলুন। বাংলায় যে ভাবে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করেছে তৃণমূল, সেটা নিয়ে কথা বলুন। অন্য রাজ্যের তুলনায় বাংলা শিল্প ক্ষেত্রে কেন পিছিয়ে পড়ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলুন অনাবাসীরা।’’ কল্যাণ আরও জানিয়েছেন, পরিসংখ্যান-সহ বাংলার বর্তমান পরিস্থিতি অনাবাসী বাঙালিরদের জানানোর জন্য ইতিমধ্যেই ভিডিয়ো, গ্রাফিক ইত্যাদি তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। দেশে বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলির তুলনায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান ঠিক কেমন, সেটা তুলে ধরাও হবে এই প্রচারের অংশ।
কল্যাণের আরও বক্তব্য, ভারতীয় দলের হয়ে ২৩টি দেশে খেলতে গিয়েছেন তিনি। সেই সূত্রে বহু অনাবাসী বাঙালির সঙ্গেই তাঁর যোগাযোগ রয়েছে। বিভিন্ন দেশের বেশ কয়েকটি বাঙালি সংগঠনের সঙ্গেও তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ আছে। ভিনদেশে প্রকাশিত বাংলা পত্রপত্রিকায় লেখালেখিও করেন তিনি। কল্যাণের বক্তব্য, শুধু তিনি নন, বিজেপি-তে এমন অনেকেই আছেন, যাঁদের সঙ্গে অনাবাসী বাঙালিদের যোগাযোগ রয়েছ। সেই যোগাযোগও কাজে লাগানো হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy