ফাইল চিত্র।
তৃণমূল সভাপতি তথা মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে সিবিআই নোটিস দেওয়ার ঘটনায় ভোটের মুখে শাসক দলের বিরুদ্ধে সুর চড়াল বিজেপি। বিরোধী বাম ও কংগ্রেস অভিযোগের যথাযথ তদন্ত চেয়েও অভিযোগ করেছে, ভোট এলেই কেন্দ্রীয় সংস্থার তৎপরতা বেড়ে যায়। এর মধ্যে ‘গড়াপেটার খেলা’ আছে বলেই তাদের অভিযোগ।
সিবিআইয়ের নোটিস এবং তার প্রেক্ষিতে নাম না করে কেন্দ্রের প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুঁশিয়ারি প্রসঙ্গে রবিবার বাঁকুড়ার কোতুলপুরে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের মন্তব্য, ‘‘দিদিমণির বাড়িতে আগুন লেগেছে! ভয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি করে যা নয়, তা-ই বলছেন। চোর ধরেছে সিবিআই, ভয় পেয়েছে দিদিভাই!’’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ থেকে শুরু করে বিজেপির সব নেতাই ইদানীং ‘ভাইপো’র বিরুদ্ধে সরব। কিছু দিন আগে তমলুকে একটি সভায় অধুনা বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী তাইল্যান্ডের ব্যাঙ্ককের কাশিকর্ন ব্রাঞ্চে টাকা জমা পড়ার কথা বলে অভিষেকের দিকে ইঙ্গিত করেছিলেন। পরে বারুইপুরের একটি সভায় তিনি একটি নথিও দেখিয়েছিলেন। সিবিআই অভিষেকের স্ত্রীর নামে নোটিস দেওয়ার পরে এ দিন আসানসোলে শুভেন্দুর বক্তব্য, ‘‘আজকে কয়লার রাজধানীতে এসেছি। আর কাকতালীয় ব্যাপার, আজকেই কয়লা-চোরের বাড়িতে সিবিআই ঢুকেছে! শুধু নোটিস দিলেই হবে না। সিবিআই-কে বলছি, ব্যবস্থা নিতেই হবে।’’
শুভেন্দুর আরও বক্তব্য, ‘‘এজেন্সি তার আইন অনুযায়ী কাজ করবে। তা নিয়ে মন্তব্য করব না। কিন্তু আসানসোলের আট থেকে আশি সকলেই জানেন, লালার (অনুপ মাজি) টাকা কারা নিত। সেই টাকা যে তোলাবাজ ভাইপোর বাড়িতে গিয়েছে, সবাই জানেন।’’ তার পরেই শুভেন্দুর ব্যাখ্যা, ‘‘আমি তমলুকের একটা সভায় বলেছিলাম, তাইল্যান্ডের ব্যাঙ্ককের কাশিকর্ন ব্রাঞ্চে টাকা (ভাট) জমা পড়ত। তার পরে বারুইপুরের সভায় আমি ডকুমেন্ট দেখিয়েছি। কী ভাবে তা, আমার কাছে এসেছে বলব না। ম্যাডাম নারুলা কে, ক্রমশ্যই প্রকাশ্য। আমি যা মিডিয়াতে দেখলাম, ওঁর স্ত্রী হচ্ছেন ম্যাডাম নারুলা। শুধু কয়লার টাকা যে ওখানে গিয়েছে, তা নয়। বালি, পাথর— লালাবাবুর সব টাকা ওখানে ঢুকেছে, এটা প্রমাণিত সত্য।’’
অভিষেক কিছু দিন আগে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ কেউ প্রমাণ করতে পারলে তিনি হাঁটতে হাঁটতে ফাঁসির মঞ্চে যাবেন। সেই প্রসঙ্গ তুলে এ দিন শুভেন্দুক খোঁচা, ‘‘বলছেন, আমি হাঁটতে হাঁটতে ফাঁসির মঞ্চে যাব। আমরা ফাঁসি চাই না। আমরা চাই, মানুষ দেখুক, কী ভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে। আসানসোল, রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া, বারাবনি এই এলাকায় বেআইনি কয়লা জনজীবনকে শেষ করে দিয়ে গিয়েছে। নীচটা ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। যে কোনও দিন পুরো এলাকা ধসে যাবে। এই পাপের শাস্তি হবেই!’’
বাম ও কংগ্রেস নেতারা অবশ্য বিজেপি ও তৃণমূল, দু’পক্ষকেই বিঁধছেন। বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রাতের দিকে আসানসোল থেকে কালো কাচে ঘেরা গাড়িগুলো বেরিয়ে কলকাতায় কোন ঠিকানায় যায়, কারা নিয়ন্ত্রণ করে এ সব, মুখ্যমন্ত্রীরই এ ব্যাপারে তদন্ত করা উচিত ছিল। কিন্তু রাজ্য পুলিশ সেটা না করায় সিবিআই এখন ভোটের আগে এগুলোকে ব্যবহার করার সুযোগ পেয়েছে।’’ তবে তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘এই সব অভিযোগ এখন নতুন উঠল না। ভোট এলেই সিবিআই বা অন্য কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তের গতি বাড়বে আর অন্য সময় ঝিমিয়ে পড়বে, এটা চলতে পারে না।’’ বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘কেন্দ্রের বিজেপি সরকার তাদের হাতের পুতুল সিবিআইকে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপোর বাড়িতে হানা দিয়ে ভোটের আগে দেখাতে চাইছে, তারা কত বড় তৃণমূল-বিরোধী। বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোট যত শক্তিশালী হবে, মানুষ তত এ রকম নানা নাটক দেখতে পাবে।’’
বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য আবার পাল্টা বলেছেন, ‘‘কোনও কেলেঙ্কারি নিয়ে সিবিআই তদন্তের গতি বাড়লেই বলা হয় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত! আর তদন্ত শ্লথ হলেই বলা হয়, দিদি-মোদী গট আপ! এ তো ভারী মুশকিল! সিবিআইকে তার কাজটা তো করতে হবে!’’ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ও এ দিন আসানসোলে বলেছেন, ‘‘কাদের মাধ্যমে কী হত, কে বিনয় মিশ্র, সব নাম আমিও আগে বলে দিয়েছিলাম। তার পরে আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। কান টানলে মাথা আসারই কথা। ঠিক মাথার কাছেই গিয়েছে সিবিআই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy