নজরে ২০২১। পাখির চোখ তাই পশ্চিমবঙ্গ। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল সেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যকে ছোঁয়ার অস্ত্র হতে পারে বলেই মনে করছে বিজেপি।
গতকাল লোকসভায় পাশ হয় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। যাতে বলা হয়েছে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আসা অ-মুসলিমদের নাগরিকত্ব দেবে নরেন্দ্র মোদী সরকার। বিলের প্রকৃত উদ্দেশ্য যে পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশ থেকে আসা বসবাসকারী হিন্দুদের ভোট পাওয়া, তা শুরু থেকেই ঘরোয়া ভাবে বলছেন রাজ্য বিজেপির নেতারা। অমিত শাহও কাল নিজের বক্তব্যে পশ্চিমবঙ্গের প্রসঙ্গ একাধিকবার তুলে আনেন। বিলের পক্ষে বলতে পাঁচ বঙ্গ সাংসদকে মাঠে নামান বিজেপি নেতৃত্ব এবং অমিত টেনে আনেন পশ্চিমবঙ্গে রেশন কার্ড প্রসঙ্গ। রেশন কার্ডের মতো রাজ্যস্তরের সমস্যাকে টেনে আনাকে পরিকল্পনামাফিক এবং কার্যত নজিরবিহীন পদক্ষেপ বলেই মনে করছেন অনেকে। যদিও তৃণমূল শিবিরের পাল্টা দাবি, নাগরিক পঞ্জির মতোই নাগরিকত্ব বিল এই লক্ষ্যে ফের ব্যর্থ হতে চলেছে।
ইতিমধ্যেই বিলটি ঘিরে দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। বিশেষ করে অসমে। তাই অসমের মানুষকেও আজ তড়িঘড়ি বার্তা দিতে তৎপর হয় কেন্দ্র। অসমের একাধিক সংগঠনের বক্তব্য, উত্তর-পূর্বের অন্য রাজ্যগুলিতে নাগরিকত্ব বিল প্রযোজ্য না হওয়ায় বাংলাদেশ থেকে আসা বাঙালি হিন্দুদের নাগরিকত্বের বোঝা বইতে হবে মূলত অসমকে। ওই যুক্তি খণ্ডন করে কেন্দ্রের দাবি, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন গোটা দেশে চালু হবে। ধর্মীয় উৎপীড়নে কারণে প্রতিবেশী দেশগুলি থেকে আসা অ-মুসলিম শরণার্থীরা নানা রাজ্যে ছড়িয়ে রয়েছেন। তাই অসমের ভয়ের কারণ নেই। সংশোধনী আইন জনজাতিদের অধিকারকে খর্ব করবে না বলেও দাবি মোদী সরকারের।

ওই বিলের ভিত্তিবর্ষ ধরা হয়েছে ২০১৪-র ৩১ ডিসেম্বর। ওই দিনের পরে যারা ভারতে এসেছেন বা ভবিষ্যতে যারা ধর্মীয় উৎপীড়নের শিকার হয়ে ভারতে আসবেন তাদের কী হবে? আজ কেন্দ্র জানায়, ভিত্তিবর্ষের পরে যে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ভারতে আসবেন, তাঁরা ওই আইনের সুবিধে না পেলেও নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫৫-এর ধারা মেনে আবেদন জানাতে পারবেন। যে কোনও দেশের যে কোনও ধর্মের নাগরিকদের জন্য সেই সুযোগ থাকবে। যদিও রাজ্যসভায় তৃণমূল নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, ‘‘ওই বিলের মাধ্যমে মোদী-শাহেরা বিভাজনের রাজনীতি করছেন। লোকসভার মতো রাজ্যসভাতেও বিলটির প্রতিবাদ জানানো হবে। বিলটি হল সংখ্যাগরিষ্ঠতা বনাম নীতির লড়াই। বিলটি অসংবিধানিক। প্রয়োজনে আদালতে যাওয়া হবে।’’
বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ জানান, লোকসভায় বিলটি পাশ হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সংবর্ধনা জানানো হবে উদ্বাস্তু সংগঠনগুলির তরফে। বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘এনআরসির জুজু দেখিয়ে তৃণমূল ২০২১-এর নির্বাচন জেতার পরিকল্পনা করছিল। নাগরিকত্ব বিল তাতে জল ঢেলে দিয়েছে।’’