শিশির অধিকারীর (মাঝে) বাড়িতে যাচ্ছেন সুকান্ত (বাঁ দিকে)। থাকবেন শুভেন্দুও (ডান দিকে)। —ফাইল ছবি।
লক্ষ্মীপুজোর সন্ধ্যায় শুভেন্দু অধিকারীর বাড়ি শান্তিকুঞ্জে যাচ্ছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তাঁর ঘনিষ্ঠদের সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতার দোকান থেকে শুভেন্দুর বাবা তথা তৃণমূল সাংসদ শিশির অধিকারীর জন্য ধুতি-পাঞ্জাবি কিনেছেন সুকান্ত। মায়ের জন্য নিয়েছেন শাড়িও। সঙ্গে মিষ্টি। সুকান্ত এটাকে সৌজন্য-সাক্ষাৎ বললেও লক্ষ্মীপুজোর সন্ধ্যায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর বাড়িতে শুধুই কি নিমন্ত্রণরক্ষা! নাকি নেপথ্যে রয়েছে কোনও রাজনৈতিক কারণও?
প্রতি বছর ঘটা করে শিশিরের কাঁথির বাড়ি শান্তিকুঞ্জে লক্ষ্মীপুজো হয়। সুকান্ত সাফ জানিয়েছেন, সেই পুজোয় যোগ দিতেই যাচ্ছেন তিনি। এর মধ্যে রাজনীতি খোঁজা অর্থহীন। তিনি আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘অনেক দিনই শান্তিকুঞ্জে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। অবশেষে যাচ্ছি। সংসদে অনেক বার দেখা হয়েছে শিশিরবাবুর সঙ্গে। তাঁর আশীর্বাদ নেব। পরিবারের সকলের সঙ্গে আলাপ-পরিচয় হবে। এখানে রাজনীতি দেখার কিছু নেই।’’
সুকান্ত রাজনীতি দেখতে না চাইলেও শিশির আর বিজেপির সম্পর্ক নিয়ে রাজনৈতিক আলোচনা অনেক দিনের। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে অমিত শাহের উপস্থিতিতে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন শুভেন্দু। তখন থেকেই জল্পনা, তাঁর সঙ্গে বিজেপিতে যোগ দেবেন বাবা শিশির এবং ভাই, তথা তমলুকের সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী। বিধানসভা ভোটের আগে তমলুকে অমিত শাহের সভায় শিশিরকে দেখাও গিয়েছিল। যদিও বিজেপিতে তিনি যোগ দেননি বলে দাবি করেন শিশির।
বিধানসভা ভোটের সময় বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় গিয়েছিলেন শিশিরের শান্তিকুঞ্জে। তাঁকে দুপুরের খাবারে নানা পদে আপ্যায়ন করেছিল অধিকারী পরিবার। সেদিন শুভেন্দু অবশ্য বাড়িতে ছিলেন না। লকেট জানিয়েছিলেন, সেটা ছিল নেহাতই ‘সৌজন্য-সাক্ষাৎ’। শিশির অবশ্য এই নিয়ে কিছু বলেননি। তার পর থেকে মাঝেমধ্যেই প্রশ্ন ওঠে, শিশির কি বিজেপিতে নাকি তৃণমূলে!
বিধানসভা ভোটের পর শিশিরের সঙ্গে দেখা করতে শান্তিকুঞ্জে গিয়েছিলেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সেদিন কাঁথি আদালতে একটি মামলায় হাজিরা দিতে গিয়েছিলেন দিলীপের। কাজ সেরেই ছোটেন শিশিরের বাড়িতে। সেই প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘‘কাঁথিতে এসে শিশিরবাবুর সঙ্গে দেখা না করাটা অন্যায়। সেটা মনে করেই এলাম। ওঁর স্ত্রী ও পরিবারের সকলের কুশল জানলাম।’’ সে দিনও বাড়িতে ছিলেন না শুভেন্দু। তবে রবিবার সন্ধ্যায় সুকান্ত-শুভেন্দু-শিশির তিন জনেরই থাকার কথা।
তৃণমূল বরাবরই বিজেপি নেতাদের সঙ্গে শিশিরের ঘনিষ্ঠতাকে ভাল চোখে দেখেনি। লোকসভার স্পিকারের কাছে শিশিরের সাংসদ পদ খারিজের আবেদনও জানায় তৃণমূল। অন্য দিকে তৃণমূলের সঙ্গে একটু দূরত্ব রেখেই চলেছেন শিশির। রাষ্ট্রপতি ভোটে বাকি তৃণমূল সাংসদরা যখন রাজ্যেই ভোট দেন, তখন শিশির এবং দিব্যেন্দু দিল্লি গিয়ে ভোট দিয়ে আসেন। উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটদানে বিরত ছিলেন তৃণমূল সাংসদরা। শিশির কিন্তু দলের উল্টো পথে হেঁটে ভোট দিয়েছিলেন। এ বার তাঁর বাড়িতে বিজেপির রাজ্য সভাপতি গেলে আবারও শুরু হতে পারে জল্পনা।
সুকান্ত রাজ্য সভাপতি হওয়ার এক বছর পার হলেও এই প্রথম শুভেন্দুর বাড়িতে যাচ্ছেন। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এখনও পর্যন্ত এই দুই মুখকে সামনে রেখেই পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোটের ঘুঁটি সাজাতে চাইছে। বিজেপির সংবিধান অনুসারে রাজ্য সভাপতি ও বিরোধী দলনেতার গুরুত্ব প্রায় সমান সমান। দু’দিন আগেই শিশিরবাবুর ছোট ছেলে তথা কাঁথি পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান সৌম্যেন্দু অধিকারীকে একটি মামলায় ১০ ঘণ্টা জেরা করে পুলিশ। সেই নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর চলছে। তারই মধ্যে রবিবার সন্ধ্যায় সুকান্ত-শিশির-শুভেন্দু সাক্ষাৎ। লক্ষ্মীপুজোর আবহেও কোজাগরী পূর্ণিমায় নজরে থাকবে শান্তিকুঞ্জ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy