গত বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের মহা সমাবেশ থেকে বিজেপির বিরুদ্ধে রাজ্যের ভোটার তালিকায় ভুয়ো ভোটার সংযুক্তির অভিযোগ এনেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে কমিটি গঠন করে রাজ্যের সব বিধানসভা কেন্দ্রে সর্বস্তরের নেতাদের পাঠিয়ে ‘স্ক্রুটিনি’র কাজ শুরু করিয়েছেন তিনি। শনিবার মুখ্যমন্ত্রীর বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুরে সেই কাজ শুরু করেছেন মন্ত্রী এবং কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তাঁর সেই কর্মসূচির ‘পাল্টা’ কর্মসূচি নিল দক্ষিণ কলকাতা জেলা বিজেপি। ভবানীপুর থেকেই ওই পাল্টা কর্মসূচির সূচনা হয়েছে।
বিজেপির কর্মসূচির বার্তায় বলা হয়েছে, গত লোকসভা নির্বাচনে কলকাতার একাধিক বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেস আশানুরূপ ফল না করায় তারা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ভোটার তালিকা স্ক্রুটিনি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিজেপির ‘আশঙ্কা’, ওই স্ক্রুটিনির ‘অজুহাতে’ বিরোধী ভোটারদের নাম কৌশলে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার ‘ষড়যন্ত্র’ চলছে। যার ফলে বহু ভোটার আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন না।
বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেওয়ার পর জেলায় জেলায় ভোটার তালিকা নিয়ে বৈঠক করে বুথে বুথে গিয়ে স্ক্রুটিনি করার নীল নকশা তৈরি করে ফেলেছেন জেলা তৃণমূলের নেতারা। সভায় মুখ্যমন্ত্রীর তৈরি করে দেওয়া ভোটার তালিকা সংক্রান্ত কোর কমিটি আগামী ৬ মার্চ তৃণমূল ভবনে রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর নেতৃত্বে বৈঠকে বসবে। সেই বৈঠকেই ঠিক হবে এই সংক্রান্ত বিষয়ে পরবর্তী রণনীতি।
অন্য দিকে, বিজেপির পাল্টা কর্মসূচির বার্তায় বলা হয়েছে, ‘যদি আপনি ভোটার তালিকা সংক্রান্ত কোনও সমস্যার সম্মুখীন হন অথবা আপনার নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়, তা হলে দয়া করে নিচে দেওয়া ফোন নম্বরে দ্রুত আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।’ নিজের মোবাইল নম্বর-সহ দক্ষিণ কলকাতা বিজেপির তরফে বার্তাটি সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের পাঠিয়েছেন জেলা বিজেপি সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রজিৎ খটিক। প্রসঙ্গত, বিজেপির এই নেতা ২০২১ সালের ডিসেম্বরে পুরসভা নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়ির ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি প্রার্থী হয়েছিলেন। যাঁকে হারিয়ে কাউন্সিলর হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়। ইন্দ্রজিতের বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর কেন্দ্র ভবানীপুর তো বটেই, আমরা দক্ষিণ কলকাতা লোকসভার অন্তর্গত রাসবিহারী, কসবা, বেহালা পূর্ব ও বেহালা পশ্চিম কেন্দ্রেও এই কর্মসূচি শুরু করেছি। বালিগঞ্জ এবং কলকাতা বন্দর বিধানসভা কেন্দ্র এই কাজ ধীর গতিতে শুরু হয়েছে। তবে ভবানীপুরের দিকে আমাদের বিশেষ নজর রয়েছে।’’
ইন্দ্রজিৎ বলেন, ‘‘গত লোকসভা নির্বাচনে ভবানীপুর বিধানসভায় পাঁচটি ওয়ার্ডে এগিয়ে ছিল বিজেপি। মাত্র তিনটি ওয়ার্ডে জিতেছিল তৃণমূল। সেই পরিসংখ্যান দেখে ফিরহাদ হাকিম বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার নিয়ে স্ক্রুটিনি করে বিরোধী ভোটারদের ওপর চাপ তৈরি করতে চাইছেন। তাই আমরাও আমাদের কর্মসূচি শুরু করেছি ভবানীপুর থেকেই।’’ উল্লেখ্য, গত লোকসভা নির্বাচনে ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের ৬৩, ৭০,৭১, ৭২ ও ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডে বড় ব্যবধানে এগিয়েছিল বিজেপি। আর ৭৩,৭৭ এবং ৮২ নম্বর ওয়ার্ডে বড় ব্যবধানে এগিয়ে সার্বিক ভাবে বিধানসভায় এগিয়েছিল তৃণমূল। লোকসভা ভোটে কলকাতা পুরসভার মোট ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে বিজেপি প্রায় ৪২টি ওয়ার্ডে এগিয়েছিল।