শুভেন্দু অধিকারী-সহ বিজেপি বিধায়কদের কর্মসূচি ঘিরে বুধবার উত্তপ্ত হয়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর। ওই এলাকাটি বারুইপুর পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত, যা বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনীকেন্দ্র। সেখানে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর গাড়িতে তৃণমূল হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার বিধানসভায় বিক্ষোভ দেখালেন বিজেপি বিধায়কেরা। বিক্ষোভ চলে বিমানের কুশপুত্তলিকা দাহ করে। ওঠে স্পিকারের পদত্যাগের দাবিও। শুভেন্দু অবশ্য এই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে ছিলেন না। বৃহস্পতিবার হলদিয়ায় তাঁর নেতৃত্বে বিজেপির বিক্ষোভ মিছিল রয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিধানসভায় অ্যাপ্রোপ্রিয়েশন বিল নিলে আলোচনা শুরু হতেই বারুইপুরের ঘটনার প্রতিবাদে সরব হন বিজেপি বিধায়কেরা। অধিবেশন চলাকালীন ওয়েলে নেমে আধ ঘণ্টা বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। এর পর কক্ষত্যাগ (ওয়াকআউট) করে বিধানসভার দু’নম্বর গেটের সামনে হাতে কালো কাপড় নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বিজেপি বিধায়কেরা। তাঁরা জানিয়ে দেন, বৃহস্পতিবারের অধিবেশনে যোগ দেবেন না তাঁরা।
বিধানসভায় বিজেপির মুখ্য সচেতক শঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘‘বিরোধী দলনেতা সব সময়েই বলে থাকেন যে, আমাদের স্পিকার দলদাস। তা আরও এক বার প্রমাণিত হল। স্পিকারের কেন্দ্রে বিরোধী দলনেতার গাড়িতে হামলা হয়েছে! তাই আমরা এই বিক্ষোভ দেখাচ্ছি।’’
বুধবার বিধানসভা থেকে বিকেল ৪টে নাগাদ শুভেন্দু-সহ অন্য বিধায়কেরা বারুইপুরে পৌঁছোনোর অনেক আগে থেকেই তেতে ছিল এলাকা। শুভেন্দুর যাত্রাপথে শিবানীপীঠের কাছে এবং পুরোনো বাজারে মঞ্চ বেঁধে সভার আয়োজন করেছিল তৃণমূল। শাসকদলের কর্মী-সমর্থকেরা রাস্তার দুই ধারে জড়ো হয়েছিলেন। সভায় যোগ দিতে আসা বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে দফায় দফায় বচসা বাধে তৃণমূলের। স্লোগান, পাল্টা স্লোগান চলতে থাকে। শুভেন্দু এলাকায় ঢুকতেই কালো পতাকা দেখানো হয়। বিরোধী দলনেতার উদ্দেশে ‘গো ব্যাক’ এবং ‘চোর, চোর’ স্লোগান ওঠে। এ সবের জেরে তুলকালামের মধ্যে বিজেপির মিছিল বাতিল হয়ে যায়। রাসমাঠে সভামঞ্চের কাছে গাড়িতে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করেন বিরোধী নেতা। শুভেন্দু বলেন, “বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন চাই। নির্বাচন কমিশন দেখুক, এই পরিস্থিতিতে ভোট করা যায় কি না!”
পরে কয়েকশো মিটার মিছিল করে বিজেপির জেলা কার্যালয়ে গিয়ে শুভেন্দু দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তার পরে তাঁর অভিযোগ, “অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়েরা পুলিশকে দিয়ে পরিকল্পনা করে আমাদের আটকে দিতে চেয়েছেন। এখানকার নেতা গৌতম দাস, জয়ন্ত ভদ্রেরা জোর করে পুরসভার কর্মী, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের নিয়ে এসে ভিড় করেছেন। তার মধ্যে বাঁশ, লাঠি নিয়ে লোক ছিল। বোতলে লঙ্কার গুঁড়ো নিয়ে লোকজন এসেছিল। ওরা চেয়েছিল আমাদের শুরুতেই আটকে দিতে। তা-ও আমরা শেষ পর্যন্ত কর্মীদের কাছে পৌঁছেছি।” পুলিশকে তুলোধোনা করে তাঁর আরও অভিযোগ, “অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমার গাড়ি ওদের চিনিয়ে দেয়। ওরা বাঁশ দিয়ে আক্রমণ করে। গাড়ির ভিতরে ছিলাম বলে আঘাত লাগেনি। তৃণমূলকে একই সময়ে সভার অনুমতি দিয়ে আমাদের ফাঁদে ফেলা হয়েছে। আমাদের মেরে ফেলাই উদ্দেশ্য ছিল! আদালতের অনুমতি নিয়ে ২৭ তারিখ এসপি অফিস অভিযান হবে।” বিজেপি ভোটে জিতে বদলা নেবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে শুভেন্দুর মন্তব্য, “আজ যা করলেন, তার হিসেব হবে!”
বিমান অবশ্য বলেছেন, “বারুইপুরের মানুষ শুভেন্দুকে বাধা দেবেন, এটা আমি বিশ্বাস করি না। আমি বিধানসভায় ছিলাম। শুনেছি, অন্তর্দ্বন্দ্বে লোক হয়নি ওঁদের সভায়। তা ছাড়া, শুভেন্দু ইদানীং যে সব কথা বলছেন, তাতে সাধারণ মানুষ বিক্ষোভ দেখাতে পারেন।” সেই সঙ্গেই তাঁর প্রশ্ন, “বিধানসভা নিয়ে কিছু বলার থাকলে এখানেই বলবেন। তার জন্য বারুইপুরে যেতে হবে কেন!”