পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির দাবিপত্র তুলে দিচ্ছেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
ধন্দ বা সংশয় রয়েছে। বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘শহিদ’ হয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে যাবেন না তো? এই প্রশ্ন নিয়ে বিজেপি নেতারা যথেষ্টই ভাবছেন। কিন্তু চাপ বাড়ানোর খেলাতে আর কোনও খামতি রাখতে রাজি নয় গেরুয়া শিবির। হেমতাবাদের বিধায়কের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর থেকেই আক্রমণের সুর তুঙ্গে তুলতে শুরু করেছে বিজেপি। কিন্তু এই পর্বের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনাটা ঘটেছে মঙ্গলবার। আনুষ্ঠানিক ভাবে এই প্রথম বার রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি পেশ করা হয়েছে বিজেপির তরফ থেকে। সেই দাবি পূরণ হবে কি না বা দাবি আদায়ের জন্য রাজ্য বিজেপি কত দূর যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। কিন্তু দিল্লি থেকে বাংলা পর্যন্ত সব শীর্ষ বিজেপি নেতার প্রকাশ্য মন্তব্যগুলো এখন এক সুরে বাজতে শুরু করেছে— রাষ্ট্রপতি শাসন ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।
সোমবার সকালে হেমতাবাদের বিধায়কের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে ঘটনাটা নিয়ে ময়দানে নামে বিজেপি। যে ভাবে ঝুলছিল দেহ, যে ভাবে হাত বাঁধা ছিল, তাতে এই মৃত্যু খুন ছাড়া আর কিছুই নয়— বলতে শুরু করেন বিভিন্ন স্তরের বিজেপি নেতা। প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে আত্মহত্যার ঘটনাই মনে হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। মঙ্গলবার সকালের মধ্যে পোস্টমর্টেম রিপোর্টও প্রকাশ্যে আনা হয়েছে প্রশাসনের তরফ থেকে। তাতেও আত্মহত্যার ইঙ্গিত। কিন্তু পুলিশি তদন্ত এবং পোস্টমর্টেম রিপোর্টে কারচুপি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে আগে থেকেই হইচই শুরু করে বিজেপি। উত্তরবঙ্গ বন্ধের ডাক দিয়ে দেয়। গোটা রাজ্যে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের বিক্ষোভ দেখানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। সর্বোপরি রাষ্ট্রপতি ভবনে পৌঁছে যায় বিজেপির হেভিওয়েট প্রতিনিধি দল। বিধায়কের মৃত্যুর ঘটনা সম্পর্কে তাঁরা জানান রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তর অভিযোগ তোলেন। এখনই পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভেঙে দিয়ে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা উচিত বলে দাবি পেশ করেন।
বিজেপির তরফ থেকে এই দাবি কিন্তু আগে কখনও পেশ করা হয়নি রাষ্ট্রপতি ভবনে। শুধু রাষ্ট্রপতির কাছে দাবিটা পেশ করেই যদি ক্ষান্ত হয়ে যেতেন বিজেপি নেতারা, তা হলে একে প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে দেখা যেত বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। কিন্তু বিজেপি সেটুকুতেই থামেনি। রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে বেরিয়ে মঙ্গলবার বিজেপি নেতারা হাজির হয়েছিলেন নর্থ ব্লকেও। সেখানে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করে কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের নেতৃত্বাধীন ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল। পশ্চিমবঙ্গে যে পরিস্থিতি চলছে, তাতে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হওয়া দরকার, এমন দাবি আনুষ্ঠানিক ভাবে পেশ করা হয় শাহ সমীপে। এই পদক্ষেপকে কিন্তু বিজেপির কৌশলগত লাইনে নতুন মোড় হিসেবেই দেখছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
আরও পড়ুন: ‘একটু বাড়াবাড়ি হচ্ছে, আমরা কি চাকর!’, রাজ্যপালকে পাল্টা নিশানা মুখ্যমন্ত্রীর
সংবিধানের ৩৫৬ অনুচ্ছেদ প্রয়োগ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে বরখাস্ত করার দাবি তোলা হবে কি না, তা নিয়ে রাজ্য বিজেপিতে আগেও কথা হয়েছে। ২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এবং পরে, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে এবং পরে— বার বার এই আলোচনা উঠেছে। কখনও সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে সরব হয়ে রাজ্য বিজেপির একাংশ চেয়েছেন, সরকারকে বরখাস্ত করা হোক। কখনও রাজ্য বিজেপির অন্য অংশের মনে হয়েছে যে, জনমত আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে নেই, সুতরাং সরকারকে বরখাস্ত করা যেতেই পারে। কিন্তু রাজ্য নেতৃত্বের মধ্যে এ বিষয়ে সর্বসম্মতি কখনওই তৈরি হয়নি। আর কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তো মেটেই রাজি ছিল না। ৩৫৬ প্রয়োগ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরিয়ে দিলে তিনি নিজের পক্ষে সহানুভূতির হাওয়া তুলতে সক্ষম হবেন, এমনটাই মনে করছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা। ক্ষমতা থেকে মমতাকে সরিয়ে দিলে তিনি ফের বিরোধী নেত্রীর মেজাজে ফিরে মাঠ-ময়দান কাঁপাতে শুরু করবেন, রাজ্যের নেতাদের কয়েক জনের মত ছিল এ রকম। সব মিলিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে আর কখনওই পেশ হয়নি রাষ্ট্রপতি শাসন জারির দাবি। এ বার কিন্তু দাবিটা পেশ হয়ে গেল। শুধু রাষ্ট্রপতির দরবারে নয়, দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর টেবিলেও তা পৌঁছে গেল।
অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকে কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের নেতৃত্বাধীন ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল।
বিজেপির রাজনৈতিক কৌশলে এই বদল কেন? রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষের কথায়, ‘‘এই সরকার যত দিন থাকবে, তত দিন রাজনৈতিক হিংসা-খুন থামবে না। হানাহানি ক্রমশ বেড়েই চলেছে। সাধারণ মানুষ থেকে বিধায়ক, কারও জীবন সুরক্ষিত নয়। এই অবস্থা তো চলতে দেওয়া যায় না। সেই কারণে আমরা রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি জানাতে বাধ্য হয়েছি।’’ এতেই থামছেন না দিলীপ। ক্ষমতায় থাকার কোনও ‘নৈতিক অধিকার’ এই সরকারের আর নেই বলেও দাবি করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এমনিতেও এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনও নৈতিক অধিকার নেই। কোনও কিছুই এদের নিয়ন্ত্রণে নেই, সব বিষয়েই এরা ব্যর্থ। করোনা মোকাবিলা হোক, আমপান মোকাবিলা হোক, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি হোক, সবেতে ব্যর্থ। এই পরিস্থিতি বদল এবং মানুষের জীবনের নিরাপত্তার জন্য আমরা কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ চেয়েছি।’’
আরও পড়ুন: অক্সফোর্ডের করোনা টিকা অক্টোবরেই? সেই চেষ্টাই চলছে, বলছেন বিজ্ঞানীরা
সরকার বরখাস্ত করার দাবি এত স্পষ্ট ভাবে তুলতে আগে কিন্তু কখনও শোনা যায়নি দিলীপ ঘোষকে। তা হলে কি কৌশল বদলে ফেলল বিজেপি? সরকার ভেঙে দেওয়া হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘শহিদ’-এর মর্যাদা পেয়ে যাবেন বলে কি এখন আর মনে করছেন না বিজেপি নেতারা? মুরলীধর সেন লেন সূত্রের খবর, রাজ্য বিজেপির অধিকাংশ নেতাই এখন মনে করছেন, সহানুভূতির হাওয়া নিজের পালে টানার মতো জায়গায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর নেই। যদিও সরকার ভেঙে দেওয়া উচিত হবে কি না, সে বিষয়ে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের সকলে এখনও একমত নন। কয়েক জন নেতা এখনও একটু জল মেপে নেওয়ার পক্ষপাতী। তাঁরা আবার একেবারে সামনের সারির নেতা তথা রাজ্য বিজেপির অন্যতম নীতি নির্ধারক। দিলীপ ঘোষ নিজেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছননি বলেই খবর। কিন্তু মমতার সরকারের উপরে চাপ প্রবল ভাবে বাড়িয়ে তোলার প্রশ্নে দিল্লির সঙ্গে নিজের লাইনের কোনও ফারাক আর রাখতে চাইছে না বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব। তাই রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া দলের অন্যতম সদস্য স্বপন দাশগুপ্ত আর রাজ্য বিজেপির সভাপতির সুর হুবহু মিলে যাচ্ছে।
রাজ্যসভার সদস্য তথা মোদী-শাহের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত স্বপন কী বলছেন? তাঁর কথায়, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি যে রকম, তাতে আমরা খুব উদ্বিগ্ন। এক জন বিধায়ক এ ভাবে খুন হয়ে গেলেন। ক’দিন আগেও পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনে এক বিজেপি কর্মীকে খুন করা হল। এমন একটা সময়ে এগুলো চলছে, যখন রাজনীতি মোটামুটি বন্ধ। এখনই যদি এই অবস্থা হয়, তা হলে আবার যখন স্বাভাবিক গতিতে রাজনীতি শুরু হবে, তখন পশ্চিমবঙ্গের কী অবস্থা হবে, সেটা ভেবে তো আমরা আতঙ্কিত হচ্ছি!’’ স্বপনের কথায়, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্থির করেই নিয়েছেন যে, পশ্চিমবঙ্গে আর কাউকে রাজনীতি তিনি করতে দেবেন না। তিনি একাই থাকবেন, আর কেউ থাকতে পারবেন না। সুতরাং রাষ্ট্রপতির কাছে আমাদের যেতেই হল। শুধু রাষ্ট্রপতির কাছে নয়, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছেও আমরা একই দাবি জানিয়ে এসেছি।’’
শুধু রাষ্ট্রপতির কাছে নয়, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছেও একই দাবি পেশ করে আসা কিন্তু পরিস্থিতির তাৎপর্য বদলে দিচ্ছে। বিধায়ক ‘হত্যা’ বা লাগাতার রাজনৈতিক হিংসার যে অভিযোগ বিজেপি তুলছে, তার প্রতিবাদ যে শুধুমাত্র আলঙ্কারিক বা প্রতীকী ভাবে করা হবে না, শাহের সঙ্গে কৈলাস বিজয়বর্গীয়, বাবুল সুপ্রিয়, অরবিন্দ মেনন, স্বপন দাশগুপ্ত, রাজু বিস্তাদের সাক্ষাৎ সে ইঙ্গিতই দিয়ে দিয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত। এই মুহূর্তে সরকার ভেঙে দেওয়ার মতো পদক্ষেপ কেন্দ্র করবে বলে রাজ্য বিজেপির অনেক নেতাই মনে করছেন না। কিন্তু প্রয়োজন হলে সে পদক্ষেপের দিকে এগনো যে অসম্ভব নয়, এই বার্তাই বিজেপি এখন তৃণমূলকে দিতে চাইছে। পদক্ষেপটার জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রও প্রস্তুত করে রাখা হচ্ছে বলে বিজেপি সূত্রের খবর।
বিধায়কের মৃত্যুর পরে বিজেপির যে প্রতিনিধি দল কোবিন্দ ও শাহের সঙ্গে দেখা করেছে, তার অন্যতম সদস্য ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়। তাঁর কথায়, ‘‘একটার পর একটা খুন, বার বার বিরোধীদের উপরে আক্রমণ। কিন্তু কোনও ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এক বারের জন্যও বলছেন না যে, এ সব বরদাস্ত করবেন না। এক বারের জন্যও এ সব ঘটনার নিন্দা করছেন না। উল্টে বিজেপি কর্মী খুন হলে বিজেপি কর্মীকেই গ্রেফতার করা হচ্ছে, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের তত্ত্ব খাড়া করা হচ্ছে।’’ বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়ের মৃত্যুর পর থেকে রাজ্যের প্রশাসন যে ভূমিকা নিয়েছে, এ দিন তাকেও আক্রমণ করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘এক জন বিধায়ক খুন হলেন। সঙ্গে সঙ্গে ভুয়ো সুইসাইড নোট তৈরি করে ফেলা হল, ভুয়ো পোস্টমর্টেম রিপোর্ট সাজিয়ে ফেলা হল। তড়িঘড়ি সে রিপোর্ট বাজারে ছেড়ে দেওয়া হল। সাধারণত পোস্টমর্টেম রিপোর্টের ক্ষেত্রে যা হয় না। অর্থাৎ কিছুতেই সত্যের কাছাকাছি কাউকে পৌঁছতে দেওয়া হবে না। সুতরাং রাষ্ট্রপতি শাসন দাবি করা ছাড়া আমাদের হাতে আর কোনও রাস্তা নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে শুধুমাত্র তৃণমূল কর্মী এবং তাঁর ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে পরিচিত একটা নির্দিষ্ট সম্প্রদায় ছাড়া কেউ নাগরিকই নন। এই অবস্থা আর মেনে নেওয়া যায় না। এই সরকারকে সরানো দরকার। এবং সাংবিধানিক ভাবেই সেটা করা সম্ভব। আমরা সেই দাবিই জানিয়ে এসেছি।’’
দিল্লির নেতা হন বা রাজ্যের নেতা, দিলীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ কেউ হন বা দিলীপ শিবিরের একেবারে উল্টো দিকে থাকা কোনও নেতা, বিজেপিতে সবার সুর কিন্তু এখন একই। যাঁরা রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়েছিলেন এবং যাঁরা যাননি, সব শিবির এখন এককাট্টা। অন্তত মন্তব্যের প্রশ্নে। রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হওয়া খুব জরুরি এবং রাষ্ট্রপতি শাসন জারি না হলে পশ্চিমবঙ্গে হিংসা আরও বাড়বে— সব বিজেপি নেতার মুখেই এখন এই এক বুলি। রাজ্য বিজেপির অন্দরমহল সূত্রে জানা যাচ্ছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আরও কিছু দিন ক্ষমতায় থাকতে দেওয়ার পক্ষপাতী গেরুয়া শিবিরের কেউ কেউ। যত দিন যাবে, মুখ্যমন্ত্রী মমতার দশা ততটাই নাজেহাল হবে— বলছেন একেবারে সামনের সারির এক রাজ্যনেতা। যে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এক সময়ে বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারির করার পক্ষপাতী একেবারেই ছিল না, সেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বই এখন বেশি করে চাইছে রাষ্ট্রপতি শাসন, জানাচ্ছেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক হিংসা দ্রুত বাড়ছে এবং প্রশাসন মমতার হাতে থাকলে দ্রুত পরিস্থিতি বিজেপির নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাবে— এমন আশঙ্কা করছেন দিল্লির নেতাদের অধিকাংশই। খবর তেমনই। রাজ্য নেতাদের সবাই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের এই তত্ত্বে পুরোপুরি বিশ্বাস না রাখলেও রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবিটা তুলে রাখাকে ভাল পদক্ষেপ বলেই মনে করছেন। রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলছেন, ‘‘আমরা এক সময়ে ভেবেছিলাম, সব নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তা যদি হত, এই দাবি জানানোর প্রয়োজন হত না। কিন্তু হিংসা বেলাগাম হয়ে যাচ্ছে। রোজ খুন-জখম হচ্ছে। এই অবস্থা চলতে দেওয়া যায় না। আমরা মনে করছি কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের প্রয়োজন রয়েছে।’’
সরকার ভেঙে দেওয়া হলে তার পরবর্তী প্রতিক্রিয়া কেমন হবে, সে বিষয়ে রাজ্য বিজেপির যে নেতারা এখনও কিছুটা ধন্দে, তাঁরাও কিন্তু চুপচাপ বসে নেই। রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে ‘ফিডব্যাক’ নেওয়া শুরু করেছেন তাঁরা। যে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এক সময়ে ৩৫৬ প্রয়োগের বিষয়ে অনীহা দেখাচ্ছিল, এখন তাঁরাই এ বিষয়ে বেশি আগ্রহী বলে খবর। নির্বাচন পর্যন্ত প্রশাসন ও পুলিশের রাশ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে থাকতে দিলে পরিস্থিতি বিজেপির নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে, আশঙ্কা দিল্লির। বিজেপির সংগঠন যা তৈরি হয়েছে, তা তছনছ করে দিতে তৃণমূল তৎপর হচ্ছে, ‘পুলিশি চাপ’ আরও বাড়বে বিজেপি কর্মীদের উপরে— এমন খবর পৌঁছেছে দিল্লির কাছে। তাই রাজ্যের দ্বিধান্বিত নেতাদেরকে পরিস্থিতি ‘রিভিউ’ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে খবর। এমন কোনও পরামর্শের বিষয়ে রাজ্য নেতাদের কেউ কোনও মন্তব্য করছেন না ঠিকই। তবে সায়ন্তন বসু বলছেন, ‘‘রিভিউ তো আমরা করবই। পরিস্থিতি যেমন বুঝব, দিল্লিকে তেমনই জানাব।’’ রাজ্য দলের সাধারণ সম্পাদকের এই মন্তব্যকেও তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
তৃণমূল কী বলছে বিজেপির এই তৎপরতা দেখে? তাঁরা বিচলিত হয়ে পড়েছেন, এমন কোনও বার্তা দিতে চাইছেন না রাজ্যের শাসক দলের নেতারা। কিন্তু বিজেপির প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার সঙ্গে সঙ্গেই পাল্টা তৎপর হতে দেখা গিয়েছে তৃণমূলকে। রাজ্যসভার তৃণমূল দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনকেও তড়িঘড়ি পাঠানো হয়েছে কোবিন্দ সমীপে। বিধায়কের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে বিজেপি অহেতুক রাজনীতি করছে, এই মৃত্যুর নেপথ্যে কোনও রাজনৈতিক কারণ নেই— রাষ্ট্রপতিকে বুধবার এমনই বোঝানোর চেষ্টা করেছেন ডেরেক। তবে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হওয়া নিয়ে, তৃণমূল ভাবিত নয়, এমন একটা বার্তাও দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
কেন্দ্রীয় সরকার যে রকম ‘অসহযোগিতা’ করছে, তা রাষ্ট্রপতি শাসনের চেয়ে কম কিছু কি? এই প্রশ্নই তুলছেন তৃণমূল নেতারা। ডেরেক ও’ব্রায়েনের কথায়, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার ন্যায্য পাওনা থেকে থেকে যে রকম ইচ্ছাকৃত ভাবে বাংলাকে বঞ্চিত করছে, তা তো ঘুরপথে ৩৫৬ অনুচ্ছেদ জারি করারই শামিল। এটা হল ৩৫৬ অনুচ্ছেদের অর্থনৈতিক রূপ।’’ ডেরেকের কথায়, ‘‘আমপানের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১ লক্ষ কোটি টাকা বাংলা পায়, পুরনো পাওনা হিসেবে ৫৩ হাজার কোটি টাকা বাংলা পায়। সব আটকে রাখা হয়েছে। আর কোভিড মোকাবিলার জন্য বাংলাকে দেওয়া হয়েছে শূন্য।’’
উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল সম্পর্কিত যাবতীয় আপডেট পেতে রেজিস্টার করুন এখানে
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy