নবান্নের সামনে স্লোগান বিজেপির। বৃহস্পতিবার। ছবি: প্রদীপ আদক।
কয়েক জন মহিলা ধীরেসুস্থে হেঁটে চলেছেন নবান্নের গেটের দিকে। যেমন যান অনেক সাক্ষাৎপ্রার্থী। কিছুটা দূরত্ব রেখে বিচ্ছিন্ন ভাবে এগোচ্ছেন কয়েক জন পুরুষও। সন্দেহ হয়নি পুলিশের।
হঠাৎ ঝোলা ও পকেট থেকে বিজেপির পতাকা আর কাগুজে পোস্টার বার করে শুরু হয়ে গেল সরকার-বিরোধী স্লোগান। পুলিশ হতভম্ব। কিছু করাও মুশকিল। কেননা বিক্ষোভকারীদের সামনের সারিতে প্রায় ঢালের কায়দায় দাঁড়িয়ে বিজেপির মহিলা সমর্থকেরা। অথচ মহিলা পুলিশ নেই এক জনও।
হতভম্ব হয়ে শৃঙ্খলারক্ষীরা দেখলেন, স্তরে স্তরে পুলিশি নজরদারি এবং গোটা বিশেক সিসিটিভি-ক্যামেরার কড়া দৃষ্টিকে দুয়ো দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে নাগাড়ে স্লোগান দিচ্ছেন বিজেপির ১৯-২০ জন কর্মী-সমর্থক। নবান্নের তাবড় তাবড় কর্মী-অফিসার জানলায় উঁকি দিয়ে বিক্ষোভ দেখতে দেখতে বললেন, ‘নবান্নের নিরাপত্তা নিয়ে আরও এক বার সরকারের নাক কাটা গেল!’
প্রাথমিক বিস্ময় কাটিয়ে মিনিট পনেরোর চেষ্টায় কোনও রকমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া গেল বটে। কিন্তু বৃহস্পতিবারের এই ঘটনায় ফের প্রশ্নের মুখে পড়ে গেল নবান্নের সুরক্ষা-বলয়। কয়েক মাস আগে একই ভাবে নবান্নের মুখ পুড়িয়েছিল কো-অর্ডিনেশন কমিটির বিক্ষোভ। আগে থেকে নোটিস দিয়ে জানিয়ে, পুলিশি নজরদারি সত্ত্বেও সেন্ট্রাল গেট পেরিয়ে নবান্নের ভিতরে ঢুকে পড়েন কো-অর্ডিনেশন কমিটির কিছু শীর্ষ নেতানেত্রী। তাঁদের দাবি ছিল, বকেয়া মহার্ঘ ভাতা মিটিয়ে দিতে হবে।
অথচ এ দিন সকাল থেকেই নবান্নের চার পাশে ছিল পুলিশের সাজো সাজো রব। উর্দিতে, সাধারণ পোশাকে প্রচুর পুলিশকর্মী মেতায়েন ছিলেন। দু’তিন জনকে আশেপাশে জটলা করতে দেখলেও সরিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। পরিচয়পত্র ভাল করে পরীক্ষা করে তবেই ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল লোকজনকে। ছিল কমব্যাট ফোর্স, কম্যান্ডো বাহিনী। ছিলেন কলকাতা ও রাজ্য পুলিশের কিছু কর্তাব্যক্তিও।
ঘড়িতে বেলা ১টা। সকালে কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে কী করে আচমকা লোডশেডিং হয়েছিল, তা নিয়ে তখন নবান্নের চোদ্দো তলায় বৈঠক করছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সময়েই সেন্ট্রাল গেটের সামনে আচমকা নারীকণ্ঠে স্লোগান, ‘মমতা ব্যানার্জি মুর্দাবাদ’, ‘টেট কেলেঙ্কারির নায়ক পার্থ চট্টোপাধ্যায় দূর হটো’। সামনের সারিতে এগিয়ে দেওয়া হয়েছে মহিলা বিক্ষোভকারীদের। কিন্তু গেটে তখন শুধুই পুরুষ পুলিশকর্মী। তাঁরা মহিলাদের রুখবেন কী ভাবে? অগত্যা লোহার ব্যারিকেড ঠেলে দিয়ে বিক্ষোভকারীদের আটকানোর চেষ্টা হয়। এসি (নবান্ন) সমর দাস ব্যতিব্যস্ত হয়ে ওয়াকিটকিতে চিৎকার করে মহিলা পুলিশ পাঠানোর নির্দেশ দিতে থাকেন। বিক্ষোভকারীরা মিনিট দশেক স্লোগান দেওয়ার পরে এলেন হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের মহিলা কর্মীরা। বিজেপি-সমর্থকদের ধরেবেঁধে তোলা হয় পুলিশের গাড়িতে। পরে ধৃতদের নিয়ে যাওয়া হয় শিবপুর থানায়।
নবান্নের অন্দরে তখন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, কী করে এমন হল?
পুলিশকর্তাদের একাংশ জানান, গোয়েন্দা দফতরের ব্যর্থতাতেই এমনটা ঘটে গেল। পুলিশের কাছে খবর ছিল। কিন্তু বিজেপি নেতা অজয় অগ্নিহোত্রীর নেতৃত্বে দলটি যে বিক্ষিপ্ত ভাবে আসবে এবং বিক্ষোভকারীদের মধ্যে মহিলার সংখ্যাই বেশি হবে, তার বিন্দুবিসর্গও জানত না পুলিশ। বিকেলে পরিস্থিতি কাটাছেঁড়া করতে বৈঠকে বসেন এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) অনুজ শর্মা এবং হাওড়ার পুলিশ কমিশনার দেবেন্দ্রপ্রতাপ সিংহ। বৈঠকের ফল কী, তা নিয়ে অবশ্য মুখ খোলেনি কোনও পক্ষই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy