চা পানে দিলীপ ঘোষ এবং জেপি নড্ডা। নিজস্ব চিত্র।
দিলীপ ঘোষের চায়ের আড্ডায় জেপি নড্ডা। বুধবার সকালে খড়্গপুরের কাছে ধাদকি গ্রামে নতুন চেহারায় বিজেপি-র চা-চক্র অনুষ্ঠান। বিজেপি রাজ্য সভাপতি আর সর্বভারতীয় সভাপতির এই যৌথ কর্মসূচি আদৌ পরিকল্পিত ছিল না। মঙ্গলবার রাতে আচমকা ঠিক হয়। আর সেটা খোদ নড্ডারই আব্দারে। মঙ্গলবার রাত ৮টা নাগাদ তিনি নিজেই বলেন, বুধবার সকালে দিলীপের সঙ্গে চায়ের আড্ডায় তিনিও যেতে চান। সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় তৎপরতা। ফ্লেক্স ছাপাও, পুলিশের অনুমতি নাও, মঞ্চে আলাদা ব্যবস্থা করো, নিরাপত্তা খতিয়ে দেখো ইত্যাদি, ইত্যাদি এবং ইত্যাদি। সে সব বিলি-বন্দোবস্তের পর রাতে চূড়ান্ত হয় নড্ডা-দিলীপ চা চক্র। যা মিটিয়ে কলাইকুন্ডা বিমানবন্দর থেকে দিল্লি উড়ে যান নড্ডা।
দিলীপের চা-চক্র শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের অগষ্ট মাসে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি শুরু করার পরে পরেই ‘দাদাকে বলো’ নামে পাল্টা কর্মসূচির কথা ভেবেছিল রাজ্য বিজেপি। কিন্তু তাতে দিলীপ নিজেই বাধা দেন। উল্টে তিনি শুরু করেন ‘চা-চক্রে দিলীপদা’ কর্মসূচি। তার ট্যাগলাইনও নিজেই বানান— ‘কোনও লোকদেখানো ফোনকল নয়, কোনও ছেলেভোলানো চিঠিচাপাটি নয়, সরাসরি, সামনাসামনি, সোজাসাপ্টা’। তখন সদ্য সাংসদ হয়েছেন দিলীপ।
সেই শুরু ‘চা-চক্র’ কর্মসূচির। নীলবাড়ি দখলের লড়াই এগিয়ে আসতেই যা দিলীপের দৈনিক কর্মসূচিতে পরিণত হয়েছে। যেদিন যেখানে তিনি রাত্রিবাস করেন, পরদিন সকালে সেখানেই প্রাতঃভ্রমণ এবং চা-চক্র বাঁধা। তেমনই ঠিক ছিল বুধবারের জন্যও। খড়্গপুরের হরিয়াতারা গ্রাম পঞ্চায়েতের ধাদকি গ্রামে ছিল চা-চক্র। সেখানেই যাওয়ার জন্য আব্দার ধরেন এবং শেষপর্যন্ত চলেও যান নড্ডা।
মঙ্গলবার প্রথমে তারাপীঠ এবং পরে ঝাড়গ্রামে রাজ্য বিজেপি-র দু’টি ‘পরিবর্তন যাত্রা’-র সূচনা, রথে ঘোরা, জনসভায় বক্তৃতার শেষে ঝাড়গ্রামে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গোটা দিনের ধকলের পরে সেখানে আর যাননি নড্ডা। খড়্গপুরের একটি হোটেলে সাংগঠনিক বৈঠকে যোগ দিতে চলে যান তিনি। ঝাড়গ্রাম অফিসার্স ক্লাব মাঠের অনুষ্ঠানে না থাকলেও সেখানে এসেছিলেন নড্ডা। কোনও কোনও মহল থেকে বলা হচ্ছে, সভাস্থলে এসে ফাঁকা চেয়ার দেখে ‘বিরক্ত এবং ক্ষুব্ধ’ নড্ডা ফিরে যান। যদিও স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শিল্পীরা তখনও এসে না পৌঁছনোতেই চলে যান নড্ডা। সভাস্থলে ভাল জমায়েত না থাকায় নড্ডার ফিরে যাওয়ার তত্ত্ব সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে বিজেপি।
বুধবার কলাইকুন্ডা থেকে নড্ডাকে বিমানে তুলে দেওয়ার পর ওই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে দিলীপ বলেন, ‘‘ও সব অতিরঞ্জিত খবর। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নড্ডা’জির দর্শক হিসেবে থাকার কথা ছিল। বক্তৃতা দেওয়ার কোনও বিষয় ছিল না। আর সেখানে যাঁরা অনুষ্ঠান করবেন, তাঁরা নড্ডা’জির আগের কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে সময়মতো ফিরে আসতে পারেননি। সে কারণেই ওই অনুষ্ঠান হয়নি। তবে ‘পরিবর্তন যাত্রা’ বার হওয়ার পরে যানজট তৈরি হয়েছিল ঝাড়গ্রাম শহরে। তাই শিল্পীদেরও দোষ দেওয়া ঠিক হবে না।’’
দিলীপ আরও বলেন, ‘‘এ নিয়ে কারও কোনও ক্ষোভ নেই। বরং কর্মীদের উৎসাহ দেখে নড্ডা’জি এতটাই খুশি হয়েছিলেন যে, তিনি বুধবার সকালের চা-চক্রে নিজে থেকেই যেতে চান। মঙ্গলবার রাত ৮টা নাগাদ আমায় সেটা বলেন। গভীর রাত পর্যন্ত তার সব ব্যবস্থা করতে হয়েছে।’’ সেটা অবশ্য নড্ডাও জানিয়েছেন। তিনি চা-চক্রে বলেন, ‘‘চায়ের আড্ডার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর এই উদ্যোগ খুব ভাল।’’ দিলীপের প্রশংসা করে এমনও বলেন যে, ‘‘এটা চালিয়ে যেতে হবে। মঙ্গলবার রাতে আমি চা-চক্রের কথা জানতে পেরেই দিলীপ’জির কাছে আগ্রহ দেখিয়েছিলাম।’’ তবে সেখানে নড্ডা যে বক্তৃতা দিয়েছেন, তাতে নতুন বিশেষ কিছু ছিল না। মঙ্গলবার যে ভাষায় তৃণমূলকে আক্রমণ করেছেন, বুধবার সকালে তাঁর গলায় তেমনই শোনা গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy