—ফাইল চিত্র
বেশ কিছু মণ্ডল সভাপতি পরিবর্তনের পর থেকেই বিজেপির অন্দরে ক্ষোভ ধোঁয়াচ্ছিল। তার জেরে দলীয় কার্যালয়ের ভিতরেই মার খেলেন দলের উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি আশুতোষ পাল। টেনে-হিঁচড়ে তাঁর জামা ছিঁড়ে দেওয়া হয়। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে মার খান ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর অন্য নেতারাও।
বৃহস্পতিবার এই মারপিট শুধু বিজেপি কার্যালয়ের ভিতরেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, কৃষ্ণনগরের রাজপথে দুই গোষ্ঠীর কর্মীরা জড়িয়ে পড়লেন মারপিটে। দলের ঝান্ডা নিয়ে একে অন্যের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। মাটিতে ফেলে চলতে থাকল লাথি, কিল, ঘুষি। পথচলতি মানুষ দাঁড়িয়ে পড়ে দেখলেন সেই মারপিট। অসহায়ের মতো রাস্তার পাশে দোকানের কোণে সিঁটিয়ে থাকলেন জেলা সভাপতি। যদিও এই ঘটনায় রাত পর্যন্ত পুলিশের কাছে কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। তবে বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি পর্বে এই ঘটনা দলের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর হল বলে বিজেপির বহু নেতাকর্মীই মনে করছেন।
আশুতোষ পালের পরিকল্পনায় মণ্ডল কমিটি পদ থেকে আগের সভাপতি মহাদেব সরকারের ছেঁটে ফেলা থেকেই ঝামেলার সূত্রপাত। এ দিন তেহট্ট থেকে আসা ৯ নম্বর জেলা পরিষদ মণ্ডল কমিটির মহিলা মোর্চার সভাপতি অঞ্জলি রায় বলেন, “বুঝতে পারছি না, এরা তৃণমূলের লোক নেতা না বিজেপির। তা না হলে কেউ ভোটের দু’দিন আগে মণ্ডল সভাপতি পরিবর্তণ করে?” তাঁর দাবি, “আশুবাবুরা দায়িত্ব নিয়ে দলকে দুর্বল করতে চাইছেন। আমরা তা হতে দেব না।” গন্ডগোলের সময়ে রাস্তার পাশে থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে থাকা কৃষ্ণনগরের এক কর্মী বলেন, “এর পর কোন মুখে আমরা মানুষের কাছে ভোট চাইতে যাব? এরা মনে হয় জেলার আসনগুলো তৃণমূলকে উপহার দিতে চাইছে।”
২০১৯ সালে ডিসেম্বরে মহাদেব সরকারকে সরিয়ে আশুতোষ পালকে ফের বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি করা হয়। বিষয়টা প্রথম থেকেই মেনে নিতে পারেননি মহাদেবের অনুগামীরা। তলায় তলায় বর্তমান সভাপতির বিরোধিতা চলছিল। জেলা কমিটি থেকে মহাদেবের লোকজনকে পুরোপুরি ছেঁটে ফেলে আশুবাবু নিজের মতো করে কমিটি তৈরি করেন। তাতে অসন্তোষ আরও বাড়ে। দিন তিনেক আগে ন’জন মণ্ডল সভাপতিকে সরিয়ে দেন আশুবাবু। অপসারিত মণ্ডল সভাপতিদের অনুগামীরা জায়গায় জায়গায় প্রকাশ্যে বিদ্রোহ শুরু করেন। এ দিন কৃষ্ণনগরের পাশে আসাননগরে দলীয় সভায় এসেছিলেন দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সেই সুযোগটাকেই মোক্ষম সময় হিসাবে বেছে নেন আশু-বিরোধীরা।
আসাননগরে দলীয় সভায় যাওয়ার আগে কৃষ্ণনগরের উকিলপাড়ায় দলীয় কার্যালয়ে অনুগামীদের নিয়ে বসেছিলেন আশুবাবু। যে সব এলাকায় মণ্ডল সভাপতি পরিবর্তন করা হয়েছে সেই তেহট্ট, নবদ্বীপ, ধুবুলিয়া থেকে প্রচুর কর্মী-সমর্থক দলীয় পতাকা নিয়ে সেখানে হাজির হন। কী কারণে মণ্ডল সভাপতিদের সরানো হল তা আশুবাবুর কাছে জানতে চান তাঁরা। উত্তেজনা বাড়তে থাকে। দুই পক্ষ কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন। শুরু হয় হাতাহাতি। কার্যালয়ের ভিতরে চেয়ার-টেবিল উল্টে দেওয়া হয়। বিরোধী পক্ষের মারমুখো কর্মীদের সামনে হাতজোড় করে আশুবাবু সকলকে শান্ত হতে অনুরোধ করেন। তখনই তাঁর উপরে চড়াও হয় বিক্ষুব্ধদের একটা অংশ।
এর পরেই দুই পক্ষ গন্ডগোল করতে করতে দলীয় কার্যালয় থেকে বেশ কিছুটা দূরে চ্যালেঞ্জ মোড়ে চলে আসে। পরস্পরের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে তারা। মহিলাদেরও মারপিটে জড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ধুবুলিয়ার ২৭ নম্বর জেলা পরিষদ মণ্ডলের সদ্য অপসারিত সভাপতি স্নেহাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, “কেন আমাদের সরিয়ে দেওয়া হল, সেটা জেলা সভাপতির কাছে জানতে এসেছিলাম। আমাদের লোকজন শান্তই ছিল। কিন্তু আশুতোষবাবুর লোকজন চড়াও হয়ে মারধর করল।” আশু-অনুগামী নেতাদের পাল্টা দাবি, বিরোধীরা গন্ডগোলের পরিল্পনা করেই এসেছিল। চোখের সামনে জেলা সভাপতিকে মার খেতে দেখে তাঁরা ঠেকাতে যান। তাতে তাঁরাও মার খান।
আশুবাবু এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, “রাজ্য সভাপতি আসছেন। যা বলার তাঁকেই বলব।” তবে তাঁর অনুগামীরা প্রাক্তন জেলা সভাপতি তথা কিসান মোর্চার রাজ্য সভাপতি মহাদেব সরকারের দিকেই অবিযোগের আঙুল তুলছেন। তাঁদের দাবি, অপসারিতেরা সকলেই মহাদেব অনুগামী। তাঁর অঙ্গুলিহেলন ছাড়া এমন ঘটনা ঘটতেই পারে না। ফোনে মহাদেব অবশ্য দাবি করেন, “আমি সংগঠনের কাজে মেদিনীপুর ও হুগলিতে রয়েছি। কী ঘটেছে, খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। তবে আমার ঘনিষঠদের কেউ এই ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে না।”
তাঁর মতে, “এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ। তৃণমূলের লোকজন করে থাকতে পারে।” তৃণমূলের জেলা মুখপাত্র দেবাশিস রায় বলেন, “এ কথায় ঘোড়াতেও হাসবে। যারা নিজের দলের জেলা সভাপতিকে মারধর করতে পারে, তাদের কথার উত্তর আমরা দেব না, মানুষ দেবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy