মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফুরফুরা শরিফে যাওয়াকে কেন্দ্র করে যে দিন রাজনৈতিক তরজার পারদ চড়ল, ঘটনাচক্রে সে দিনই বাংলাদেশের লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে আবার বাংলায় ফেরানোর দাবি জানালেন বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য। এই সূত্রে রাজ্যসভায় তৃণমূল কংগ্রেস ও বামেদেরও তীব্র আক্রমণ করেছেন শমীক। তৃণমূল ও কংগ্রেস পাল্টা আইন-শৃঙ্খলার কথা বলেছে। এই সংক্রান্ত যাবতীয় দায়িত্ব কেন্দ্রের বলে মন্তব্য করেছে সিপিএম। আর খোদ তসলিমা বাম আমলে তাঁর কলকাতা থেকে ‘বিতাড়িত’ হওয়ার প্রসঙ্গটি আবার উল্লেখ করেছেন।
‘লজ্জা’র লেখিকাকে কলকাতায় ফেরানোর দাবিতে সোমবার রাজ্যসভার জ়িরো আওয়ারে শমীক বলেছেন, “তসলিমার কাছে কলকাতা প্রাণের শহর। তিনি কলকাতায় ফিরতে, বাংলায় কথা বলতে ও বাংলায় সাহিত্য সৃষ্টি করতে চান। ছদ্ম-প্রগতিশীলতার আড়ালে চূড়ান্ত তোষণ, মৌলবাদের কাছে অত্মসমর্পণের দিন শেষ হোক! তসলিমার প্রত্যাবর্তন হোক।” প্রসঙ্গত, ২০০৭-এর নভেম্বরে তসলিমার ভিসা বাতিলের দাবিতে একটি সংগঠনের বিক্ষোভ, শহরে সেনা নামার মতো বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছিল। সেই সময়ে তাঁকে কলকাতা থেকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তৎকালীন বিজেপি-শাসিত রাজস্থানের জয়পুরের একটি বেসরকারি অতিথিশালায়। নাম না করে ২০০৭-এর নভেম্বরে তৎকালীন কংগ্রেস নেতা, পরে তৃণমূলের সাংসদ হওয়া প্রয়াত ইদ্রিশ আলি এবং বাম সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শমীক। তাঁর বক্তব্য, “কংগ্রেস ওই নেতাকে বহিষ্কার করলেও দুর্ভাগ্যজনক ভাবে তাঁকেই সংসদে পাঠিয়েছিল তৃণমূল। বাম-বন্ধুদের দেখতে পাচ্ছি না কেন? তাঁরা তসলিমা নাসরিন সম্পর্কে একটা কথাও বলেন না কেন?”
সেই ২০০৭-এ তৎকালীন সিপিআই সাংসদ গুরুদাস দাশগুপ্তের পরে ফের সংসদে তাঁর কথা তুলে ধরার জন্য শমীককে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তসলিমা। বাংলাদেশ থেকে ভারত, বার বার লেখাপত্রের জন্য বিতর্কের সম্মুখীন হওয়া তসলিমা রাজ্যে ফেরার বিষয়টি নিয়ে অবশ্য বলেছেন, ‘জানি না, কলকাতায় শেষ পর্যন্ত আমার ফেরা হবে কি না...।’ তবে জানিয়েছেন, বাংলায় লিখতে হলে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি পরিবেশে বাস করাটা জরুরি। ঘটনাচক্রে, ২০০৭-এ জয়পুরে পৌঁছেই তসলিমা বলেছিলেন, ‘আমি এখনই কলকাতায় ফিরতে চাই’!
যদিও ২০০৭-এ ঘটনাবলির সময়ে শমীক-সহ বিজেপি নেতারা কোথায় ছিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং ‘ধর্মের রাজনীতি’র অভিযোগ করে কল্যাণের আরও বক্তব্য, “এখন হিন্দু-মুসলিমের ঝগড়া লাগাতে আবহাওয়া তৈরি করা হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা রাজ্যের হাতে। রাজ্য ঠিক করবে, কাকে আসতে দেবে আর দেবে না। আগে আইন-শৃঙ্খলা। বিজেপির এই লোকগুলো ভেকধারী হিন্দু!” একই মত কংগ্রেসেরও। দলের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, “তসলিমাকে নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি করে বাংলার রাজনীতিকে উত্তপ্ত করা বা পরিবেশ নষ্ট করা ঠিক নয়। যে তসলিমাকে সামনে রেখে সমাজমাধ্যমে দ্বন্দ্ব হয়, সেখানে কেন্দ্র ও রাজ্যের বিষয়টি উপেক্ষা করা দরকার।” সিপিএম যদিও তসলিমার প্রত্যাবর্তনের প্রক্রিয়াগত বিষয়টির উপরে জোর দিয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, “তৎকালীন বাম সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্তকে উস্কে দেওয়া হয়েছিল, সেটা বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী জানেন। তসলিমার তখনও কলকাতায় থাকতে অসুবিধা ছিল না! অসুবিধাটা তৈরি করা হয়েছিল। এখন বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের সঙ্গে কথা বলে দায়িত্ব নিতে হবে কেন্দ্রকে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)