রূপা গঙ্গোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।
দলের সভা, সমাবেশ বা বৈঠকে কার্যত তাঁর দেখাই মিলছিল না। রাজ্য বিজেপি-তে এমন প্রশ্নও তৈরি হয়ে গিয়েছিল, উনি দলে আছেন তো? ঠিক সেই সময়েই তিনি রথে চড়ে বসেছেন! চার রাত পাঁচ দিনের জন্য ঘর ছেড়ে পথে বিজেপি-র রাজ্যসভা সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। কী এমন হল? কী করে তিনি রথারূ়ঢ়া হলেন? রাজ্য বিজেপি সূত্রের খবর, ‘উপরতলার’ চাপেই অবশেষে সক্রিয় মহাভারতের দ্রৌপদী। কিন্তু রূপা নিজে কী বলছেন? জানার জন্য তাঁর একাধিক ফোন নম্বরে বার বার ফোন ও মেসেজ পাঠানোর পরেও সাড়া মেলেনি। এমন অভিজ্ঞতা অবশ্য রাজ্য বিজেপি নেতাদের একাংশেরও। তাঁরা ফোন করলেও অন্যপ্রান্তে রূপার ফোন বেজে যায়। বেজেই যায়। তাই সকলে মেনে নিয়েছেন যে— ‘রূপা এমনই’।
বিজেপি-তে রূপার উত্থান কিন্তু ছিল চোখে পড়ার মতো। অভিনেত্রী রূপার বড় পরিচয় তিনি বি আর চোপড়ার ‘মহাভারত’ ধারাবাহিকের দ্রৌপদী। অভিনয় জগতে তাঁর উপস্থিতি অনেক। বড় পর্দার পাশাপাশি ছোট পর্দায় একটা সময়ে চুটিয়ে অভিনয় করেছেন। শুধু বাংলা নয়, হিন্দি, ওড়িয়া, কন্নড়, তেলুগু ছবিতেও দেখা গিয়েছে জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত অভিনেত্রী রূপাকে। রাজনীতিতে আবির্ভাব ২০১৫ সালে। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে আগেই তিনি বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন। ২০১৬-র নির্বাচনে প্রার্থীও হয়েছিলেন হাওড়া উত্তর কেন্দ্রে। তবে হেরে যান তৃণমূলের প্রার্থী প্রাক্তন ক্রিকেটার লক্ষ্মীরতন শুক্লর কাছে।
বিধানসভা নির্বাচনে পরাজিত হলেও বিজেপি মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী হিসেবে রাজনীতির ময়দানে রূপার উপস্থিতি ছিল যথেষ্ট নজরকাড়া। অভিনেত্রী রূপা শুধু রাজনীতি করাই নয়, রাজনীতির ‘বেশভূষা’ নিয়েও নিজস্ব নজির তৈরি করেছিলেন। গেরুয়া শিবিরের নেত্রী হওয়ার পর গলায় রুদ্রাক্ষের মালা কিংবা পরনের শাড়ির রং নির্বাচনও জনতা এবং দলের নেতাদের নজর এড়ায়নি। আক্ষরিক অর্থেই কোমরে আঁচল বেঁধে রাজনীতির ময়দানে নেমেছিলেন রূপা। কলকাতার পথে কখনও একা, কখনও অভিনয় জগৎ থেকে বিজেপি-তে আসা ‘সহযোদ্ধা’ লকেট চট্টোপাধ্যায়কে পাশে নিয়ে ‘রূদ্র’ রূপে দেখা যেত রূপাকে। যার দৌলতে তারকাখচিত হয়ে উঠেছিল বিজেপির নারীবাহিনীর আন্দোলন। রাজ্য বিজেপি শিবিরে রূপার সমালোচক হিসেবে পরিচিতরাও স্বীকার করতেন যে তারকা সভানেত্রীর আমলে মহিলা মোর্চার শক্তি বেড়েছিল। সম্ভবত সেই কারণেই সেই ধারা এখনও বজায় রেখে চলেছে বিজেপি। রূপার পর মহিলা মোর্চার দায়িত্ব লকেটের হাত ঘুরে এখন ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পালের হাতে।
মহিলা মোর্চার দায়িত্বে না থাকলেও বিজেপি-তে গুরুত্ব কমেনি রূপার। ২০১৬ সালেই তাঁকে রাজ্যসভায় মনোনীত সদস্য হিসেবে পাঠানো হয়। কিন্তু সম্প্রতি বেশ কিছুদিন ধরেই একান্তে থাকছিলেন প্রাক্তন নায়িকা। দলের কর্মসূচিতে তো নয়ই, সংসদেও খুব নিয়মিত দেখা যাচ্ছে না তাঁকে। দলের মধ্যে রূপাকে নিয়ে বিবিধ প্রশ্ন আগে থেকেই ছিল। যেটা বেড়ে যায় বিধানসভা নির্বাচনের লড়াইয়ের প্রস্তুতি শুরু হওয়ার পরে। দল ঠিক করে, সকলকেই পথে নেমে কাজ করতে হবে। রাজ্য সভাপতি থেকে বুথ স্তরের কর্মী— সকলের কাছেই সেই নির্দেশ যায়। বিজেপি সূত্রে খবর, নির্দেশ গিয়েছিল রূপার কাছেও। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। সকলে কাজে নামলেও রূপা তা থেকে অনেকটাই দূরে দূরে থেকেছেন। জেপি নড্ডা, অমিত শাহর কর্মসূচিতেও তাঁর দেখা পাওয়া যায়নি। সূত্রের খবর, এর পরেই নাকি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব রূপার উপরে ‘চাপ’ তৈরি করেন। তাঁকে সটান কাজে নামতে বলা হয়। বিজেপি সূত্রে খবর, সেই নির্দেশ পাওয়ার পর সম্প্রতি সক্রিয় হয়েছেন রূপা।
গত বুধবার রাজ্য বিজেপি-র রাঢ়বঙ্গ জোনের ‘পরিবর্তন যাত্রা’'-য় যোগ দিয়েছেন রূপা। বীরভূমে রথের সওয়ারি হয়ে ঘুরেছেন। রাতে যেখানে রথ থাকছে, সেখানেই হোটেলে থাকা এবং পরদিন ফের রথে ওঠা। পাশাপাশিই, যেখানে যেখানে রথ দাঁড়াচ্ছে, সেখানে সমাবেশে বক্তৃতা করা। সে ছবি নিজের নেটমাধ্যমেও নিয়মিত প্রকাশ করছেন বিজেপি-র রাজ্যসভা সাংসদ। বিজেপি-র ওই রাঢ়বঙ্গ জোনের পর্যবেক্ষক রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবার বলেন, ‘‘রূপাদি প্রতিটি কর্মসূচিতে থাকছেন। এখানে ওঁর চার রাত, পাঁচ দিনের সফর হওয়ার কথা আছে। ওঁর বক্তৃতা শুনতে মানুষ ভিড়ও করছেন।’’ এর পর রূপা কি পুরোপুরি ‘সক্রিয়’ হবেন। অন্যান্য জোনের ‘পরিবর্তন যাত্রা’-তেও কি তাঁকে দেখা যাবে? এমন সব কূট প্রশ্নের উত্তর নেই রাজ্য নেতাদের কাছে। তবে তাঁরা মনে করছেন, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশ পাওয়ার পর আশা করা যায় রূপা কাজের মধ্যেই থাকবেন। তবে রথের রশি ধরলেও রাজ্যনেতাদের ফোন ধরবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় এখনও রয়ে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy