(বাঁ দিকে) নরেন্দ্র মোদী। পবন সিংহ (ডান দিকে)। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বাবা অর্জুন সিংহ বিজেপির টিকিটে সাংসদ হলেও এখন তৃণমূলে। কিন্তু পুত্র পবন সিংহ দল বিজেপির প্রতি অনুগত। ভাটপাড়ার দু’বারের বিজেপি বিধায়ক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করার দৌড়ে রাজ্যের প্রধান নেতাদের থেকে এই মুহূর্তে অনেকটা এগিয়ে। নিকটতম হেভিওয়েট ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিককেও অনেকটা পিছনে ফেলে দিয়েছে পবনের ‘গতি’। তাঁর সামনে শুধু দুই অখ্যাত বিজেপি কর্মী।
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেই মোদী ‘নমো’ অ্যাপ চালু করেন। সেখানে তাঁর জমানায় কী কী কাজ হয়েছে সে সব দেখা যায়। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিদিনের বক্তব্য থেকে শুরু করে সরকারি প্রকল্পের পরিসংখ্যান, আগামীর ভাবনা সবই থাকে এতে। এ ছাড়াও প্রতিদিন সেই অ্যাপে দলের নেতা-কর্মীদের জন্য কিছু ‘টাস্ক’ থাকে। বিভিন্ন খবর পোস্ট করা থেকে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া কিংবা অন্যদের এই অ্যাপ ব্যবহার উৎসাহিত করার জন্য দৈনিক, সাপ্তাহিক এবং মাসিক প্রতিযোগিতা থাকে। এর জন্য অ্যাপে পয়েন্ট পাওয়া যায়। সেই পয়েন্টের ভিত্তিতে যিনি প্রথম হন, তাঁর মোদীর সঙ্গে দেখা করার পুরস্কার থাকে। এ ছাড়াও দ্বিতীয়, তৃতীয়দের জন্য নানা পুরস্কার দেন প্রধানমন্ত্রী। কাউকে তাঁর সই করা বই, কাউকে ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানের সংকলন। কেউ পান মোদীর থেকে ‘বিকশিত ভারতের রাষ্ট্রদূত’ সার্টিফিকেট। চলতি মাসে সেই দৌড়েই বাংলায় এখন তৃতীয় স্থানে পবন। তাঁর উপরে দু’জন থাকলেও তাঁরা সে ভাবে পরিচিত নন।
জানুয়ারি মাসের প্রতিযোগিতায় এখনও পর্যন্ত ৮০৬৯ পয়েন্ট পেয়ে এক নম্বরে রাজেন্দ্রপ্রসাদ মণ্ডল, দ্বিতীয় স্থানে ৫৮৪৯ পয়েন্ট পেয়ে সুখেন বর্মণ। এর পরেই বিধায়ক পবন পেয়েছেন ৫৬৪১ পয়েন্ট। চতুর্থ মন্ত্রী নিশীথের প্রাপ্তি ৩০৯৮ পয়েন্ট। ২৯৭৯ পয়েন্ট পেয়ে পঞ্চমে রয়েছেন কালীচরণ সাউ নামে এক বিজেপি কর্মী। প্রতিযোগিতার ধারেকাছেও নেই রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ রাজ্যের প্রধান নেতারা। নেই আর কোনও সাংসদ বা বিধায়কও।
জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের প্রতিযোগিতাতেও প্রথম তিনে রয়েছেন একই ব্যক্তিরা। চতুর্থ স্থানে নিশীথের পরিবর্তে কালীচরণ। আর পঞ্চম স্থানের জন্য এগোচ্ছেন মাথাভাঙার বিধায়ক সুশীল বর্মণ। দু’টিতেই তৃতীয় স্থানে থাকা পবন অবশ্য এটাকে প্রতিযোগিতা হিসাবে দেখছেন না। আনন্দবাজার অনলাইনকে ভাটপাড়ার বিধায়ক বলেন, ‘‘এটাকে আমি দলের কাজ বলে মনে করি। আমাকে অনেকেই প্রশ্ন করেন যে, কেন্দ্রীয় সরকার কী কী কাজ করছে? মোদীজি কেন এত জনপ্রিয়? আমি সবাইকে বলি ‘নমো’ অ্যাপ ডাউনলোড করুন। তাতেই সব জানতে পারবেন। আমি যেমন নিজে প্রতিদিন নিয়ম করে অ্যাপের নির্দেশ মেনে চলি, তেমন সবাইকেই করি।’’ দলের অন্য নেতা, সাংসদ, বিধায়কদের বিষয়ে মন্তব্য করতে না চাইলেও পবন বলেন, ‘‘আমি মনে করি সকলের এই অ্যাপ ব্যবহার করা উচিত। তবে দল সম্পর্কে, দেশ সম্পর্কে সব জানা যাবে। প্রকৃত বিজেপি নেতা হয়ে ওঠার জন্য এই অ্যাপ শিক্ষকের কাজ করে। মোদীজির সঙ্গে দেখা করা সব বিজেপি কর্মীর কাছেই স্বপ্ন। কিন্তু আমি তার জন্য নয়, দলের নির্দেশকে পালনীয় কর্তব্য হিসাবে দেখি।’’
আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি যে ‘নমো’ অ্যাপকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাইছে তা আগেই স্পষ্ট হয়েছে। প্রার্থী বাছাইয়ের জন্যও নমো অ্যাপের মাধ্যমে কর্মীদের মতামত নেওয়া হচ্ছে। প্রচারে কোন কোন বিষয়ে জোর দিতে হবে, বক্তৃতায় কী বলতে হবে, কী বলতে হবে না— সবেরই সন্ধান দেবে এই অ্যাপ। বিষয়টিকে বিজেপি এতটাই গুরুত্ব দিচ্ছে যে রাজ্যে রাজ্যে নেতাদের প্রশিক্ষণও চলছে। শনিবারই কলকাতায় প্রশিক্ষণ দিতে এসেছেন ‘নমো’ অ্যাপের জাতীয় আহ্বায়ক কুলদীপ সিংহ চহাল। সেই প্রশিক্ষণে সুকান্ত-সহ সব রাজ্য নেতারই যোগ দেওয়ার কথা। ডাকা হয়েছে সব মোর্চা নেতাদেও। আসার কথা আপাতত ‘তৃতীয়’ স্থানাধিকারী পবনেরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy