হিরণ চট্টোপাধ্যায়।
তিনি জিতেছেন। কিন্তু দল হেরেছে। ২ মে বিধানসভা ভোটের ফল বেরোবার পর নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রের এক আশ্রমকে সাময়িক আস্তানা করেছেন বিজেপি-র তারকা বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়। করোনা পরিস্থিতিতে যেখানে সেখানে যখন তখন যাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু নিজের কেন্দ্র খড়্গপুর সদরের ভিতরে থেকে কাজ চালাবার জন্য কলকাতার বাড়ি ছেড়ে আপাতত আশ্রমই তাঁর ঠিকানা।
হিরণের কথায়, ‘‘প্রথম দিকে যাযাবরের মতো এখানে সেখানে থাকছিলাম। পরে একটা স্থায়ী ঠিকানা হয়েছে।” তবে আশ্রমের ঠিকানা গোপন রেখেছেন তিনি। কারণ হিসেবে আনন্দবাজার ডিজিটালকে জানালেন, “আমার সঙ্গে দলের কয়েকজন ঘরছাড়া কর্মীও থাকছেন। তাঁদের নিরাপত্তার কথাও ভেবেও ঠিকানা বলছি না কাউকে। একই সঙ্গে আশ্রমে যাতে কোনও ভাবে ভিড় না হয়, সেটাও খেয়াল রাখতে হচ্ছে। আশ্রম কর্তৃপক্ষও সেটা চান না।’’
আপাতত এই আশ্রমই তাঁর অস্থায়ী অফিস। খুব কাছের কয়েকজন বিজেপি নেতা ছাড়া কাউকেই বলছেন না ঠিকানা। গোপনীয়তার আরও একটি কারণ রয়েছে বলে দাবি হিরণের। তিনি বলেন, ‘‘খড়্গপুর সদর বিধানসভা এলাকায় সে ভাবে ভোট পরবর্তী গোলমাল নেই। অনেকটাই শান্তিপূর্ণ এই এলাকা। সেই কারণেই আশপাশের বিভিন্ন বিধানসভা এলাকার অনেক ঘরছাড়া কর্মী এখানে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের কয়েকটি শিবিরে ভাগ করে রাখা হয়েছে।’’
হিরণের অভিযোগ, খড়্গপুরে অনেক জায়গাতেই বিজেপি সমর্থকদের পানীয় জলের লাইন কেটে দেওয়া হয়েছে। সে সবের জন্যও তিনি উদ্যোগ নিয়েছেন। একই সঙ্গে তাঁর বিধানসভা এলাকার কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে গত কয়েকদিনে একাধিক বৈঠক করেছেন। কোনওটা মুখোমুখি, কোনওটা ভার্চুয়াল। হিরণ বলেন, ‘‘আমার পক্ষে যতটা সাহায্য করা যায় আমি করছি। খড়্গপুরের কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মানুষের জন্য কাজ করতে চাইলেও লকডাউন পরিস্থিতিতে রাস্তায় বের হওয়ার ‘পাশ’ নেই। সে জন্য মহাকুমা শাসকের সঙ্গে কথা বলেছি।’’ রেল শহরের বিধায়ক হিরণ বলেন, ‘‘আমি কিন্তু বিজেপি-র বিধায়ক নই। এই এলাকার সব মানুষের বিধায়ক। রেলের একটা বন্ধ হয়ে যাওয়া যক্ষা হাসপাতাল রয়েছে। সেখানে ৫০ বেডের সেফ হোম চালু করা যায় কিনা সেটা দেখতে বলেছি। এ ছাড়াও রেলের হাসপাতালে করোনা বেডের সংখ্যা ৩০ থেকে ৬৫ করার কথা বলেছিলাম। সেটা হয়ে গিয়েছে। আইআইটি খড়্গপুরের ডিরেক্টরের সঙ্গেও কথা বলেছি। আইআইটি-র বন্ধ থাকা হাসপাতালটা কী ভাবে চালু করা যায় সে নিয়েও কথা হয়েছে। ওঁরা চেষ্টা করেছেন বলে জানিয়েছেন।’’ আইআইটি-র মাধ্যমে মাস্ক তৈরি শুরু করা যায় কিনা তা নিয়েও কথা হয়েছে জানিয়ে হিরণ বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে দলের স্থানীয় নেতা, কর্মীরা সবাই আছেন। দলবদ্ধ ভাবে কাজ করছি। তবে অনেক কিছু চেয়েও করতে না পারার জন্য অসহায় লাগছে।’’
গোপন আস্তানায় থাকলেও একটি ‘এমএলএ হেল্পলাইন’ নম্বর চালু করেছেন হিরণ। তিনি জানিয়েছেন, ওই নম্বরে ফোন করলে মানুষকে যথাসাধ্য সাহায্য করা হচ্ছে। শুধু এটুকুই নয়, আশ্রমবাসী হওয়ায় রান্না থেকে বাসন মাজা সবই করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হিরণ। তবে আশ্রমের নিয়ম অনুযায়ী খাওয়া দাওয়া পুরোটাই নিরামিষ। প্রায় রোজই ভাত, ডাল আর একটা তরকারি।
ভোটে জেতার পরে বিধায়ক পদে শপথ নিতে কলকাতায় এসেছিলেন। তার পরে আর দক্ষিণ কলকাতার বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে যাওয়া হয়নি বলে জানান হিরণ। একজন অভিনেতার কাছে কেমন লাগছে এই জীবন? হিরণ বলেন, ‘‘অভিনয় জীবনকে এখন অতীত মনে করি। আপাতত মানুষ যে দায়িত্ব দিয়েছেন সেটাই করতে চাই। এমন জীবন তো নিজেই বেছে নিয়েছি। কেউ বাধ্য করেনি বা নির্দেশ দেয়নি।’’ হিরণ জানিয়েছেন, স্ত্রী, কন্যাকে মিস করলেও রোজ এক বার কথা বলে নেন। আর খুব সমস্যায় পড়লে পরামর্শ নিতে ফোন করেন দলের রাজ্য সভাপতি তথা তাঁর এলাকার প্রাক্তন বিধয়ক দিলীপ ঘোষকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy