মন্ত্রী মলয় ঘটক ও বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পল। ফাইল চিত্র
রাজ্য বিজেপি-তে নতুন গুঞ্জন অগ্নিমিত্রা পালকে নিয়ে। আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক নাকি তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রাখছেন এমন আলোচনাও শুরু হয়েছে। প্রথমে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও সম্প্রতি পূর্তমন্ত্রী মলয় ঘটকের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে বলে বিজেপি-র একটি শিবিরে রীতিমতো সমালোচনার সুর। শুনতে হচ্ছে নানা টিকা-টিপ্পনি। অগ্নিমিত্রা অবশ্য সে সবকে পাত্তা দিতে চাইছেন না। তাঁর দাবি, ‘‘বিধায়ক হিসেবে কাজ করার জন্য রাজ্যের মন্ত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখাটা অন্যায় নয়। তা ছাড়া যেমনটা রটানো হচ্ছে তেমনটা আদৌ নয়। অভিযোগ আমার কানেও এসেছে। কিন্তু সে সবকে আমি পাত্তা দিতে চাই না। আসানসোল দক্ষিণের মানুষ আমায় ভোট দিয়েছেন এলাকার উন্নয়নের জন্য। আমি সেটাই করছি এবং করব। সমালোচনা শুনতে খারাপ লাগলেও আমি মাথা ঘামাচ্ছি না।’’
কিছুদিন আগেই মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়কে ফোন করেছিলেন অগ্নমিত্রা। তখনও নানা আলোচনা শুরু হয়েছিল। সেই প্রসঙ্গে অগ্নিমিত্রার দাবি, ‘‘বসিরহাট এলাকায় বহু মানুষ ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসের জন্য ঘরে ফিরতে পারছিলেন না। তাঁদের মধ্যে অনেক মহিলাও ছিলেন। তাঁদের যাতে সুবিধা যাতে হয় সেই কারণেই ফোনে কথা বলেছিলাম। এ নিয়ে অযথা জল্পনা তৈরি হয়েছে।’’ এ বার বিতর্ক মলয়ের সঙ্গে যোগাযোগ নিয়ে। তবে আসানসোল দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক তথা মন্ত্রী মলয় ঘটকের সঙ্গে পারিবারিক যোগাযোগ রয়েছে অগ্নমিত্রার। তিনি বলেন, ‘‘আমার পৈতৃক বাড়ি আসানসোলেই। আমার বাবার বন্ধু উনি। তবে আমি মলয়কাকুর সঙ্গে রাজনীতি কেন, কোনও বিষয়েই ইদানীংকালে কোনও কথা বলিনি। তবে আমি সর্বত্র একটা কথা বলছি যে, রাজ্যের একমাত্র বিরোধী দল বিজেপি-র সঙ্গে আলোচনা করেই রাজ্যের উন্নয়নের পরিকল্পনা করা উচিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ঠিক তেমনই আমি আমার বিধানসভা এলাকার উন্নয়নে যাঁকে যাঁকে পাশে নেওয়া দরকার তাঁদের আমি নেব।’’
মলয়ের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ নিয়ে যে বিতর্ক তার পিছনে রয়েছে অগ্নিমিত্রার সাম্প্রতিক একটি বক্তব্য। ইয়াস ঘূর্ণঝড়ের পরে তিনি দামোদর নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণের দাবিতে সরব হন। সেই এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে অগ্নিমিত্রা জানিয়েছিলেন, পশ্চিম বর্ধমান জেলার সঙ্গে বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বড় সেতু দরকার। তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘এখানে সেতু তৈরি হলে বহু মানুষ উপকৃত হবেন। আর্থসামাজিক উন্নয়নও হবে। এর জন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা এলাকার সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়, রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত পূর্ত দপ্তরের মন্ত্রী মলয় ঘটকের সঙ্গে আলোচনা করবেন। দরকারে সেই সঙ্গে বাঁকুড়ার সাংসদ সুভাষ সরকার ও শালতোড়ার বিধায়ক চন্দনা বাউরিকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবেন।’’ মূলত এই নিয়েই শুরু হয় বিতর্ক। বাবুল, সুভাষ, চন্দনার সঙ্গে সঙ্গে মলয়ের নাম নেওয়াতেই সমালোচিত হতে হয় তাঁকে।
সেই বিতর্কে জবাব দিতে গিয়ে অগ্নিমিত্রা আরও বলেন, ‘‘এখানে গোপালপুর ও বরাচকের মধ্যে যোগাযোগের একমাত্র সেতু বেহাল হয়ে রয়েছে। এলাকার বাসিন্দাদের খুবই কষ্ট। এটা নিয়ে তো পুরসভার সঙ্গে আমায় কথা বলতেই হবে। ওখানে তৃণমূল ক্ষমতায় বলে আমি কথা বলব না এটা তো হতে পারে না।’’
দলের রাজ্য নেতৃত্ব বা পদাধিকারীদর কেউ সমালোচনা না করলেও অগ্নিমিত্রার কাজ নিয়ে যে বিজেপি-তে আলোচনা চলছে সেটা তিনিও শুনেছেন। এই প্রসঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘‘মলয়কাকুর সঙ্গে আমার বৈঠক হয়েছে বলে যেটা রটানো হচ্ছে সেটা একেবারেই ঠিক নয়। কিন্তু ভবিষ্যতে যদি এলাকার উন্নয়নের জন্য আমি কথা বলিও তাতে ক্ষতিই বা কী আছে। এর জন্য আমাকে ট্রোল করাটা একেবারেই ঠিক নয়। তবে এটা ঠিক যে, এর জন্য আমার নেতৃত্ব আমায় কিছু বলেননি। আশা করি বলবেনও না। এটা আমাদের দলের নীতি নয়। সকলকে নিয়ে কী ভাবে কাজ করতে হয় সেটা মোদী’জি শিখিয়েছেন।’’
পেশায় ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা শুধু বিধায়ক নন, তিনি বিজেপি মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রীও। তবে বিধায়ক হওয়ার পরে তিনি নিজের কেন্দ্রে বেশি সময় দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে বিজেপি-র অন্দরে। এর জবাবে অগ্নিমিত্রা বলেন, ‘‘এখন রাজ্যে লকডাউন পরিস্থিতি। সেই ভাবে কোনও বড় কর্মসূচি নেওয়া সম্ভব নয়। আমি যেখানে যেখানে মহিলা কর্মীরা ডাকছেন সেখানেই যাচ্ছি। ক’দিন আগেই পূর্ব মেদিনীপুরে গিয়েছিলাম। নন্দীগ্রামেও অত্যাচারিতদের সঙ্গে কথা বলে এসেছি। সর্বত্রই পুলিশের অনুমতি নিয়ে যেতে হচ্ছে। ফলে এখন খুব বেশি ঘোরাঘুরি সম্ভব নয়। ঘরে বসে থাকার চেয়ে নিজের বিধানসভা এলাকায় সময় দিলে ক্ষতি কী!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy